এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা খুব সহজে প্রমাণ হবে: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে নিজেদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এতে দেখা গেছে, কিটটির সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা (স্পেসিফিসিটি) ৯৬ শতাংশ।
gonoshasthaya_kendra_logo.jpg
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে নিজেদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এতে দেখা গেছে, কিটটির সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা (স্পেসিফিসিটি) ৯৬ শতাংশ।

অথচ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরীক্ষায় কিটটির সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা পাওয়া গিয়েছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৬ শতাংশ। ঔষধ প্রশাসন জানিয়েছিল, এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইনের আলোকে কিটের সর্বনিম্ন সংবেদনশীলতা ৯০ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের সংবেদনশীলতার মাত্রা এর ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ৯০ শতাংশের কম হওয়ায় এটির অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে, পরবর্তীতে কিটটির উন্নয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন।

এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে গণস্বাস্থ্য কর্তৃক কিটটির কার্যকারিতা পরীক্ষার বিষয়টি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, গণস্বাস্থ্য তাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ এমন ৪৫ জন রোগীকে নির্ধারণ করেছে। তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেওয়ার বা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি নমুনা এনজাইম লিঙ্কড ইমিউনো সরবেন্ট অ্যাসে (এলিসা) পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে কিটের কার্যকারিতা নির্ধারণে ৪৩টি নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। পরীক্ষায় এর মধ্যে ৪২টির ফল ‘পজিটিভ’ ও একটির ‘নেগেটিভ’ এসেছে। অর্থাৎ কিটের সংবেদনশীলতার হার ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

এ ছাড়াও, ‘নেগেটিভ স্যাম্পল’ হিসেবে ধরে তারা আরও ১০০টি নমুনা পরীক্ষা করেছে, যেগুলো করোনা মহামারি শুরু হওয়ার দুই বছর আগে সংগ্রহ করে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সেই নমুনাগুলো মধ্যে দেখা গেছে, ৯৬টি নমুনার ফল ‘পজিটিভ’ এবং চারটি নমুনার ফল ‘নেগেটিভ’।

পক্ষান্তরে, বিএসএমএমইউর পরীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত ১৪ দিন যাবৎ উপসর্গ নেই, এমন ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করার পর ৭৬ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে পারে এই কিট। তার মানে আক্রান্ত হয়ে সুস্থতার পথে আছেন, এমন ব্যক্তিদের শনাক্তে এই কিটের সেনসিটিভিটি প্রায় ৭০ শতাংশ।

ঔষধ প্রশাসনকে দেওয়া সুপারিশে কিট নিয়ে বিএসএমএমইউ বলেছে, ‘যেসব স্থানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সেখানে অসুস্থতার দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং কোভিড-১৯’র উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পিসিআর পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এসেছে, সেসব ক্ষেত্রে এই কিট কিছুটা সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পাশাপাশি এই কিট দেশে করোনা রোগের ব্যাপ্তি (সেরোসার্ভিলেন্স) দেখার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, এই কিটের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ রোগী যারা ইতোপূর্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব। এ তথ্য আমাদের কোভিড প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারেন্টিন সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউন উত্তোলনের রূপরেখা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

তবে, বিএসএমএমইউর সুপারিশ আমলে নেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

কিটের কার্যকারিতার ব্যাপারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগামী ৫ জুলাই ঔষধ প্রশাসনের সঙ্গে আমরা বসে আলোচনা করব। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এফডিএ’র গাইডলাইন অনুসরণ করলে আমাদের অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা খুব সহজে প্রমাণ হবে। অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে, সেটাও আগে নির্ধারণ করে দেওয়ার অনুরোধ করব। একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলে আমরাও সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারব। যেহেতু অনুমোদন না দিলেও কিটের পরবর্তী উন্নয়নে তারা (ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর) আমাদেরকে সহযোগিতা করতে চেয়েছে, তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করব এবং এসব বিষয়ে জানতে চাইব।’

‘এফডিএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা আমাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছি, এর সংবেদনশীলতা বিএসএমএমইউ যা বলেছে, তার চেয়ে বেশি আছে। এখন সব মিলিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা কী হবে, কীভাবে সেটা নেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে তাদের (ঔষধ প্রশাসন) সঙ্গে আলোচনা করা হবে’, যোগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী-গবেষক ড. বিজন কুমার শীল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা আমাদের কিটের ব্যাপারে আগেও কনফিডেন্ট ছিলম, এখন আরও বেশি কনফিডেন্ট। এফডিএ সস্প্রতি অ্যান্টিবডি কিটের গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে যদি আমাদের কিটের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়, তাহলে খুব সহজে আমাদের কিটের কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। আমরা নিজেরা পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু, বিএসএমএমইউ যখন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে, তখন তারা এফডিএ’র গাইডলাইন অনুসরণ করেনি। যে কারণে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যাটা কেটে যাবে। আমরা অ্যান্টিবডি কিটের আরও উন্নতি করেছি। এখন একসঙ্গে ৯২টি নমুনাও পরীক্ষা করা যাবে। আগামী ৫ জুলাই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের মিটিং করার কথা রয়েছে। সেখানে আমরা তাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।’

‘আর অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষায় কোন গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে, সেটাও যেন আগে থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়— এই বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনকে অনুরোধ করব। এফডিএ এখনো অ্যান্টিজেন কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার কোনো গাইডলাইন প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রে কোন গাইডলাইন অনুসরণ করে অ্যান্টিজেন কিটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটি এফডিএ এখনো জনসম্মুখে আনেনি। সেক্ষেত্রে বিএসএমএমইউ কোন গাইডলাইন অনুসরণ করে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করবে, তা আগে থেকে ঠিক করে আমাদের জানানো হলে আর কোনো দ্বিধা তৈরি হবে না’, বলেন ড. বিজন কুমার শীল।

আরও পড়ুন:

গণস্বাস্থ্যের কিট কার্যকর নয়: বিএসএমএমইউ, কিট কার্যকর- প্রতিবেদন পেয়ে প্রতিক্রিয়া: ড. বিজন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর

বিএসএমএমইউর প্রতিবেদন বলছে গণস্বাস্থ্যের কিট কার্যকর

গণস্বাস্থ্যের কিটে নয়, ত্রুটি নমুনা সংগ্রহ প্রক্রিয়ায়

আমরা যা আজ ভাবছি, পশ্চিমা বিশ্ব তা আগামীকাল ভাবছে: ড. বিজন

আমাদেরই সবার আগে এই কিট বিশ্ববাসীর সামনে আনার সুযোগ ছিল: ড. বিজন

ড. বিজনের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ৩৫০ টাকায় ১৫ মিনিটে করোনা শনাক্ত সম্ভব

মুক্তিযুদ্ধ, গণস্বাস্থ্য, ডা. জাফরুল্লাহ ও মাছ চোর

গণস্বাস্থ্যের কিট, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেশীয় রাজনীতি

২৫ দিনে ৩০১ শয্যার করোনা হাসপাতালের জন্ম অথবা অপমৃত্যু!

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এবারের উদ্যোগ ‘প্লাজমা ব্যাংক’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago