গলিতে বোলিং করে অনুশীলন করছেন নাঈম

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত রয়েছে দেশের সব ধরণের ক্রিকেট। ভেস্তে গিয়েছে সব পরিকল্পনা। ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল স্পিনার নাঈম হাসানও এর বাইরে নন। অথচ অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিরতির আগে দারুণ ছন্দে ছিলেন এ তরুণ। ফের ক্রিকেট শুরু হলে কি সহজেই সেই ছন্দ খুঁজে পাবেন?
ছবি: রাজিব রায়হান

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত রয়েছে দেশের সব ধরণের ক্রিকেট। ভেস্তে গিয়েছে সব পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল স্পিনার নাঈম হাসানও এর বাইরে নন। অথচ অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিরতির আগে দারুণ ছন্দে ছিলেন এ তরুণ। ফের ক্রিকেট শুরু হলে কি সহজেই সেই ছন্দ খুঁজে পাবেন? তবে ফেরার পথটা যেন সহজ হয় এ জন্য নিয়মিত অনুশীলন করে যাচ্ছেন ১৯ বছর বয়সী এ স্পিনার। লকডাউনের এ সময়ে কীভাবে নিজেকে ফিট রাখছেন, আর কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের রামিন তালুকদারের সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য-

দ্য ডেইলি স্টার (টিডিএস): কেমন আছেন এবং কীভাবে নিজের ফিটনেস ঠিক রাখছেন?

নাঈম হাসান: আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। সময় তো এখন সবারই খারাপ যাচ্ছে। ফিটনেস আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে। আমিতো কাজ করছি। জিম করছি, রানিং করছি। হালকা পাতলা বোলিং করছি বাসার সামনে। বিবিসির একটা আছে গাইডলাইন। ওইটা অনুসরণ করা হচ্ছে। এর বাইরেও করা হচ্ছে। বসে আছি, কোনো তো কাজ নাই, তাই করছি। রানিং করছি। পাশাপাশি টুকটাক বোলিং করছি।

টিডিএস: বাসার সামনে বল করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে?

নাঈম: খুব বেশি জায়গা নেই। বাসার সামনে জায়গা বলতে একটা গলি আছে। থাকে না... আমাদের বাড়ির গলি। ওইখানে তেমন কেউ যাতায়াত করে না। ওইটা মাটির তো, ওইখানে ম্যাট বিছিয়ে উইকেটের মতো বানিয়ে নিয়েছি।

টিডিএস: বোলিংয়ে কোন ধরণের কাজ করছেন?

নাঈম: আমাকে (ড্যানিয়েল) ভেট্টরি যে সব জিনিস দেখিয়েছে যেমন ক্রস সিমে বলা করা, আর্ম বল করা, এসব করা হচ্ছে। আর বোলিং স্পিনটা ঠিক রাখার জন্য ড্রিল করা হচ্ছে নিয়মিত।

টিডিএস: লকডাউনের এ সময়ে ডায়েট নিয়ে অনেকেই ঝামেলায় আছে? আপনি কীভাবে কি করছেন? নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন?

নাঈম: আমার বাসায় আম্মু এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন। আমাকে অনেক সাহায্য করে আরকি। আমার অনেক পছন্দের যেসব খাবার ছিল ওইসব তেমন খাই না। পাকিস্তান সিরিজের আগের থেকেই ইনজুরিতে ছিলাম, তখন থেকেই মিষ্টি জাতীয় জিনিস ছেড়ে দিয়েছি। খাবারের ব্যাপারে একটা রুটিন করে নিয়েছি। ওই পরিমাণের বেশি খাওয়া হয় না।

টিডিএস: কি কি পছন্দের খাবার ছেড়ে দিয়েছেন?

নাঈম: মিষ্টি জাতীয় জিনিস আমার খুব প্রিয় ছিল। আম্মু সবসময় আমার জন্য পায়েস, ফালুদা, কাস্টার্ড এসব বানাতো। আমি বাড়ি আসলেই বানাতো। এখন এসব এড়িয়ে চলতি। কোকও খুব পছন্দ করতাম। এখন বাদ দিয়ে দিয়েছি। প্রথম দিকে খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে।

টিডিএস: এ সময় তো অনেক বেশি অবসর। এ সময়টা কীভাবে কাটছে?

নাঈম: ইংলিশ স্পিকিং কোর্সটা একটু করছি। আম্মু-আব্বুর সঙ্গে সময় দিচ্ছি, ছোট ভাই আছে। আর বেশির ভাগ সময় তো কাজের মধ্যেই চলে যাচ্ছে। সকালে উঠেই জিমের কাজ করি। ওইটা করতে করতেই দেখা যায় দুপুর হয়ে যায়। এরপর খাওয়া দাওয়া করে একটি বিশ্রাম নিয়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বোলিং করি। সন্ধ্যার পর একটু পড়াশুনা করি। পরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যাই। এছাড়া পুরনো খেলা-টেলা দেখি মাঝে মাঝে। গত বিশ্বকাপের খেলা দেখলাম। আয়ারল্যান্ড সিরিজের খেলাগুলো দেখলাম। নিজের বোলিংও দেখি ইউটিউবে। মিস করি অনেক।

টিডিএস: এ লম্বা বিরতিটাকে কীভাবে দেখছেন? ক্রিকেট স্থগিত হওয়ার আগে তো আপনি দারুণ ছন্দে ছিলেন।

নাঈম: আমার খুব ভালো সময় যাচ্ছিল। লিগ শুরুর পর থেকেই ভালো চলছিল। উইকেটও পাচ্ছিলাম। মাঝে ফিটনেস বোলিং নিয়ে কাজ করেছিলাম। বিসিএলে প্রথম ইনিংসটা মোটামুটি গেছে কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস থেকে উইকেট পেয়েছি। সুন্দর যাচ্ছিল সবকিছু। কিন্তু এখন বলতে পারছি না মাঠে কি হবে। অনুশীলনে ড্রিল করতেছি, যাতে বোলিং ঘুরানোটা যাতে নষ্ট না হয়। ওইটা নিয়েই কাজ করছি। জায়গাটা ঠিক করা যাবে। আর যে কোনো খেলোয়াড়ই অনেক দিন পর খেললে... একটু সমস্যা হয়। যেমন আমি প্রথম ম্যাচ খেলার পর চার পাঁচ ম্যাচ খেলিনি। তো প্রথম ম্যাচটা হয়তো একটু কষ্ট হতে পারে। তবে পরে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।

টিডিএস: বিরতি ভালো কিছু বলে আশা করছেন?

নাঈম: এটা আসলে মানসিকতার উপর। আপনার নিয়মিত যে কাজ করেন, সেটা যদি আপনি করে যেতে পারেন, আর নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে প্রথম ম্যাচে একটু কষ্ট হলেও দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে সব ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা।

টিডিএস: বোলিংয়ে কোনো সমস্যা হলে বা অন্য কোনো সমস্যায় কারও কাছ থেকে কোনো টিপস নেন?

নাঈম: আমার কোনো সমস্যা হলে আমার ছোট বেলার কোচ মোমিন ভাইয়ের (মোমিনুল হক) কাছে যাই। উনি দেখলেই বুঝে যান। এছাড়া সোহেল স্যার আছেন, সালাহউদ্দিন স্যার আছেন, উনারা অনেক সাহায্য করেন। অ্যাকশন নিয়ে সমস্যা হলে মোমিন ভাইয়ের কাছে যাই।

টিডিএস: ক্রিকেটে কাউকে অনুসরণ করেন?

নাঈম: বোলিংয়ে নাথান লায়নকে ভালো লাগতো। ওকে অনুসরণ করা হয়। এর আগে সোয়ানকে ভালো লাগতো। আর ওয়ার্কআউটের ক্ষেত্রে বলবো সাকিব ভাই, মুশফিক ভাইয়ের কথা। বিশ্বকাপের সময় সাকিব ভাইয়ের ওয়ার্কআউট দেখে ভালো লেগেছে। এছাড়া আমাদের সাইফ হাসানও অনেক ভালো ওয়ার্কআউট করে।

টিডিএস: বোলিংয়ের পাশাপাশি আপনি ব্যাটিংটাও ভালো করতে পারেন। অলরাউন্ডার হওয়ার জন্য এ নিয়ে কোনো কাজ করছেন?

নাঈম: ব্যাটিং নিয়ে লকডাউনের আগে কাজ-টাজ করা হচ্ছিল। একটা ধারা ছিল। এখন তো ওইভাবে সুযোগ পাচ্ছি না। আমার ইচ্ছা আছে অলরাউন্ডার হওয়ার। সুযোগ পেলে চেষ্টা করব। ওই রকম হতে হলে তো একদিনে হবে না, আস্তে আস্তে চেষ্টা করতে হবে। সুযোগ পেতে হবে, আর সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তবে আমার ইচ্ছা আছে।

টিডিএস: তারকাখ্যাতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারই অল্পতে শেষ হয়ে গিয়েছে...

নাঈম: না না... আমি ওইসব জায়গায় নাই। আমি ফেসবুকে তেমন সময় দেই না। আমার একটা সাধারণ জীবন। খেলাধুলা করি। নিজেকে এইসবেই ব্যস্ত রাখি।

Comments

The Daily Star  | English

Half of Noakhali still reeling from flood

Sixty-year-old Kofil Uddin watched helplessly as floodwater crept into his home at Bhabani Jibanpur village in Noakhali’s Begumganj upazila on August 10. More than a month has passed, but the house is still under knee-deep water.

5h ago