বাল্যবিয়ে নিরসনে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি গার্লস নট ব্রাইডস’র

২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বাল্যবিয়ে নিরসন, কন্যাশিশু ও কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে গার্লস নট ব্রাইডস বাংলাদেশ।

আজ সোমবার সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই আবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল কুড়িগ্রাম জেলার বাল্যবিয়ে নিয়ে নজরদারি করেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এ জেলায় বাল্যবিয়ের সংখ্যা ছিল ৮ শতাংশ, মে মাসে এসে বাল্যবিয়ে হয় মোট বিয়ের ১১ শতাংশ। এই চার মাসে শুধুমাত্র কুড়িগ্রাম জেলাতেই বাল্যবিয়ে হয়েছে ১২১টি। ধীরে ধীরে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা কমছে, এবং বাড়ছে অনিবন্ধিত বিয়ে।

গত এপ্রিল ও মে মাসে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ৫৩ জেলায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একটি জরিপ চালায়। যাতে ৭০,৫৪৩ জন অংশগ্রহণ করে। ওই জরিপ থেকে জানা যায়, এপ্রিল-মে মাসে ১৫,২৭৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২০৩ জন কিশোরী, এছাড়াও ৩৭৪টি বাল্যবিয়ে আয়োজনের পর প্রতিরোধ করা হয়েছে।

ব্র্যাকের গবেষণায় বলা হয়েছে, ৮৫ শতাংশ বাল্যবিবাহ হয়েছে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে, ৭১ শতাংশ হয়েছে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য এবং বাইরে থেকে আসা পাত্র হাতের কাছে পাওয়া ৬২ শতাংশ বিয়ের কারণ ছিল।

ওয়ার্ল্ড ভিশনের গবেষণা বলছে, মূলত করোনাকালে যে ভয়াবহ আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে কন্যাশিশু তথা কিশোরীদের বাল্যবিয়ের বলি হতে হচ্ছে। কারণ, হতদরিদ্র পরিবারগুলো এর সমাধান হিসেবে এই পথকেই বেছে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৪টি জাতীয় পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ২০৬ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

এসব তথ্য বিবেচনায় নিয়ে গার্লস নট ব্রাইডসের আশঙ্কা, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সকল ধরণের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে।

করোনা মহামারিতে নারী ও কন্যাশিশুর জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে নারীরা স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন হয়রানি, কমছে নারীর সামাজিক নিরাপত্তা।

বিভিন্ন সংগঠনের জরিপ এবং পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের কারণে কন্যাশিশু ও কিশোরীদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়া ও বাল্যবিয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এরসঙ্গে বেড়েছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

গার্লস নট ব্রাইডস বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বাজেট শুধু একটি বছরের কর্মসূচির জন্য অর্থ বরাদ্দ নয়, এটি একটি বছরের কর্মপরিকল্পনার রূপরেখাও বটে। আশা করা হয়েছিল দুর্যোগকালীন এই বাজেটে নারী ও কন্যাশিশু প্রতি বিশেষ মনোযোগ ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বরাদ্দ থেকে বেড়েছে ৭১ কোটি টাকা। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে হলো- প্রস্তাবিত বাজেটে কন্যাশিশুর সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও কিশোরী তথা কন্যাশিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে পৃথক বা সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণালয় কর্তৃক গৃহীত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০’ এ বর্ণিত কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্যও এই বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ নেই।

এ সব বিবেচনা করে বাল্যবিয়ে নিরোধ ও ‘বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০৩০’ বাস্তবায়ন, কন্যাশিশু ও কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য এ বছরের বাজেটে পৃথকভাবে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট আবেদন জানিয়েছে গার্লস নট ব্রাইডস।

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans 31% hike in food subsidy in FY26 budget

The government plans to raise the food subsidy allocation by 31 percent to Tk 9,500 crore in the upcoming fiscal year, aiming to ensure access to affordable food for poor and low-income households.

13h ago