যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্ব শীতল যুদ্ধকালের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে: চীনা বিশ্লেষক

Usa vs China-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক উচ্চ ঝুঁকির সময় পার করছে। মহামারির শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘নতুন করোনাভাইরাস চীনের তৈরি’ এমন মন্তব্য করে আসছেন। জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং।

এদিকে, মহামারিকালে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছে চীন।

দুই দেশের পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বেড়েছে। চীনের ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারির মধ্যেও সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে চীনা প্রশাসন। তাইওয়ান প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। তাইওয়ানকে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের টর্পেডো (যুদ্ধাস্ত্র) দেওয়ায় ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়েছে বেইজিং।

এ ছাড়াও, হংকংয়ের ‘জাতীয় নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

চীনা বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতল যুদ্ধের সময় মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এর চেয়েও মারাত্মক হতে পারে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, এ সপ্তাহে চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওয়ার্ল্ড পিস ফোরামে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা।

ফোরামে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক স্টাডিজের ডিন ওয়াং জিসি বলেন, ‘আগামী চার মাসের মধ্যে এটি প্রায় নিশ্চিত যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে চীন একটি ইস্যু হয়ে উঠবে।’

তিনি জানান, অনেক চীনা বিশ্লেষক উদ্বিগ্ন যে, হয়তো ট্রাম্পের প্রচারণার জন্য এমন কিছু ঘটবে, যা দিয়ে এই সময়ের মধ্যে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হবে। এটা মারাত্মক হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক নিয়ে এই শীর্ষ বিশেষজ্ঞ জানান, শীতল যুদ্ধের সময় মার্কিন-সোভিয়েত সম্পর্কের চেয়েও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে বর্তমান চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক।

ওয়াং জিসি বলেন, ‘মস্কো-ওয়াশিংটন সম্পর্ক ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকটের মতো “তীব্র” ঘটনার পরেও চার দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল আছে।’

সম্প্রতি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা, বিশেষত করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে যে বিদ্বেষ, এটা ‘স্নায়ুযুদ্ধের চাইতেও বেশি সংবেদনশীল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হলো চীন-মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘস্থায়ী হবে কী না, সোভিয়েত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হবে কী না। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে বর্তমানে চীন-মার্কিন উত্তেজনার মধ্যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে সংঘর্ষ মারাত্মক রূপ নেবে কী না।’

তিনি মনে করেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে এই বিরোধ ‘গোলাবারুদ’ এর দিকে নেওয়া উচিত হবে না। তবে, হংকংয়ের মতো ঘরোয়া ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিরোধ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বেইজিং মে মাসে হংকংয়ের জন্য জাতীয় সুরক্ষা আইনটি নগরীর আইনসভায় অনুমোদন করে এগিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেয়।

এই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ওয়াশিংটন। ট্রাম্প জানান, হংকংয়ের সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করবে যুক্তরাষ্ট্র ।

এ ছাড়াও, তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনাও বেড়েছে।

ওয়াং জিসি বলেন, ‘একটা সংকটের মধ্যে স্পষ্টভাবে, গোপনীয়তার সঙ্গে এবং কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলা হয়েছে। এটা ভুল। কূটনৈতিক ইতিহাস আমাদের শেখায় যে, সামরিক সংঘাত নয় কূটনীতিকদের আলোচনার ওপরই আমাদের নির্ভর করা উচিত।’

বিল ক্লিনটন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে চীন নীতি সম্পর্কিত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন সুসান শার্ক। ওই ফোরামের আলোচনায় তিনি জানান, পরবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হলে মার্কিন-চীন উত্তেজনা কিছুটা কমতে পারে।

তিনি বলেন, ‘তিনি (জো বাইডেন) হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনের কৃপণ কৌশলের পরিবর্তে স্বাস্থ্য, জলবায়ু এবং পারমাণবিক শক্তির বিস্তার নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবেন।’

‘তবে, প্রশ্ন হলো- চীন কি তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করবে? পরিস্থিতি বলছে, চীনের বর্তমান নেতৃত্ব অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা আছে। শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত ক্ষমতার পালাবদলের নিয়ম যেটা অর্জন করাটা অনেক কঠিন ছিল, যেটা চীনের জাতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন, আপনি যদি সেটাকে ত্যাগ করেন, তাহলে সার্বিক নীতিমালার পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব’, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

5h ago