ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার প্রতিবাদে ফরিদপুরে ওষুধ ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ফরিদপুরে একটি ওষুধের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল ওষুধের দোকানে ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ফরিদপুর শাখা।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ফরিদপুর শহরের সকল জায়গার ওষুধের দোকান একে একে বন্ধ হয়ে যায়। জেলা শহরটিতে বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তালিকাভুক্ত অন্তত ২৫০ জন ব্যবসায়ীর ওষুধের দোকান রয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে হাসিনা ড্রাগ হাউসে অভিযান চালিয়ে এর মালিক আমানুর রহমানকে (৩৮) ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ আদালতের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী হাকিম ও ফরিদপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ্ মো. সজিব।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিউ সেবা ওষুধের দোকানের মালিক এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘আদালত আমানুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন আদালতের গাড়িতে করে তাকে (আমানুর রহমানকে) সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর ১০ মিনিটের মধ্যে টাকা না দিলে ১১ মিনিটের মাথায় তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে মর্মে হুমকি দেওয়া হয়। এ অবস্থায় ওই ব্যবসায়ী মোবাইলের মাধ্যমে বাড়িতে যোগাযোগ করে টাকা এনে পরিশোধ করেন।’

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি ফরিদপুর শাখার সহ সভাপতি সঞ্জিব কুমার সাহা বলেন, ‘কিছুদিন আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওষুধের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা নিয়ে সমস্যা হয়ে ছিল। এক নির্বাহী হাকিম ঝুড়িতে রাখা বিভিন্ন কোম্পানির মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করে ফেলেন। নিয়ম অনুযায়ীই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ওই ঝুড়িতে রাখা হয়। পরে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা এসে তা বদলে দিয়ে যান। কিন্তু সেগুলি ধ্বংস করায় ওষুধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমাদের দাবির কারণে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল পরবর্তীতে আদালত পরিচালনার সময় জেলা ড্রাগ কর্মকর্তা এবং কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির একজন প্রতিনিধি রাখা হবে। কিন্তু রোববার বিকেলে চালানো অভিযানে ড্রাগ সুপার ও সমিতির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। তাই এ হয়রানির প্রতিবাদে আমরা আন্দোলনে গিয়েছি।’

ফরিদপুরের ড্রাগ সুপার সুলতানা রিফাত ফেরদৌস বলেন, ‘ওষুধের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে সাধারণত আমাকে বলা হয় এবং আমি থাকি। কিন্তু রোববারের অভিযানের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।’

নির্বাহী হাকিম ও ফরিদপুর সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ্ মো. সজিব বলেন, ‘হাসিনা ড্রাগ হাউসের মালিক বেশ কয়েকটি অপরাধ করেছেন। তার পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নেই, দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে। ওষুধের দোকানের ফ্রিজে ওষুধ ছাড়া অন্য কিছু রাখার বিধান নেই। কিন্তু তার দোকানের ফ্রিজে দুধ, বিস্কুট ও আলুর তরকারি জাতীয় খাবার পাওয়া গেছে। যা আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীকে বেশ কয়েকটি ধারায় আরও বেশি জরিমানা করা যেত। কিন্তু তাকে শুধুমাত্র ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানা করা হয়েছে।’

ওষুধের দোকানে অভিযানকালে ড্রাগ সুপার এবং ড্রাগ সমিতির প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাহী হাকিম শাহ্ মো. সজিব বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য এ জাতীয় কোনো ম্যান্ডটরি বিষয় নেই। তাছাড়া তিনি যে অপরাধ করেছে তা তো দৃশ্যমান।’

শাহ্ মো. সজিব জানান, তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েই এ অভিযান পরিচালনা করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

India, Pakistan agree ceasefire

Announces Trump after rivals launch multiple attacks on key military installations; Islamabad, New Delhi confirm truce 

1h ago