পানির নিচে কুয়াকাটা পৌরসভা ভবন
গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে কুয়াকাটা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অস্থায়ী পৌরভবন, রাস্তা, আবাসিক হোটেল, বাড়িঘরে ২ থেকে ৩ ফুট পানি জমেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জলাবদ্ধ পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। নষ্ট হচ্ছে কৃষকের বীজতলা, সবজি ক্ষেত। মাছের ঘেরও তলিয়ে গেছে। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জায়গা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে বহুতল ভবন ও পাকা স্থাপনা নির্মাণের ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে পৌর এলাকায় চলমান ১৪ কিলোমিটার ড্রেনের নির্মাণকাজে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। ৩ নং ওয়ার্ড এলাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন স্থানীয়রা।
৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়াহিদ ইব্রাহিম দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, ‘পৌরসভার আকার আকৃতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেদখল হয়েছে এখানকার খাল ও জলাশয়।’
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হোসাইন আমির মনে করেন, ‘কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এখনই উন্নয়ন না করলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হবে কুয়াকাটাবাসী।’
ইলিশ পার্ক ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পার্কসহ আশপাশের এলাকা গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় দুই ফুট পানি নিচে। পার্কের গাছপালা ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
‘ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমন মানবসৃষ্ট দূর্যোগের কবলে পড়েছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পৌর মেয়র ও কাঊন্সিলরদের সমন্বয়হীনতার কারণে পৌরসভা গঠনের ১০ বছরেও কাঙ্খিত নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী।’
৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কুয়াকাটা পৌর এলাকার মধ্যে আমার ওয়ার্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। মেয়র তার স্বার্থে মাটি কাটা মেশিন দিয়ে ড্রেনের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলে আমি স্থানীয় জনগণের ক্ষতির কথা চিন্তা করে মেশিনের পরিবর্তে শ্রমিক দিয়ে ড্রেনের কাজ করার অনুরোধ জানাই।’
‘কিন্তু মেয়র আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে কাজ বন্ধ রাখেন। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়েন মানুষ,’ যোগ করেন তিনি।
‘কারো সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই’ দাবি করে পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ৪৪ কোটি টাকা খরচে ১৪ কিলোমিটার ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে। বর্ষার কারণে কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কাজ শেষ হলে পৌরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন। বাড়বে নাগরিক সুবিধা।’
উল্লেখ্য, সাগর সৈকত কুয়াকাটায় আগত দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয় নাগরিকদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন লতাচাপলী ইউনিয়নের একাংশে গঠন করা হয় ‘কুয়াকাটা পৌরসভা’।
প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে এ পৌরসভায় মাত্র চার কিলোমিটার ড্রেন পাকা করা হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রটির অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
Comments