নদী শুকিয়ে গেলে ঘোড়ার গাড়িই একমাত্র ভরসা

Horse_Lalmonirhat.jpg
লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বহনে ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়ি। ছবি: স্টার

বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময় তিস্তা, ধরলা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে পানি থাকে না বললেই চলে। নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম নৌকা হলেও বছরের বেশির ভাগ সময় নৌকা চলে না। বেলে মাটি হওয়ায় সাইকেল, রিকশা-ভ্যানও চলে না। যে কারণে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে।

সফির উদ্দিনের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তা নদীর নরসিংহ চরে। ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে দিনভর তিনি চরাঞ্চলে পণ্য আনা-নেওয়ার করেন। এই অঞ্চলে তার মতো আরও অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জনের পেশা ঘোড়ার গাড়ি চালানো।

এই চরের আরেক কোচোয়ান মনজুর আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গাড়ি চালকদে সবারই দুটি করে ঘোড়া আছে। ঘোড়াগুলোকে পালাক্রমে মালপত্র টানার কাজে লাগানো হয়। পুরো দিন কাজ করলে এক হাজার থেকে ১২ শ টাকা আয় হয়। এর এক তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় ঘোড়ার খাবার কিনতে।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের জোড়গাছ চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি চালান আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘কৃষি পণ্য বাজারে মহাজনদের কাছে নিয়ে যাওয়া আবার শহর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র চরাঞ্চলে নিয়ে আসতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। বালুর মধ্যে গাড়ি টানতে ঘোড়ার খুব পরিশ্রম হয়।’

একই চরের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বছরের প্রায় আট-নয় মাস নৌকার ব্যবহার থাকে না। নদ-নদীতে পানি থাকে না। ঘোড়ার গাড়ি না থাকলে কাজ-কর্ম আরও কঠিন হয়ে যেত।’

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর গড্ডিমারী এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে না, চরাঞ্চলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। একটি গাড়িতে একবারে ১৫ থেকে ২০ মণ ওজন পরিবহন করা যায়। একটি ঘোড়া কিনতে খরচ হয় এক লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। গাড়ি বানাতে খরচ হয় আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে ঘোড়া অসুস্থ হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসে ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না।’

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাঈদুর রহমান। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঘোড়ার বড় ধরনের কোনো রোগ হয় না। ঘোড়া জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, চোখ ফোলা রোগে আক্রান্ত হয়। প্রাণিসম্পদ অফিসে এর যথাযথ চিকিৎসাও দেওয়া হয়। কেউ অসুস্থ ঘোড়া নিয়ে এসে চিকিৎসা পাননি এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

1h ago