করোনাভাইরাস থেকে কবে রেহাই পাব, তা এখনো জানি না: ডা. আবদুল্লাহ

দেশে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা আজ বৃহস্পতিবার লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন যেমন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সেই হিসাবে আজ ১০৩তম দিনে শনাক্ত লাখ ছাড়াল। এর মধ্যে, ৫০ হাজার ছাড়ায় গত ২ জুন। অর্থাৎ প্রথম শনাক্তের ৮৭তম দিনে। আর তার পরের ৫০ হাজার শনাক্ত হয়ে লাখ ছাড়াল ১৬ দিনে।
চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

দেশে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা আজ বৃহস্পতিবার লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন যেমন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সেই হিসাবে আজ ১০৩তম দিনে শনাক্ত লাখ ছাড়াল। এর মধ্যে, ৫০ হাজার ছাড়ায় গত ২ জুন। অর্থাৎ প্রথম শনাক্তের ৮৭তম দিনে। আর তার পরের ৫০ হাজার শনাক্ত হয়ে লাখ ছাড়াল ১৬ দিনে।

আজ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, দেশে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি আগামী দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে।

তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি এক, দুই বা তিন মাসে শেষ হচ্ছে না। এটি দুই থেকে তিন বছর বা তারচেয়েও বেশি দিন স্থায়ী হবে। যদিও সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।’

সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের দেশে দিন দিন আক্রান্তের হার বেড়েই চলছে। মানুষের মধ্যে ভয়ও ঢুকেছে, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা হয়তো পৃথিবী থেকে পুরোপুরি নির্মূল নাও হতে পারে। কিছু ভাইরাস আছে যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ফ্লু’র ভাইরা, হেপাটাইটিস-বি, এমনকি এইচআইভির যে ভাইরাস, এগুলো কিন্তু পৃথিবীতে রয়ে গেছে, নির্মূল হয়নি। এখন যতদিন পর্যন্ত এই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা এই ভাইরাস থেকে রেহাই পাব কি না, তা তো এখনো আমরা জানি না।’

‘এখন হয়তো এই ভাইরাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করেই আমাদের জীবন বাঁচাতে হবে। যার যার কাজের মাধ্যমে সামঞ্জস্য রক্ষা করে জীবিকাও নির্বাহ করতে হবে। এই ভাইরাস যাবে কি না, তা এখনো তো বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি, কার্যকরী কোনো ওষুধও নেই। এই জন্য আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে, আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে, আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগে আমরা যা খুশি তাই করতাম, এখন আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে সমন্বয় সাধন করে চলতে হবে। আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতি, শিক্ষা— সবগুলোতেই মনে হয় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের যত বাজে অভ্যাস আছে, যেমন: ধূমপান, অ্যালকোহল পান বা অন্যান্য আজেবাজে নেশা করা, ইচ্ছামতো যে কোনো জায়গায় যাওয়া, এগুলো সবকিছুতেই হয়তো পরিবর্তন আনতে হতে পারে’, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কবে এই ভাইরাস যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। আমরা তো এমনও আশা করছি হয়তো ভাইরাসের সংক্রমণ কমেও যেতে পারে। খুব বেশিদিন নাও লাগতে পারে। আমাদের মানুষজন যদি একটু সচেতন হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তাহলে হয়তো এটার সংক্রমণ কমতেও পারে বলে আশা করছি।’

৮৭ দিনে শনাক্ত ৫০ হাজার ছাড়ায়। পরের ৫০ হাজার ছাড়াতে সময় লাগলো ১৬ দিন। সেই হিসাবে আগামী দুই সপ্তাহে তো শনাক্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়াতে পারে।— এই আশঙ্কার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনে তো সংক্রমণ জ্যামিতিকহারে বেড়েছে। এভাবে বাড়লে তো ছাড়াতেই পারে। আসলে তখন (শুরুর দিকে) লকডাউন থাকায় কিছু মানুষ হলেও মেনে চলেছে। এখন তো লকডাউন নেই। তাই সংক্রমণও বাড়ছে। জনগণ তো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অনেকে মাস্ক পরে না, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখে না, ঘরে থাকতে বলা হলেও থাকছে না, স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে, স্বাস্থ্যবিধি বা লকডাউনের তোয়াক্কাই করছে না।’

‘এই ঈদেও তো মানুষ বাড়িতে গেল, আবার এলো, এভাবেই তো ছড়াচ্ছে। মানুষ চলাফেরা করলে তো ছড়াবেই। এখন যদি জনগণ যদি একটু সচেতন হয়, তাহলে সংক্রমণ কমতে পারে। কিন্তু, তা না হলে তো বাড়তেই থাকবে। আমাদের ভয়ও তো এই জায়গাতেই’, বলেন তিনি।

লকডাউনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মানুষজন তো ঘরে ছিল। কিন্তু, কতদিন আর ঘরে বন্দি করে রাখা যায়। এটাতো কঠিন ব্যাপার। মানুষজন আর থাকতে চাচ্ছে না তো। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের লোকজনের তো নাভিশ্বাস অবস্থা। তারা তো আর ঘরে থাকতে পারছে না। জীবন বাঁচানোর তাগিদে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’

‘এজন্যই জীবন-জীবিকা দুটিকে সমন্বয় করে সরকার এলাকা ভাগ করে জোনভিত্তিক লকডাউন দিচ্ছে। কিছুদিন দেখা যাক, এখান থেকে ফলপ্রসূ কিছু পাওয়া যায় কি না। যদি এর পরেও সংক্রমণ না কমানো যায়, তাহলে প্রয়োজনে হয়তো সরকারকে অনুরোধ করবো— পুনর্বিবেচনা করতে, প্রয়োজনে আরও বড় এলাকা নিয়ে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে। জনগণ যাতে লকডাউন মানতে বাধ্য হয়, এজন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, নিতে হবে। সামনে তা করতে হতেও পারে। আগামী কয়েকদিনে তা বোঝা যাবে’, যোগ করেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, মারা গেছেন এক হাজার ৩৪৩ জন, আর সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago