চা-শ্রমিকদের অনুদানের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ

সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেওয়া অনুদানে অভিযোগ উঠেছে।
Tea labourers
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেওয়া অনুদানে অভিযোগ উঠেছে।

সরকার প্রতিবছর চা-শ্রমিকদের মধ্যে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার ১৯টি চা-বাগানে বরাদ্ধকৃত অনুদান বিতরণের জন্য উপকারভোগীদের প্রাথমিক তালিকা করা হয়।

এ তালিকা করতে গিয়ে অনেক বাগানে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক শ্রমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে নিয়েছেন।

এ বিষয়টি নিয়ে বিজয়া চা-বাগানের বাসিন্দা বিদ্যাধর পাশী কুলাউড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, জয়চন্ডী ইউনিয়নের বিজয়া চা-বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েতের সভাপতি কিরোন শুক্ল বৈদ্য অনুদান পেতে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঠিকঠাক করার কথা বলে তার মনোনীত বকুল লায়েক, হরিবগত সূর্য বংশীকে দিয়ে উপকারভোগী শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে উত্তোলন করেন।

বিষয়টি নিয়ে বাগানের বাসিন্দা বিদ্যাধর পাশী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধরের হুমকি দেন শ্রমিক পঞ্চায়েতের সভাপতি কিরোন শুক্ল বৈদ্য।

এছাড়াও, অভিযোগ উঠেছে— একই ইউনিয়নের দিলদারপুর চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকেও কাগজপত্র ঠিকঠাক করার কথা বলে টাকা নিয়েছেন ওই বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বাদল দেব।

বাগান শ্রমিক তারাবতি পাশি, আনন্দ রাজপুত, সপ্তমি বাকতি, স্বপন পাশীসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিবারই যে কোন অনুদান আসলেই শ্রমিক প্রেসিডেন্ট লোক পাঠিয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজের কথা বলে টাকা আদায় করেন। অথচ আমরা নিজের খরচে ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি করে দেই।

তাদের অভিযোগ, এরপরও টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। তাদের (সভাপতি-সম্পাদক) পছন্দের লোকজনের নাম বার বার তালিকায় দেন। যার ফলে প্রকৃত অসহায় শ্রমিকরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হন।

বিজয়া বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত সভাপতি কিরোন শুক্ল বৈদ্য ও দিলদারপুর বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত সভাপতি বাদল দেব ডেইলি স্টারকে জানান, ছবি প্রিন্ট, ফটোকপি করা ও মাস্টাররুল তৈরির জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে সামান্য টাকা নেওয়া হয়েছে।

‘এটাতো আমরা খাইনি, তাদের কাগজপত্র ঠিক করতে খরচ করেছি,’ বলেন, কিরোন শুক্ল বৈদ্য।

এ ব্যাপারে জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য আজমল আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সংবাদ পেয়ে আমি নিজে গিয়ে সভাপতিকে নিষেধ করেছি। বলেছি, প্রয়োজনে তাদের খরচের টাকা আমি দিব। এরপরও সভাপতি আমার কথা না শুনে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন।’

কালিটি চা বাগানের অসীম কৈরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আপনারা চা-বাগানের নেতারা শুধুমাত্র গরিবের উঠানেই রাজনীতি ও দুর্নীতি করার জায়গা পান। কোন কাজের স্বচ্ছতা নাই। সব কিছুতেই দুর্নীতির শিকার হয় চা-শ্রমিকরা। আমাদের বাগানের ৫,০০০ টাকার তালিকায় এক পরিবারের দুই জনের নাম কী করে থাকে? যে মানুষটা বাগানের বাইরের সে কী করে টাকা পায়?’

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এই অনুদান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না, অফিসিয়াল কোনো খরচও এতে নেই। তাই এটা নিয়ে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago