করোনা মহামারির কারণে বন্ধ বেসরকারি চেম্বার ও ডেন্টাল ক্লিনিকগুলো

ভুগছেন দাঁত-চোখ-নাক-কান-গলার রোগীরা

দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দন্ত চিকিৎসকের কাছে যান রেজাউল করিম। চিকিৎসক তাকে দাঁতের এক্স-রে করাতে বলেন। এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক তাকে পরামর্শ দেন, একটি দাঁত তুলে ফেলতে হবে।
প্রতীকী ছবি। (সংগৃহীত)

দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দন্ত চিকিৎসকের কাছে যান রেজাউল করিম। চিকিৎসক তাকে দাঁতের এক্স-রে করাতে বলেন। এক্স-রে রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক তাকে পরামর্শ দেন, একটি দাঁত তুলে ফেলতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেজাউল করিম দাঁত তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই দেশে আঘাত হানে করোনাভাইরাস। কিছুদিনের মধ্যেই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী শুরু হয় সাধারণ ছুটি। আর সেই ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ওই দন্ত চিকিৎসকের চেম্বারটিও।

রাজধানীর আজিমপুরের ৬০ বছর বয়সী এই বাসিন্দা বলেন, ‘ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আমি আর চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার সাহস পাইনি।’

কিছুদিন পরই দাঁতের ব্যথা আরও বাড়ে তার। বিকল্প না দেখে তিনি আরেকজন দন্ত চিকিৎসকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। এই দন্ত চিকিৎসক আবার তাকে এক্স-রে করার পরামর্শ দেন।

কয়েকদিন আগেই রেজাউল করিম বলছিলেন, ‘কী করব বুঝতে পারছি না।’

রেজাউল করিমের মতো অনেক রোগীই দাঁত, চোখ এবং নাক, কান ও গলার (ইএনটি) রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ, করোনা মহামারির কারণে বেশিরভাগ ডেন্টাল ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বার প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।

অবস্থা বেশি খারাপ না হয়ে পড়লে অনেক রোগীই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। এই অবস্থা অনেক চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। সংক্রমণ এড়াতে তারা ব্যক্তিগত চেম্বারে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

এতে করে হাসপাতাল ও চেম্বারে রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে, দেরিতে হলেও কিছু চিকিৎসক পুনরায় রোগী দেখতে শুরু করেছেন। রোগী কমে যাওয়ায় সংকটে পড়ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোও। রাজধানীর একটি চক্ষু হাসপাতাল তাদের কর্মীদের বেতন ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম পরিশোধ করছে।

রাজধানীর লায়ন্স আই ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফি খান বলেন, ‘নাক, মুখ, গলা ও চোখের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হয়। তাই শরীরের এই অঙ্গগুলোর চিকিৎসা করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’

গত ২৮ জুন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, ‘উপসর্গহীন করোনা রোগীরা চিকিৎসকদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।’

 ‘এসব কারণেই বেশিরভাগ চক্ষু হাসপাতাল গত দু-তিন মাস ধরে শুধু জরুরি সেবা দিচ্ছে। যদিও প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে তারা পুনরায় সেবা চালু করতে শুরু করেছে, তবে, রোগীর সংখ্যা খুব কম। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে থেকে রোগী আসা প্রায় বন্ধই আছে’, বলেন তিনি।

মহামারি শুরু হওয়ার আগে লায়ন্স আই হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫০ জনেরও বেশি রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতেন। বর্তমানে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৫০ এ।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ১০ থেকে ১২টি অপারেশন করতাম। কিন্তু, এখন করছি সপ্তাহে এক দিন।’

এ ছাড়াও, তারা চক্ষু শিবির করে মাসে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীর অপারেশন করতেন। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে বলে জানান ডা. শফি খান।

রোগীদের সংখ্যা কমার সঙ্গে সঙ্গে কমছে হাসপাতালের আয়ও। যে কারণে তারা বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বেতন কমাতে।

বেশিরভাগ চক্ষু হাসপাতালের পরিস্থিতি একই রকম জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মহামারি আরও দীর্ঘায়িত হলে বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল এবং চক্ষু বিশেষজ্ঞদের চেম্বারগুলো মারাত্মকভাবে আর্থিক ধাক্কা খাবে।’

 ‘নিয়মিত রোগীরা, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের রোগীরা করোনার প্রকোপের কারণে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের কাছে আসতে পারছেন না। কিছু রোগী ফলোআপেও আসছেন না। যা তাদের জন্যও ক্ষতিকারক’, যোগ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. ইদ্রিস আলীও একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

ইএনটি রোগের চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং ইতোমধ্যে তার পরিচিতই প্রায় ২০ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কারণে বেশিরভাগ ইএনটি চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।’

বহির্বিভাগে ইএনটি রোগীর সংখ্যা ৬০০-৬৫০ জন থেকে কমে ১০০-১৫০ জনে এসে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রোগীরা হাসপাতালে আসতে ভয় পায়। কারণ, আমাদের হাসপাতালেও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়। রোগীদের স্বার্থে আমি আমার ব্যক্তিগত চেম্বার সপ্তাহে তিন দিন খোলা রাখি। তবে, সেখানেও রোগীর সংখ্যা কম।’

রুহুল আমিন সুজন নামে এক দন্ত চিকিৎসক জানান, রাজধানীর ধানমন্ডি ও জিগাতলা এলাকায় প্রায় ৩০০ জন দন্ত চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিক ও চেম্বারে রোগী দেখেন। তবে, বর্তমানে রোগী দেখছেন মাত্র ১৫ জন।

ঢাকার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজির প্রভাষক রুহুল আমিন সুজন বলেন, ‘অনেক রোগী আছেন যাদের ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা প্রয়োজন। ব্যথানাশকের মতো সাধারণ ওষুধ সেবন করলে তাদের রোগ নিরাময় হবে না। বেশি পরিমাণে ব্যথানাশক সেবন করলে অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English

Army given magistracy power

The government last night gave magistracy power to commissioned army officers with immediate effect for 60 days in order to improve law and order.

4h ago