আশির সবুজ প্রাণ কন্ঠভরা গান
গুণী কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর জন্মদিন আজ। আশি বছরে পা রাখলেন এই কিংবদন্তী। সংগীতজীবনের ষাট বছর পূর্ণ করেছেন। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের জন্য পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়াও, ২০০০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন এই বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী। তার গাওয়া অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের কয়েকটি হলো: ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি’, ‘চোক্ষের নজর এমনি কইর্যা’, ‘এমন তো প্রেম হয়’, ‘কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘সখী চলো না’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, পৃথিবীর পান্থশালায়’, ‘একদিন চলে যাবো’, ‘কথা বলবো না,‘যেও না সাথী’, ‘চলে যায় যদি কেউ’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে’ ও ‘চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার’।
দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে সংগীতজীবনের অনেককিছু ভাগাভাগি করেছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। এরই অংশবিশেষ পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:
৮০ বছরের জীবনে প্রবেশ করলেন, কেমন লাগছে?
জন্মদিনের কথা আমি নিজেই ভুলে যাই। সোজা কথা, জন্ম হয়েছে মৃত্যু হবেই, এটা খুবই স্বাভাবিক। এর মাঝখানে কী করলাম সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু করে থাকি সেটাই গরুত্বপূর্ণ। বয়স কত হলো— সত্তর না আশি— এগুলো কোনো গুণের ব্যাপার না, এগুলো হবেই।
সংগীতজীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজেকে কতোটা তৃপ্ত মনে হয়?
তৃপ্ত বলাটা খুবই মুশকিল। আমি মনে করি, কোনো শিল্পীই তৃপ্ত হয় না। কারণ, তৃপ্ত হয়ে গেলে তো সবই শেষ হয়ে গেল। বরং উল্টো করেই বলি, আমার তেমন অতৃপ্তি নেই। আমার কাছে সবচেয়ে বড় হলো মানুষের ভালোবাসা।
আপনার গাওয়া অগণিত গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরে, এর কারণটা কী?
এটা বিশ্লেষণ করা খুব মুশকিল। কারণ, এগুলো বিশ্লেষণ করে হয় না। কোন গানটা কখন মানুষের কাছে ভালো লাগবে, পছন্দ করবে— তা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণ নেই।
তবে চলচ্চিত্রের গানের একটা ব্যাপার আছে। চলচ্চিত্রটি যদি মানুষের ভালো না লাগে তাহলে তা জনপ্রিয় না হয়। যে গানটি ব্যবহার করা হয় সেটি যদি সঠিক জায়গায় ব্যবহার না করা হয়, যদি সঠিক চিত্রায়ন না হয় তাহলেও গানটি জনপ্রিয় হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, গানের জন্য চলচ্চিত্র অনেক ওপরে উঠে যায়।
আপনার পছন্দের শিল্পী কারা? কাদের গান বেশি শোনা হয়?
এক সময় খুব বেশি ইংরেজি গান শুনতাম। উপমহাদেশে যে কয়জন ছিলেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ রফি, তালাত মাহমুদ, মেহেদি হাসান, গোলাম আলি, আশা ভোঁসলে, লতা মুঙ্গেশকরের গান শুনি।
দেশের মধ্যে আলাউদ্দিন খান, মোহাম্মদ আসাফুদ্দৌলা, আবু বকর খান, আব্দুল জব্বার, মাহমুদুন নবী, খন্দকার ফারুক আহমেদ, বশীর আহমেদ ও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী’র গান শুনি।
প্লেব্যাকের শিল্পীদের কিছু কৌশল আছে, তা কীভাবে আয়ত্তে এনেছিলেন?
একজন শিল্পী প্রতিনিয়তই শেখে। এক্ষেত্রে নিজের মেধাকে প্রয়োগ করতে হয়, কোনটা নিতে হবে আর কোনটা বাদ দিতে হবে— তা জানা দরকার। বড় পর্দায় গান করলে কণ্ঠস্বর চরিত্রের সঙ্গে মেলাতে হবে। যার কণ্ঠে গান চলচ্চিত্রে তার যে চরিত্র বা অবস্থান সেটাও শিল্পীকে বুঝতে হয়।
রিয়েলিটি শো আয়োজন করে শিল্পীদের বের করে আনা হয়। কিন্তু, তারা বেশিদিন টিকতে পারছে না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
যে দু-একজন শিখে এসেছে, তারা টিকে গেছে। অথবা টিকে যাওয়ার পর যারা শিখেছে তারা শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেছে। কিন্তু, যারা হঠাৎ করে তারকা হয়ে গেছে, তাদের তারকা হওয়ার যে তৃপ্তি সেটা পূরণ হয়ে যাওয়ার ফলে তারা টেকেনি। যারা তাড়াতাড়ি এসেছে, তারা তাড়াতাড়ি চলে গেছে।
একজন শিল্পীর জীবনে নিয়মানুবর্তিতা কতোটুকু প্রয়োজন?
শুধু শিল্পীদের ক্ষেত্রেই না, প্রত্যেক মানুষেরই নিয়মের সঙ্গে চলা উচিত। তবে এই পেশার সঙ্গে যারা আছেন তাদের সবসময় নিয়মকানুন মেনে চলা সম্ভব হয় না। কিন্তু, তারপরও যতটুকু সম্ভব তা মেনে চলা প্রয়োজন।
পছন্দের এমন কোনো শিল্পী আছে কী, যার সঙ্গে গান করার ইচ্ছা রয়েছে আপনার?
আমার একটি ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, সেটা পূরণ হওয়া এখন আর সম্ভব না। কারণ তিনি জীবনের ওপারে চলে গেছেন। তিনি হলেন সলিল চৌধুরী। তার সুরে আমার একটি গান করার খুব ইচ্ছা ছিল।
Comments