চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কতটা এগিয়ে

India vs China
ছবি: সংগৃহীত

গত ৪৫ বছরে প্রথমবারের মতো সীমান্তে ভারত ও চীনের সামরিক সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

সিএনএন জানায়, এর আগে, ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে ঠিক ওই একই জায়গায় যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে ভারত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল।

গত সোমবার ভারতের লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা ও চীনের আকসাই চীন সীমান্তে ওই সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা মারা যান।

দুই দেশের মধ্যকার ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত কিংবা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) স্থানে ওই সংঘর্ষ ঘটে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

চীন-শাসিত ওই বিতর্কিত জায়গার মালিকানা নিয়ে ভারতের দাবি থাকায় এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পুরনো বিবাদ আছে।

সম্প্রতি, লাদাখে ভারতের তৈরি করা রাস্তা যা দুই দেশের মধ্যকার এলওএসিতে পড়েছে তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বাঁধে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

সিএনএনের প্রতিবেদনে দুই দেশের সামরিক ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর বিগত দশকগুলোতে এশিয়ার এই দুই দেশই বিপুল যুদ্ধাস্ত্রের সম্ভার গড়ে তুলেছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির মধ্যে বিবাদও বেড়ে চলেছে।

বেইজিং ১৯৬৪ সালে ও ভারত ১৯৭৪ সালে পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠে।

স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআইআরপিআই) চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, চীনের ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ভারতের প্রায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। চীনের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে প্রায় ৩২০টি। অন্যদিকে, ভারতের আছে ১৫০টি।

উভয় শক্তিই তাদের অস্ত্রাগারগুলো গত বছরের তুলনায় এই বছর ভারি করে তুলেছে। বেইজিংয়ের অস্ত্রাগারে নতুন ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও নয়াদিল্লির অস্ত্রাগারে নতুন ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র বেড়েছে।

১৯৭৫ সালে শেষবারের মতো ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। তাদের সীমান্তে পারমাণবিক হামলার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া থাকলেও দুই দেশই এক্ষেত্রে ‘প্রথম ব্যবহারের নীতি’ মেনে চলে। অর্থাৎ যদি এক পক্ষ আগে ব্যবহার করে তবেই অন্য পক্ষ ব্যবহার করবে।

দেশ দুটির মধ্যে সিদ্ধান্ত রয়েছে, ফ্রন্ট লাইনে যেসব সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবেন, তাদের কাছে কোনও অস্ত্র থাকবে না। যদি সেনা র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী কোনও অফিসারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার নিয়ম হয়, তাহলে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখা থাকবে। সেজন্যই দুই দেশের সেনা সদস্যদের হাতাহাতি বা রড-পাথরের লড়াই হলেও কোথাও গুলি বিনিময় হয়নি।

বিমান বাহিনী

বেলফার সেন্টারের মার্চ মাসে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ভারতের প্রায় ২৭০ যুদ্ধ বিমান ও ৬৮টি স্থল-আক্রমণ বিমান আছে।

ফ্র্যাঙ্ক ওডনেল ও আলেকজান্ডার বোলফ্রাসের লেখা বেলফার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতের সীমান্ত থেকে চীনা সীমান্তের নিকটবর্তী ছোট ছোট বিমান ঘাঁটিগুলো তৈরি রাখা হয়েছে। যাতে করে ভারতীয় সেনারা সেখান থেকে বিমান চালাতে ও অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।

বেলফার সমীক্ষা মতে, চীনের ১৫৭টি যুদ্ধবিমান ও ওই সীমান্ত অঞ্চলে স্থল-আক্রমণের জন্য ছোট বিমানবহর রয়েছে।

সমীক্ষাটি বলছে, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএফ) এই অঞ্চলে আটটি ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। তবে এর বেশিরভাগই এতো উচ্চতায় রয়েছে যে বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

বেলফোর সমীক্ষাটি আরও বলছে, ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) তাদের মিরেজ-২০০০ ও সুখোই এস-৩০ যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য এই অঞ্চলে সুবিধা পাবে। ইন্ডিয়ান মিরেজ-১০০ ও এস-৩০ যুদ্ধবিমানগুলো সব আবহাওয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম।

অন্যদিকে, এ অঞ্চলে চীনা জেট জে-১০, জে-১১ ও এস-২৭ এর মধ্যে কেবল জে-১০ এরই সব আবহাওয়ায় আঘাত হানার সক্ষমতা রয়েছে।

স্থলবাহিনী

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারত অতীত অভিজ্ঞতার দিক থেকে শক্তিশালী। সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত পরিসরে কাশ্মীরের মতো সীমান্ত অঞ্চলে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর অভিজ্ঞতা নয়াদিল্লির আছে। অন্যদিকে, পিএলএ ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সঙ্গে সংঘাতের পর থেকে এই ধরনের লড়াইয়ের তেমন অভিজ্ঞতা নেই।’

বেলফারের অনুমান, ওই অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় স্থলবাহিনী রয়েছে। অন্যদিকে, চীনের রয়েছে ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজারের মতো সদস্য।

সেনা সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে ১৩৮টি দেশের পিআরডব্লিউ সূচকে তৃতীয়স্থানে আছে চীন। দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্য ২১ লাখ ২৩ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের সেনা সদস্যের সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৪ হাজার।

রিজার্ভ সেনা সংখ্যার দিক থেকে চীনের থেকে এগিয়ে আছে ভারত। ভারতের রিজার্ভ সেনা রয়েছে ২১ লাখ৷ বিপরীতে, চীনের রয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার।

ক্ষমতাধর দেশগুলোর ভূমিকা

চীনের কাছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে ভারত।

সম্প্রতি, ওয়াশিংটন ভারতকে ‘প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করেছে। নয়াদিল্লির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে ভারত যৌথ সামরিক অভিযানে অংশ নেয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তান ও রাশিয়া ছাড়া অন্য দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক রয়েছে স্বল্প পরিসরে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago