দেশে প্রতি মিনিটে শনাক্ত ২, প্রতি ৩ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫
বাংলাদেশে প্রতি মিনিটে অন্তত দুই জনের নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতি তিন ঘণ্টায় মারা যান পাঁচ জন। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান থেকেই উঠে এসেছে এমন হিসাব।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় মোট তিন হাজার ৮৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং একই সময়ে মারা গেছেন ৪০ জন।’
এ নিয়ে মারাত্মক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬১ জনে এবং মোট শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জনে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এই ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েক সপ্তাহে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
গত ১০ জুন দেশে তিন হাজার ১৯০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৩৭ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
গত ১৫ জুন শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৯৯ জন এবং মারা গেছেন ৩৮ জন। সেদিন পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বা শনাক্তের সংখ্যা দৃশ্যত স্থিতিশীল বলে মনে হতে পারে। তবে, যে কোনো সময় এই সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। যদি পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়, তাহলে শনাক্তের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। তাদের মতে, সম্ভাব্য সব রোগীকে শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক এবং রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে সংক্রমণের হার একই রয়েছে। তবে, আমার কাছে উদ্বেগের বিষয় হলো, হালকা সংক্রমণ হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা শনাক্ত হওয়া রোগীর চেয়ে ১০ গুণ বেশি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হালকা সংক্রমণ হয়েছে এমন রোগী শনাক্ত করা না গেলে দেশের যে কোনো অঞ্চলে, বিশেষ বরে জনাকীর্ণ শহরে, হঠাৎ করেই রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। এজন্য এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
গত ২০ জুন তিন হাজার ২৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন ৩৭ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, ‘তথ্য থেকে দেখা যায়, শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। কিন্তু, গত কয়েকদিন ধরে এই হার কমছে।’
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এটাই চূড়ান্ত তা নয়। তবে, হঠাৎ করেই এই হার বেড়ে যাবে না বা কমে যাবে না।’
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়। তবে, প্রথম দিকে করোনা পরীক্ষার সুবিধা সীমাবদ্ধ থাকলেও গত মে থেকে পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে।
পরিসংখ্যান প্রকাশের ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফো থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের সংখ্যার হিসাবে তৈরি তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের ১৭তম অবস্থানে রয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশের নিচে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উপরে আছে ফ্রান্স।
Comments