স্কুল থেকে ভাষার মিছিলে, তারপর এগিয়ে চলা
করোনাভাইরাস কেড়ে নিল বাংলাদেশের আরও এক নক্ষত্রের প্রাণ। বিপ্লবী এ মানুষটির বেড়ে ওঠা পাবনা শহরে। পঞ্চাশের দশকে চাচার বাড়িতে থেকে পাবনা জিলা স্কুলে পড়ার সময়ই ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
কামাল লোহানী স্কুল জীবনে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ায় চাচার বিরাগভাজন হতে হয়েছিল। তারপর পাবনা ত্যাগ করে ঢাকায় জীবন শুরু করেন। তবে তার রাজনীতির হাতেখড়ি পাবনা থেকেই।
স্কুলে থাকতেই ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন কামাল লোহানী। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের এ সময়টাতে তিনি পাবনা জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুল থেকেই চলে যেতেন ভাষার মিছিলে। বয়সে কম হলেও ৫২’র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ওই বছর স্কুল শেষ করে ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থাকায় ৫২’ পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হতে হলেও দমে যাননি তিনি।
১৯৫২ সালে ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হওয়ার পর পাবনায় ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কামাল লোহানী।
স্মৃতিচারণ করে ভাষা সৈনিক রণেশ মৈত্র বলেন, স্কুল-কলেজ জীবনে কামাল লোহানী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে ভাষা আন্দোলন, মুসলিম লিগবিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য তিনি বার বার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কামাল লোহানী তার পাবনা জীবনের স্মৃতিচারণ করে একটি লেখায় লিখেছিলেন, ‘পাবনা আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ির পীঠস্থান, সে কারণে পাবনা শহর ছোট হলেও আমার গোটা জীবন জুড়ে রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খান সোনাতলা গ্রামে ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন জন্ম গ্রহণ করেন কামাল লোহানী। পাবনায় এসে বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তার পরিবারের আপত্তি ছিল। এই অবস্থায় ১৯৫৪ সালে কলেজ জীবন শেষ না করেই চাচার বাড়ি থেকে মাত্র ২০ টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি।
পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, ঢাকাতে থাকলেও কামাল লোহানী কখনও পাবনাকে ভুলে যাননি। জীবনের শেষ বেলা পর্যন্ত তিনি পাবনার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। অংশ নিয়েছেন পাবনার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।
কামাল লোহানীর মৃত্যুতে দেশবাসী হারাল একজন কৃতি সন্তান আর পাবনাবাসী হারাল এক ঘনিষ্ঠ স্বজনকে।
Comments