আগ্রাসী যমুনা-ব্রহ্মপুত্র-ঘাঘট

প্রাক-মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে গাইবান্ধায় এবং দুই দিন ধরে বগুড়ার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই জেলার হাজারো মানুষ। শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
Bogura_Flood1.jpg
প্রাক-মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ছবি: স্টার

প্রাক-মৌসুমে অধিক বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত তিন দিন ধরে গাইবান্ধায় এবং দুই দিন ধরে বগুড়ার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই জেলার হাজারো মানুষ। শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ধারণা করছে, বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আজ রোববার দুপুর ১২টায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপারা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।’

গতকাল বগুড়ায় যমুনার পানি বিপৎসীমার মাত্র ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তাতেই সারিয়াকান্দি উপজেলার চর মানিক দাইড়, নোয়াপারা চর, বাটির চর, চর কর্নিবারী, দিঘাপাড়া চর ও দলকার চর ডুবতে শুরু করে। ভাঙনের মুখে পড়ায় সারিয়াকান্দির দিঘাপাড়া চরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের সব আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

চালুরাবারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, ‘যমুনার ভাঙনে গত এক সপ্তাহে উত্তর শিমুল তাইড় ও লাওরাপাড়া চরের দুই শ পরিবার বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন। নয়াপাড়া ও শিমুল তাইড় চরের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।’

Bogura_Flood3.jpg
গত তিন দিন ধরে গাইবান্ধায় এবং দুই দিন ধরে বগুড়ার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ছবি: স্টার

নয়াপাড়া চরের নুরজাহান বেগম বলেন, ‘গত ছয় দিন আগে আমাদের ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। রান্না বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ঘরের শুকনা খাবারও প্রায় শেষ।’

ভাগুরগাছা চরের হোসনে আরা বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে বন্যার মধ্যে খুব কষ্টে আছি। পাঁচ দিন ধরে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছি, এখনো সন্ধান পাইনি।’

Bogura_Flood2.jpg
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছবি: স্টার

একই গ্রামের শাহজান আলী বলেন, ‘করোনার আগে দিন মজুরের কাজ করতাম। করোনার কারণে কাজ কমে যাওযায় চরের পতিত তিন বিঘা জমিতে পাট এবং ২০ শতক জমিতে তিল চাষ করেছিলাম। বন্যার পানিতে তাও ডুবে গেছে। নিজে চাষ করবো বলে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম।’

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে দুই হাজার ২২৫ হেক্টর জমির পাট, এক হাজার ২৬৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৩৩ হেক্টর জমির সবজি, ৪১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১০ হেক্টর জমির ভুট্টা এবং দুই হেক্টর জমির মরিচ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি যদি আরও এক সপ্তাহ থাকে তবে এসব ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।’

গত তিন দিনে গাইবান্ধায় নতুন নতুন অনেক অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র এবং ঘাঘট নদের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলগুলো ডুবে গেছে। জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করছি। আশা করি, আজ সন্ধ্যায় নিশ্চিত হতে পারবো কত মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।’

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ‘আজ দুপুর ১২টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপরে ছিল ব্রহ্মপুত্রের পানি। ঘাঘট নদের গাইবান্ধা পয়েন্টে পানি বেড়ে আজ দুপুরে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।’

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোকলেছুর রহমান জানিয়েছেন, ‘এই অবস্থা আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকবে।’

ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহতাব উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখন তাদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাবার দরকার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গাইবান্ধায় এ পর্যন্ত ৮০৩ হেক্টর জমির পাট, আউশ, বাদাম, তিল, শাক-সবজি, আমন ধানের বীজতলা, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশি দিন পানির নিচে থাকলে এসব ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago