ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা চালু: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা চালু প্রসঙ্গে গত কয়েকদিন থেকে বেশ আলোচনা হচ্ছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রায় তিন মাস ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
online-education
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা চালু প্রসঙ্গে গত কয়েকদিন থেকে বেশ আলোচনা হচ্ছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রায় তিন মাস ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সমস্যা হচ্ছে এই তিন মাসের প্রভাব যে শুধু মাত্র তিন মাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। এর প্রভাব আরও দীর্ঘ ও গভীর।

তাছাড়া, আমরা এটাও জানি না বা ভবিষ্যৎবাণী করতে পারছি না যে, এই অবস্থার অবসান কবে হবে।

এমতাবস্থায় বিভিন্ন মহল থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার ব্যাপারে এক ধরণের চাপ আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর।

কিন্তু, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন শিক্ষা চালু করার আগে আমাদের কিছু গ্রাউণ্ড লেভেল অ্যাসেসমেন্ট করা প্রয়োজন। আজকের এই লেখায় সেরকমই কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

লেখার শুরুতেই স্বীকার করে নিচ্ছি, এই লেখায় ব্যবহৃত সব তথ্য সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন বর্ষের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভদের সহায়তায় সংগ্রহ করেছি। এই তথ্য ও লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় বা আমার সংশ্লিষ্ট মনোবিজ্ঞান বিভাগ সরাসরি জড়িত নয়। তাই এই লেখায় যে বক্তব্য এবং তথ্য আমি প্রকাশ করছি তার দায়ভার সম্পূর্ণ আমার।

খুব ক্ষুদ্র পরিসরের চিন্তায় আমি প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করেছি যে, অনলাইন শিক্ষা চালু করার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের কী কী দরকার। নিজে কিছু অনলাইন সেশন নিয়ে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, অনলাইন শিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের নিম্নোক্ত উপকরণসমূহ প্রয়োজন।

১. স্মার্ট ডিভাইস— স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা ডেস্কটপ

২. ইন্টারনেট সংযোগ— ব্রডব্র্যান্ড বা মোবাইল ডাটা

৩. ইমেইল অ্যাড্রেস— জিমেইল

৪. মোবাইল সংযোগ— গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল বা টেলিটক

৫. ইন্টারনেট খরচ

এবার তথ্যগত দিক থেকে বোঝার চেষ্টা করেছি যে, আমাদের শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা? অনলাইন শিক্ষা শুরু করার জন্য যে উপকরণগুলো প্রয়োজন তা কি তাদের আছে? আচ্ছা! শিক্ষার্থীরা কি অনলাইন ক্লাস করতে সমর্থ্য? যারা এখনই করতে সমর্থ্য নয় তাদের কি সাপোর্ট দিলে অনলাইন ক্লাস করতে পারবে? ওরা যেখানে আছে সেখানকার মোবাইল নেটওয়ার্কের কী অবস্থা? ওরা কি টুজি, থ্রিজি না ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায়?

মনোবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স লেভেলের ৪২১ জন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই সংক্রান্ত জরিপ করে যে তথ্য পেয়েছি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

ইয়াহু!!! আমাদের ৪২১ জন শিক্ষার্থীর সবার নিজস্ব মোবাইল নম্বর (SIM) আছে। তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ গ্রামীণ ফোনের গ্রাহক। রবির নম্বর আছে প্রায় ১৬ শতাংশ, বাংলালিংকের ১৫ শতাংশ, এয়ারটেলের ৮ শতাংশ এবং টেলিটকের প্রায় ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে।

শিক্ষার্থীরা যে এলাকায় আছে তার প্রায় ৯০ শতাংশএলাকাই থ্রিজি বা ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় (থ্রিজি ৫০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ফোরজি ৩৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ)। বাকি ১০ শতাংশ এলাকা টুজি নেটওয়ার্কের আওতায়।

আমাদের শিক্ষার্থীরা যে এলাকায় থাকে তার ৪৭ শতাংশ এলাকার নেটওয়ার্ক ভালো, ২২ শতাংশ এলাকার নেটওয়ার্ক সন্তোষজনক এবং ৩১ শতাংশ এলাকার নেটওয়ার্ক দুর্বল।

আরও সুসংবাদ হলো, আমাদের সব শিক্ষার্থীর নিজস্ব ইমেইল আছে। যার মধ্যে ৯৮ দশমিক ৮১ শতাংশই জিমেইল অ্যাকাউন্ট। বাকিরা ইয়াহুর মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে।

মনোবিজ্ঞানের এই ৪২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় সবারই (৯৮ দশমিক ৮১ শতাংশ) ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে। মাত্র পাঁচ জন স্টুডেন্ট আছে যাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই।

এবার আসি স্মার্ট ডিভাইসের কথায়। স্মার্ট ডিভাইসের মধ্যে প্রায় ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে যার RAM ২ জিবি থেকে ১৬ জিবি পর্যন্ত। বাকি প্রায় ৩ শতাংশ (১২ জন) শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই।

আমাদের এই ৪২১ জন শিক্ষার্থীর প্রায় ৩৬ শতাংশের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ অথবা ট্যাব আছে। অন্যদিকে ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীরই এ ধরনের কোনো ডিভাইস নেই। প্রায় ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ আছে। অন্যদিকে, ৫৬ শতাংশের বাসায় ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ নেই।

আমাদের শিক্ষার্থীরা কি অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে সমর্থ্য? এই প্রশ্নের জবাবে দেখা গিয়েছে যে, প্রায় ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম। বাকি (১৩ শতাংশ) এখনই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে সমর্থ্য নয়।

অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের কোনো সহায়তার প্রয়োজন আছে? এই প্রশ্নের জবাবের ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে যে, তাদের সহায়তার প্রয়োজন নেই। বাকি ২২ শতাংশ বলেছে যে প্রয়োজন আছে।

কী ধরণের সহায়তা প্রয়োজন? এর জবাবে প্রথমত যেটা এসেছে তা হলো: তাদের কম খরচে ডাটা প্যাকেজ দরকার। দ্বিতীয়ত, মোবাইল নেটওয়ার্কের উন্নয়ন প্রয়োজন। তৃতীয়ত, তাদের স্মার্ট ডিভাইস প্রয়োজন। সঙ্গে কিছু লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন, ভালো মানের হেডফোন, মাইক্রোফোন ইত্যাদির কথা উঠে এসেছে। চতুর্থত, অফলাইন ভিডিও যা রেকর্ড করে পরে দেখা যাবে সেই সুবিধার কথা উঠে এসেছে। পঞ্চমত, কিছু শিক্ষার্থী আর্থিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেছে।

এছাড়াও, অনলাইন ক্লাস করার জন্য টেকনিক্যাল ট্রেনিং, মানসিক সহায়তা, ও টেক্সট বইয়ের কথাও কেউ কেউ উল্লেখ করেছে।

এই! উল্লেখিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমি কোন মন্তব্য এখানে করছি না। আমি শুধু তথ্যগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস চালু করবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আমার মনে হয় এরকম তথ্য খুবই জরুরি।

আমাদের সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেস তৈরি করতে পারি। সেই তথ্যভান্ডারই তখন আমাদের পথ দেখাবে। সেই তথ্যই নির্দেশনা দেবে যে, সার্বিকভাবে ইনক্লুসিভ অনলাইন শিক্ষা শুরু করার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতাগুলো কী কী। তখনই আমরা সেই দুর্বলতাগুলো কীভাবে মোকাবিলা করব সে বিষয়েও পরিকল্পনা করা সম্ভব।

মো. সেলিম হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।) 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago