চিকিৎসকের হাতে লকডাউন লেখা পোস্টার ধরিয়ে দিয়ে ছবি, পরে দুঃখ প্রকাশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় লকডাউনের পোস্টার হাতে ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় লকডাউনের পোস্টার হাতে ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পৌর এলাকায় মহিলা কলেজের পাশে ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যার বাড়ি। তার চেম্বারও একই এলাকায়। সম্প্রতি তার চেম্বারের সহকারীর করোনা শনাক্ত হয়। তিনি ডা. কুশল কুমারের প্রতিবেশী। ১১ জুন সকালে ডা. কুশলের বাড়ি ও চেম্বার এবং তার সহকারীর বাড়ি লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন। সে সময় ছবিটি তোলা হয়। ডা. কুশল কুমারের ছবিটি দ্য ডেইলি স্টারের হাতেও আসে।

ছবিতে দেখা যায়, ডা. কুশল একটি পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন— যাতে লেখা আছে ‘লকডাউন’। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাকিব আল রাব্বী ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস।

আর মঙ্গলবার দুপুরে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাকিব আল রাব্বী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ওই এলাকায় গিয়েছিলাম করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাড়ি লকডাউন করতে। নিয়ম অনুযায়ী আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। সে সময় ডা. কুশল নিজেই আমাদের বলেন, আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত তিনি চেম্বার বন্ধ রাখবেন। পোস্টারটি লাগিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই আমাদের হাত থেকে নিয়েছিলেন। সে সময় অন্য কেউ ছবিটি তোলে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ‘এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় আমি নিজেও বিব্রত। আমি ডা. কুশল কুমারের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’

যোগাযোগ করা হলে ডা. কুশল কুমার বান্ধ্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই ঘটনাটি আমাকে মর্মাহত করেছে। এ রকম একটি ছবি ছড়িয়ে দেওয়া খুবই অশোভনীয়। লকডাউনের পোস্টারটি তারাই আমার হাতে দিয়েছিলেন। পোস্টারে তারিখ উল্লেখ করা ছিল না, যে কারণে আমি নিয়েছিলাম তারিখ লিখে টানিয়ে দেবো বলে। সে সময় কে ছবিটি তুলেছে আমার মনে নেই, অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস আমাকে ফোন করেছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) ডা. সায়েরা বানুও যোগাযোগ করেছেন। তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

‘চিকিৎসকরা এই সময় সামনে থেকে কাজ করছেন। তারা প্রাণ দিচ্ছেন। যারা ইতোমধ্যে মারা গেলেন, আগামী ৩০-৪০ বছরে আমরা এমন অভিজ্ঞ চিকিৎসক পাব না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি নিজেও এই সংকটে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খুবই অশোভনীয়’— বলেন ডা. কুশল।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিস (এফডিএসআর)।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘করোনাকালেও চিকিৎসা সেবাদানে নিবেদিতপ্রাণ একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকের প্রতি প্রশাসনযন্ত্রের এরূপ অনভিপ্রেত অমানবিক আচরণ সত্যিই জাতির জন্য চরম লজ্জার। করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে যখন সারা দেশের চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ঠিক সেই মুহূর্তে একজন বয়োঃজ্যেষ্ঠ ও অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রতি এমন অপমানজনক আচরণ চিকিৎসক সমাজের জন্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় এবং অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণার কারণ।’

এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছে এফডিএসআর।

প্রসঙ্গত, ছবিটি হাতে থাকার পরেও দ্য ডেইলি স্টার তা প্রকাশ করেনি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago