করোনা রোগীর পলায়ন: ডাক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশের প্রতিবাদ এফডিএসআর’র
রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল থেকে একজন করোনা রোগীর পলায়নের জন্য চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সসিবিলিটি (এফডিএসআর)।
এ ঘটনায় চিঠি দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে ওই চিকিৎসককে দেওয়া কৈফিয়ত তলবপত্র প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে তারা।
করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (অতিরিক্ত) ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ বরাবর আজ মঙ্গলবার এ প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজের পক্ষে এফডিএসআর’র প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘আপনি, আপনার হাসপাতাল থেকে ২০ জুন পালিয়ে যাওয়া ৭৬৪ নম্বর বেডে ভর্তি আব্দুল মান্নান নামক জনৈক রোগী, বয়স ৪৪, হোসেন হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলীর নাম উল্লেখ করে ওইদিন কর্মরত চিকিৎসকের কাছে তার পলায়নের জন্য কৈফিয়ত তলব করে পত্র দিয়েছেন।
আপনার অবগতির জন্য জানাতে চাই ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীকে পাহারা দেওয়া চিকিৎসকের কাজ নয়। চিকিৎসক কেবল একজন রোগীকে দেখেন না, পুরো ওয়ার্ডের ২০ থেকে ৫০ জন রোগীকে দেখেন। আর ওয়ার্ডে তিনি একমাত্র কর্মচারীও নন যে কেউ পালিয়ে গেলে দায়িত্ব তার একার ওপরে বর্তাবে। আইন অনুযায়ী আপনার দপ্তর হতে পলাতক রোগীর নাম পুলিশে রিপোর্ট করার কথা।
নিয়মানুযায়ী হাসপাতালে সকল ভিজিটরের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করার কথা, সকল কর্মচারীর পরিচয়পত্র থাকার কথা ও যে কেউ বের হতে ও ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে জবাব দেওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, ডিসচার্জ লেটার বা ছাড়পত্র ছাড়া কোনো রোগীর হাসপাতালের দরজা পার হবার কথা নয়।
আপনি ও আপনার অধীনস্থ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এই হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে হাসপাতাল থেকে বিনা বাধায় রোগী পলায়ন করতে পারে তার নিরাপত্তাহীনতার দায় আপনার ও আপনার অধীনস্থ নিরাপত্তা ব্যবস্থার। যে হাসপাতালের দরজা দিয়ে কোনো অনুমতির কাগজ না দেখিয়ে বা পরিচয় না দিয়ে যাতায়াত করা যায়, সে হাসপাতালে কোনো যন্ত্রপাতি নিরাপদ নয়, মানুষ নিরাপদ নয়, কর্মচারীরাও নিরাপদ নয়।
আপনি নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আধুনিক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বা হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার জ্ঞানের ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে সেটাও এই পত্র দিয়ে আপনি প্রমাণ করেছেন। শুধু তাই না আপনার সম্যক ধারনাও নাই ওয়ার্ডে রোগী পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব কার বা আদৌ পাহারার দায়িত্ব চিকিৎসকের বা নার্সের আছে কী না? আপনি অযৌক্তিকভাবে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দিয়ে নিজের কর্তব্যে অবহেলা ঢাকার চেষ্টা করেছেন। দয়া করে ওয়ার্ডে চিকিৎসকের জব ডেসক্রিপশন বা পালনীয় দায়িত্বের বর্ণনা খুঁজে বের করুন। সেটা না থাকলে একটি মানসম্পন্ন বর্ণনা প্রস্তুত করুন। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার কাজ কি সেটা না জানা আপনার মতো উচ্চ দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তার জন্য অপমানজনক ও গর্হিত কাজ। আপনার বক্তব্য অনুযায়ী এখন থেকে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাকে দরজায় দাড়িয়ে দারোয়ানের কাজ করতে হবে। যা উদ্ভট এক চিন্তা ছাড়া কিছু না।
এই পত্র পড়ে, আপনি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কেন আপনার হাসপাতালে চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত ডিসচার্জ লেটার ছাড়া রোগী সদর দরজা অতিক্রম করতে পারে ও কেন রোগী ও চিকিৎসকদের যথাযথ নিরাপত্তা নাই তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেবেন। যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে না পারলে পত্র মারফত ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিকিৎসককে দেওয়া কৈফিয়ত তলবপত্র প্রত্যাহার করবেন।’
গত ২১ জুন দায়িত্বরত চিকিৎসক বরাবর মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (অতিরিক্ত) ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ স্বাক্ষরিত এক ‘কৈফিয়ত তলবপত্রে’ বলা হয় যে, ‘মো. আব্দুল মান্নান (৪৪), হোসেন হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী ঢাকা, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ জুন অত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৭৬৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ২০ জুন রাত আড়াইটায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। রোস্টার অনুযায়ী ওইদিন আপনি ডিউটিরত ছিলেন। এমতাবস্থায় সরকারি দায়িত্বে অবহেলার দরুন কেন আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা পত্র পাপ্তির তিন কর্ম দিবসের মধ্যে নিম্ন-স্বাক্ষরকারীর দপ্তরে লিখিতভাবে জবাব দাখিল করার জন্য বলা হলো।’
এ বিষয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (অতিরিক্ত) ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শুধু চিকিৎসককেই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়নি। ঘটনার সময় দায়িত্বরত নার্স ও নিরাপত্তা কর্মীদেরও জবাব চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পরদিনই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। আগামীকাল কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।’
হাসপাতাল থেকে রোগীর পলায়নের দায় আপনি নিজে এড়াতে পারেন কী না? জানতে চাইলে ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ বলেন, ‘ওই সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স ও নিরাপত্তা কর্মীরা যেমন দায় এড়াতে পারেন না, সর্বোপরি আমিসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কেউই এ দায় এড়াতে পারে না। এজন্যই আমরা ঘটনার তদন্ত করছি, যাতে আমাদের ভুল-ত্রুটি শোধরানো যায়।’
তবে এফডিএসআর’র প্রতিবাদপত্র এখনো হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
Comments