সীমান্ত সংঘর্ষ: ভারতের গণমাধ্যমে ক্ষোভ, নীরব চীন

লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় ২০ সেনা সদস্যের প্রাণহানির খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বিষয়টি ‘দৃঢ়তার সঙ্গে সমাধানে’র আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় ২০ সেনা সদস্যের প্রাণহানির খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বিষয়টি ‘দৃঢ়তার সঙ্গে সমাধানে’র আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস বিরোধ নিয়ে তুলনামূলকভাবে নীরব চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। ভারতের সাথে মারাত্মক সামরিক সংঘাতকে একরকম এড়িয়ে গেছে চীনের গণমাধ্যমগুলো।

মঙ্গলবার, ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারতের ২০ সেনা হিমালয় সীমান্তে ‘সহিংস বিরোধের মুখোমুখি’ অবস্থায় মারা গিয়েছিল, যার ফলে ‘উভয় পক্ষেই হতাহতে’র ঘটনা ঘটে। এছাড়া, আরও চার ভারতীয় সেনার অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার রাতে ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, সোমবারের সংঘর্ষে ৪৩ জন চীনা সেনা হতাহত হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। এখন পর্যন্ত চীনা গণমাধ্যমে কোনো হতাহতের খবর প্রকাশ হয়নি।

মঙ্গলবার গভীর রাতে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করলেও কোনো সংখ্যা জানানো হয়নি।

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ৩,৫০০ কিলোমিটার (২,২০০ মাইল) সীমান্ত জুড়ে বিশ্বের দুই জনবহুল দেশের সৈন্যদের মধ্যে নিয়মিত বিবাদ হলেও ১৯৭৫ সালের পর এবারই প্রথম মারাত্মক হলো।

ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বুধবার জানায়, ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই সংঘর্ষ চলে।

‘দৃঢ়তার সঙ্গে সমাধান’

শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো বলেছে, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের উচিত ‘দৃঢ়তার সঙ্গে সমাঝোতা’ করা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, ‘এই ধরনের উস্কানিমূলক ঘটনা গুরুতর। এটি সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো  সন্ত্রাসের ঘটনায় মৃত্যু নয়, বরং দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ। আলোচনার মাধ্যমে এবং দৃঢ়তার সাথে এর  সমাধান করা প্রয়োজন।’

সাবেক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় লিখেছেন, ‘ভারত-চীন সীমান্তের সংঘাতগুলি সাধারণ হলেও সোমবারের মুখোমুখি অবস্থা “স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত” ছিল।’

তিনি লিখেছেন, ‘প্রথমত, পিএলএ গালওয়ানের মতো ঐতিহাসিকভাবে শান্তিপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখল নিতে শুরু করল। দ্বিতীয়ত, তারা সংখ্যায় হাজারে হাজারে প্রবেশ করেছিল।’

‘এই সময়ে, পিএলএর সৈন্যরা অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করার জন্য পরিখা খনন করেছে, বাঙ্কার প্রস্তুত করছে এবং আর্টিলারি বন্দুক [তাদের নিজস্ব অঞ্চলে] স্থাপন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।’

শুক্লা বলেন, “চীনা আগ্রাসনের সময়সূচি” দেখে মনে হয় এটি “ভারতকে তার দুর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার (একটি) কৌশল”।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভারতকে ‘পাল্টা জবাব’ দেওয়ার পক্ষে প্রতিবেদন ছাপায়।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘বেইজিং এলএসিতে আমাদের সৈন্যদের হত্যা করতে পারে না। এরপর আবার আমাদের বিশাল বাজার থেকে উপকৃত হওয়ার আশা করতে পারে না।’

সম্পাদকীয়তে ‘হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহারের নিন্দা করতে’ এবং ‘তিব্বতের মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে নয়াদিল্লিকে সমালোচনা করার জন্য বলা হয়েছে।

ভারতীয় নিউজ চ্যানেল, যার বেশিরভাগই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থন করে বলে বিশ্বাস করা হয়, তারাও এর সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

হিন্দিভাষী নিউজ চ্যানেল ‘আজ তাক’ এর এক সঞ্চালক বলেন,’ এই ঘটনার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দোষী করা উচিত, ফেডারেল সরকারকে নয়।’

এমন মন্তব্যের জন্য তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার শুরু হলে তিনি বলেন, ‘সীমান্তে টহল দেওয়ার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর, সরকারের না।’

নীরব চীন

চীনা জাতীয়তাবাদী পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস ভারতের মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করলেও চীনের হতাহত নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

এদিকে, চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভি এবং কমিউনিস্ট পার্টির মালিকানাধীন পিপলস ডেইলি চাইনিজ সামরিক বাহিনীর বিবৃতিটাই কেবল প্রকাশ করেছে। এর বাইরে কোনও অতিরিক্ত প্রতিবেদন করেনি।

সিসিটিভির বহুল প্রচারিত দৈনিক সিনওয়েন লিয়ানবো সন্ধ্যার সংবাদেও মঙ্গলবার সীমান্তের লড়াইয়ের কোনোকিছু উল্লেখ করা হয়নি।

মঙ্গলবার, প্রেস ব্রিফিংয়ে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মুখপাত্র এই সংঘর্ষের বিষয়ে তিরস্কার করে  মন্তব্য করেছেন।

গ্লোবাল টাইমস একটি সম্পাদকীয়তে জানায় যে, ‘দ্বন্দ্ব ও সংঘাত এড়াতে’ এই সংঘর্ষের মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।

ভারতের ‘উদ্ধত ও বেপরোয়া আচরন' এর উল্লেখ করে সম্পাদকীয়টি বলেছে, ‘চীন ও ভারতের মাঝে সীমান্তের বিষয়গুলোকে দ্বন্দ্বে পরিণত করতে চায় না চীন।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago