ক্লান্ত হলেই শরীরে ছিটিয়ে দেওয়া হতো গরম তেল

সিগারেটের ছ্যাঁকা, লাঠিপেটাসহ চলতো অমানবিক নির্যাতন
ভুক্তভোগী কিশোরী মোছা. আছমা খাতুন। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় বাসার কাজে নিয়োজিত এক কিশোরীকে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। তার গায়ে গরম তেল ছিটিয়ে, সিগারেটের ছ্যাঁকা, লাঠিপেটাসহ অমানবিক সব নির্যাতন চালানো হতো বলে অভিযোগ করেছে ওই কিশোরী ও তার পরিবার।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ওই বাসার মালিক আবু তাহের-শাহাজাদী দম্পতি, তাদের প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক মো. বাবুল, ব্যবস্থাপক ইব্রাহীম, সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ভুক্তভোগী কিশোরী মোছা. আছমা খাতুনের গ্রামের বাড়ি (১৪) গাজীপুরের শ্রীপুরের ফরিদপুরে। তার বাবার নাম ইমান আলী।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের মতে, তাদের বাড়ির পাশেই ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেড। ওই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ঢাকা উত্তরার ৩ নং সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নং বাসায় বসবাস করেন। এক বছর আগে তাহের-শাহজাদী দম্পতি মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই কিশোরীকে পরিবারের কাছ থেকে তাদের উত্তরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে ওই কিশোরী গৃহস্থালির কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়লে প্রথমদিকে গালিগালাজ করা হতো। পরে শরীরে গরম তেল ঢেলে দেওয়া, লাঠিপেটা করা এবং বিভিন্ন সময় সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। এতে তার শরীরের অনেক স্থানে ফোসকাসহ খত তৈরি হয়েছে। তার চিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। করোনার অজুহাতে তাকে পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না।

ভুক্তভোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৯ জুন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাকে গাড়ী চালকের মাধ্যমে একটি যাত্রীবাহী বাসে তুলে দিয়ে গ্রামে পাঠানো হয়। বাড়িতে ফিরে এসব ঘটনা তার পরিবারকে জানায়। পরে তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা ইমান আলী বলেন, ‘বাসার কাজ করানোর কথা থাকলেও মেয়ের মতো স্নেহ দিয়ে রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করাতেন। এমনকি ঠিকমতো ঘুমাতে দিতেন না। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন।’

ওই কিশোরী বলেন, ‘বাড়ীর মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল ঘুষি মেরে নির্যাতন করতেন। কয়েকবার সিগারেটের ছ্যাঁকাও দিয়েছেন। গৃহকর্ত্রী শাহজাদীও শরীরে গরম তেলের ছিটা দিতেন। তারপর দগ্ধ ঘায়ের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতেন। গত চার মাস ধরে এমন নির্যাতন চলছিল।’

কিশোরীর মা জোছনা বলেন, ‘অভাবের কারণে দু’মুঠো ভাত কাপড়ের আশায় ধনী মানুষের বাসায় কাজ করতে দিয়েছিলাম। বিনিময়ে পেয়েছি নির্যাতন।এ ব্যাপারে আইনি আশ্রয় নিলে আমার মেয়েকে তুলে হত্যা ও নানাভাবে হেনস্তা করার হুমকি দিয়েছেন গৃহকর্ত্রী শাহজাদী।’

অভিযুক্ত ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহেরের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কারখানায় গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে কেউ রাজি হননি।

শ্রীপুর থানার অফির্সাস ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থল উত্তরা হওয়ায় নির্যাতিতের পরিবারকে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনি সহায়তা নেওয়ার পরার্মশ দেওয়া হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

1h ago