পরিবারের সুরক্ষায় ৩ মাস মর্গে বসবাস

কর্মস্থল থেকে তার বাসার দূরত্ব দেড় শ গজের মতো হবে, যেতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। তবুও, সিকান্দার আলি গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে বাসায় যাচ্ছেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেই কাটছে দিন। মর্গের এই সহকারী নিজের পরিবারকে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতে বাসায় যাচ্ছেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

কর্মস্থল থেকে তার বাসার দূরত্ব দেড় শ গজের মতো হবে, যেতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। তবুও, সিকান্দার আলি গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে বাসায় যাচ্ছেন না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেই কাটছে দিন। মর্গের এই সহকারী নিজের পরিবারকে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচাতে বাসায় যাচ্ছেন না।

‘মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে ছোট নাতি-নাতনিদের দেখতে। কিন্তু, আমার কারণে আমার পরিবারের লোকেরা যদি আক্রান্ত হয়, এই ভেবে আর যাওয়া হয় না’, তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন।

মরদেহের উৎকট গন্ধ সহ্য করে মর্গের একটি কক্ষে থাকছেন তিনি।

সিকান্দার জানেন যে তিনি যথেষ্ট ঝুঁকিতে আছেন। যেকোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মরদেহ পরীক্ষা করতে হয় তাকে। মৃতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।

তার সহকর্মীরা মনে করেন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় তাদের যে সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। ব্যবহারের পর, সেগুলো ধুয়ে শুকিয়ে পরতে হয়। এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে তারা মনে করেন।

সিকান্দার বলেন, ‘আমার স্ত্রীর হৃদরোগ আছে। সাত বছর আগে সার্জারি করে ভালভ লাগানো হয়। চারটা ছোট বাচ্চা আছে বাসায়।’

ঢামেকে ঢোকার উলটো দিকেই নতুন ভবনটার পাশে তার বাসায় স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে আর চার নাতি আছে। তিনি বলেন, ‘যখনই তাদের সঙ্গে কথা হয়, নাতিরা জিজ্ঞাসা করে, আমি বাসায় যাই না কেন?

প্রতি বেলা সিকান্দার ফোনে খাবারের কথা জানালে, পরিবারের কেউ একজন খাবার প্যাকেট করে দরজার পাশে রেখে দেয়। ওই প্যাকেট বাসা থেকে নিয়ে আসার জন্য তার একজন লোক ঠিক করা আছে।

সিকান্দার বলেন, ‘আমি নিজেই গিয়ে দরজার পাশে রাখা খাবার নিয়ে আসতে পারি। কিন্তু, নাতি-নাতনিরা যদি আমাকে দেখে ফেলে, তাহলে অবশ্যই আমার কাছে ছুটে চলে আসবে। তখন তো আমি তাদের দূরে সরিয়ে রাখতে পারব না।’

সিকান্দার গত চার দশকে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন মরদেহের সঙ্গে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ১৮ বছর বয়সেই মর্গে সহকারী হিসেবে চাকরি পান। এই দীর্ঘ সময়ে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের জন্য হাজারো মরদেহের ময়নাতদন্তে সহায়তা করেছেন তিনি।

মরদেহ, রক্ত, ক্ষত-বিক্ষত দেহের ভয় সিকান্দারের নেই। কিন্তু, এই করোনাভাইরাস মহামারি তাকে বদলে দিয়েছে। ঢামেকের মর্গে থেকে তিনি দিন গুনছেন, কবে আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবেন।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago