করোনা পরীক্ষার ফি ও মহামারি মোকাবিলা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত-দ্বিমত

করোনা শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা, বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা।
ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ও ডা. আব্দুন নূর তুষার। ছবি: সংগৃহীত

করোনা শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা, বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকা এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে দেওয়া এক পরিপত্রে ফি নির্ধারিত ফির ব্যাপারটি জানানো হয়েছে। যেদিকে দেশে প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং জনসংখ্যার তুলনায় পরীক্ষার সংখ্যা কম, সেদিকে সরকারিভাবে পরীক্ষার ফি নির্ধারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ফি নির্ধারণ তো আসলে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। অনেকে দরকার নাই, অযথা এসে পরীক্ষার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। ডেঙ্গুর সময়েও এটা হয়েছিল। তাতে করে ভিড় বাড়ে এবং যারা আসল রোগী তাদের ভোগান্তি বাড়ে। এখন ফি দেওয়াতে ভিড় কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু, এক্ষেত্রে একটা বিকল্প ব্যবস্থা রাখা দরকার। দুইটা বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। একটা বুথে বিনা মূল্যে, অপরটিতে টাকা দিয়ে। ফলে যারা চায় টাকা দিয়ে করবে, আবার যাদের আর্থিক অবস্থা নেই, তারা বিনা মূল্যে করবে। হয়তো বিনা মূল্যে পরীক্ষার বুথে ভিড় টাকা দিয়ে করানো বুথের চেয়ে বেশি হবে। তবে, গ্রামে-গঞ্জে বা প্রান্তিক জনগণ বা যারা নিম্ন আয়ের, তারা যাতে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করতে পারে, এমন ব্যবস্থাও রাখা দরকার।’

আমাদের দেশে যে পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে, সেই হিসাবে ফি নির্ধারণের যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের পরীক্ষা কম হচ্ছে, ল্যাব কম— এটা যেমন সত্য, তেমনি এগুলো তো বাড়ানো হচ্ছে। এখন এখানে যেমন মেশিন আনার ব্যাপার রয়েছে, তেমনি দক্ষ লোকবলের প্রয়োজনও রয়েছে। কারণ, দক্ষ লোকবল না থাকলে তো ঠিকমতো পরীক্ষার কাজ করা যাবে না। যারা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজ করবে, তারা অভিজ্ঞ না হলে তাড়াহুড়ো করলে পরীক্ষার ফল ভুল আসতে পারে। এজন্য ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ লোক দিয়ে কাজ করাতে হবে। পাশাপাশি টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট দরকার।’

‘পাশাপাশি দ্রুত শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থাও থাকা দরকার। তাহলে দ্রুত পরীক্ষা করা যাবে। সবমিলিয়ে পরীক্ষার আওতা আরও বাড়াতে হবে’, বলেন তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করার বিকল্প ব্যবস্থা না রাখলে এবং ফি’র কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ পরীক্ষা করাতে না গেলে সামনে সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন যদি দেখা যায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, সরকার অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। সরকার চাইলে তো সবই পারে। কিন্তু, যদি বিকল্প না রাখা হয়, তাহলে তো ঝুঁকি বাড়বেই। পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক কাজ করে, যেসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এতে নিম্ব আয়ের মানুষরাও উপকৃত হবে এবং সরকারের চাপও কমবে।’

বেসরকারি হাসপাতালগুলো যে বেশি ফি নিচ্ছে, সেই ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সাড়ে তিন হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও চার থেকে ছয় হাজার টাকা করে নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর মনিটরিং দরকার। বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে তো অনেক অভিযোগই আসছে। সরকারের উচিত তদারকি কমটি করে এগুলো সব সঠিকভাবে মনিটরিং করা।’

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের অন্য দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা ধীরে ধীরে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে। ঠিক এই মুহূর্তেই নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। আসলে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি জানার কারণেই বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। মানে এখান থেকে পরীক্ষা করে করোনা নেই জেনে বিদেশে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে আছে। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এখন যদি আমরা সংক্রমণ কমাতে পারি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আবার তারা ভিসা দেবে। তারা তো তাদের নিরাপত্তার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেবেই। কাজেই আমাদের এখানে রোগনিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

অপব্যবহারের কারণে করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণের বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার যে অপব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, সেটি সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমেই হচ্ছে। সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জনগণের ওপর কেন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হলো? মহামারির সময় পরীক্ষার জন্য জনগণকে ফি দিতে হবে, সেটা পৃথিবীর আর কোন দেশে হয় আমার জানা নাই। এখানে আরেকটা বিষয়, একজনের পরীক্ষা করে করোনা না থাকলে তিনি যে মুক্ত এই বিষয়টা তো আমরা জানতে পারলাম। তাই পরীক্ষাটা যদি বিনা মূল্যে হয়, তাহলে রোগটা কার হলো, কার হলো না, সেটা তো জানা যাবে। সেটাতো রাষ্ট্রের জানতে হবে। তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে।’

‘আর যারা অপব্যবহার করছে, তারা এটা করবেই। তাদের জন্য ২০০ বা ৫০০ টাকা বড় কোনো পরিমাণ না। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, বিপদে এখন তারাই পড়বে। তাদেরকেই এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। কারণ, এই করোনা সংকটে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য ২০০ টাকাও অনেক। এটা কোনো সিদ্ধান্ত হলো না। বরং মহামারিটিকে বেসরকারিকরণ করা হলো। মহামারি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। এখন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তাই করা হলো।’

এসব দিক বিবেচনায় সামনে আমাদের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তা নিশ্চিত করে তো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু, সংক্রমিতদের মধ্যে যারা বাইরে থাকবে এবং অর্থের অভাবে পরীক্ষা করাতে পারবে না, সেক্ষেত্রে তো ঝামেলা হবেই। সেক্ষেত্রে তো আমাদের সংক্রমণের ঝুঁকি আরও উচ্চ হলো। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্তটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। জনগণের অর্থে পরীক্ষা করানোটা উচিত নয়। আর যারা সক্ষম, তারা তো বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েই পরীক্ষা করবে। সাধারণ মানুষ কেন কষ্ট পাবে?’

করোনার কারণে বিশ্বের কিছু দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব দেশই তো করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে চায়। এখন বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা কতটুকু, সেটার ওপরেই নির্ভর করবে বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়া। এক্ষেত্রে আমি মনে করছি, যত দ্রুত আমরা করোনামুক্ত হতে পারব, তত দ্রুত অবাধে আসা-যাওয়া করতে পারব। এখন যেহেতু করোনার কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, তাই এটা থেকে তো পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যাবে না। যেটা করা যেতে পারে, তা হলো নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা যদি করোনা নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বকে দেখাতে পারি, তখন আবার তারা বিবেচনা করবে। যদি করোনা নিয়ন্ত্রণ করে আমরা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে আসতে না পারি, তাহলে তো আমরা বিশ্ব থেকে অবশ্যই পিছিয়ে পড়ব।’

করোনা পরীক্ষার ফি ও পরীক্ষার অপব্যবহার বিষয়ে চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরীক্ষার অপব্যবহার আসলে হচ্ছিল। অনেকেই জ্বর না থাকলেও আতঙ্ক বা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়ে পরীক্ষা করাচ্ছে। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, দৈনিক গড়ে ১৫ হাজারের মতো পরীক্ষা করে তিন থেকে চার হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন সরকার তো এত অর্থ খরচ করতে পারে না। তবে, এক্ষেত্রে ফি নির্ধারণ করা ছাড়াও সরকার আরেকটি কাজ করতে পারত। তা হলো— পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। যেমন: জ্বর, কাশি না থাকলে পরীক্ষা না করা বা এক্সরেতে পজিটিভ না থাকলে পরীক্ষা না করা। এর কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিলে রোগীরা এটার ভিত্তিতে পরীক্ষা করতো। তখন ফেক টেস্ট অনেক কমে যেত।’

‘এখানে আরেকটা ব্যাপার। করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়ার সময় অধিকাংশ জায়গাতেই কোনো চিকিৎসক কিন্তু থাকেন না, ল্যাব টেকনোলজিস্ট থাকেন। কিন্তু, সেসব জায়গাতে নমুনা নেওয়ার সময় যদি পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে একজন চিকিৎসক থাকতেন, তাহলে তিনি রোগী দেখে বলতে পারতেন যে উনার পরীক্ষা লাগবে কি না। এটা তো ল্যাব টেকনোলজিস্ট বলতে পারবেন না। এটা করলে পরীক্ষা কিছু কমানো যেত। পাশাপাশি ফি’র নির্দেশনায় দুস্থ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য টাকা লাগবে না বলা আছে। এখন কে দুস্থ, সেটা একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আসলেই যিনি দুস্থ, তাকে যদি বিনা মূল্যে পরীক্ষা করা হয়, তাহলে কিন্তু কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’

বাংলাদেশে যেদিকে পরীক্ষাই তুলনামূলক কম হচ্ছে, সেদিকে ফি নির্ধারণ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় যে পরীক্ষা কম হচ্ছে, তা সত্য। কিন্তু, যাদের মধ্যে উপসর্গ আছে, তাদের মধ্যে কয়জনের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে, তা যদি দেখা যেত, তাহলে হয়তো দেখা যেত ভালোই পরীক্ষা হয়েছে। উন্নত দেশের ক্ষেত্রে হয়তো জনসংখ্যার দিক বিবেচনায় পরীক্ষা করার বিষয়টি নিয়ে কথা হবে। কিন্তু, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দেখা দরকার, উপসর্গ আছে, এমন লোকদের মধ্যে কয়জনের পরীক্ষা করা হয়েছে।’

‘এখন প্রথম থেকে যদি আমাদের এখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হতো, তাহলে কোনো ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হতো না। যদি ২০০ বা ৫০০ টাকা করে নেবেই, তাহলে এই চিন্তাটা আগেই করা দরকার ছিল। আগেই ভাবার দরকার ছিল যে পরীক্ষার অপব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু, কিছুদিন বিনা মূল্যে পরীক্ষা করে তারপর এটার ওপর ফি নির্ধারণ করার মানে কী? কিছু নাগরিককে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করতে দেওয়া হলো, আবার কিছু নাগরিকের কাছ থেকে ফি নেওয়া হবে। তার মানে একই দেশের নাগরিকদের সঙ্গে দুই রকমের আচরণ করা হলো। এটা অসম আচরণ’, বলেন তিনি।

এখন ফি দেওয়ার ভয়ে যদি নিম্ন আয়ের মানুষ পরীক্ষা করাতে না যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে কি না? জানতে চাইলে আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘এখন উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও ফি দেওয়ার ভয়ে যদি নিম্ন আয়ের লোকজন পরীক্ষা করাতে না যায়, তাহলে অবশ্যই ঝুঁকি বাড়বে। এই ঝুঁকি কমানো জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে রেনডম পরীক্ষা ও ট্রেসিং করার দরকার ছিল। কিন্তু, এই দুটো কার্যক্রমের কোনোটি আমাদের নেই। আমরা চাহিদার ভিত্তিতে পরীক্ষা করি। অর্থাৎ কারো উপসর্গ আছে এবং তিনি ফোন করে বা নিজে গিয়ে পরীক্ষা করালে পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু, রেনডম টেস্টিং আমাদের দরকার ছিল। বিশেষ করে শপিং মলের বাইরে, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ এ ধরনের জায়গাগুলোতে রেনডম পরীক্ষা করানোর দরকার ছিল। তাতে আমরা দুইটা বিষয় জানতে পারতাম। একটা হলো কমিউনিটিতে কী পরিমাণ লোক আক্রান্ত হয়েছে, আর দ্বিতীয়টা কী পরিমাণ লোক সুস্থ হয়ে গেছে। তাতে করে আমরা সহজে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিতে পারতাম। কারণ, পরিস্থিতি আমাদের জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ।’

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দ্রুত শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের এখানে অর্থনৈতিক কাজকর্ম পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে দ্রুত শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা আমাদের প্রেক্ষাপটে অনেক। কারণ, একটা ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করেন, এখন যদি জানা যায়, তাদের মধ্যে কতজনের করোনা হয়েছিল, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। এক্ষেত্রে কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন এটি জানাও দরকার। কার করোনা হয়েছে, কার হয়নি, এটি জানলেই আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করাটা সহজ হতো।’

‘দ্রুত শনাক্তকরণ পরীক্ষার সুবিধা আমাদের আরও আগেই করার দরকার ছিল। কারণ, এটা রোগ নির্ণয় করার জন্য নয়, যারা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের শনাক্ত করতে এটার প্রয়োজন। এবং যারা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন, তাদের শনাক্ত করা গেলে দ্রুত অর্থনীতি চালু করা যেত।’

কিছু দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে আমরা বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়ব কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা করোনার সংক্রমণ বেশি, এমন কারণে কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে না। এটি দেওয়ার মূল কারণ হলো— আমাদের এখানে ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। তাই আমাদের এখান থেকে যারা পরীক্ষা করে করোনা না থাকায় সেখানে যাবে, তারা কী আদৌ করোনায় আক্রান্ত কি না, সেই নিশ্চয়তা না থাকার কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা। এখন এই ক্ষতিটা তো আমরাই করেছি। আমাদের এখানে জেকেজি হেলথকেয়ার নামে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যাপারটি সামনে এসেছে। এসব কারণেই বাইরে আমাদের ভাবমূর্তি-আস্থা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’

‘এখন যদি আমরা বাইরের দেশগুলোতে আস্থা স্থাপন করতে না পারি, তাহলে আমাদের মানুষগুলো সেসব দেশগুলোতে যেতে পারবে না। আমাদের শ্রমবাজারে এটার প্রভাব পড়বে। কারণ, হয়তো পণ্য আনা যাবে, কিন্তু, শ্রমিকরা তো বাইরে যেতে পারবে না। অন্যদিকে, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থীই বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তারাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, মারা গেছেন এক হাজার ৮৪৭ জন, আর সুস্থ হয়েছেন ৫৯ হাজার ৬২৪ জন। দেশে মোট পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর ১ দশমিক ২৭ হার ও সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago