চার বছর ধরে হতদরিদ্রদের চাল আত্মসাৎ করছিলেন নোয়াখালীর ইউপি চেয়ারম্যান

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের বিরুদ্ধে গত চার বছর ধরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর প্রায় আড়াইশ ভুয়া কার্ড দেখিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদের বিরুদ্ধে গত চার বছর ধরে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর প্রায় আড়াইশ ভুয়া কার্ড দেখিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর ওই ইউনিয়নের বাহারি নগর গ্রামের বাসিন্দা ও বজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বর্তমানে অভিযোগটি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালী তদন্ত করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলার সাত নম্বর বজরা ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় হতদরিদ্ররা ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি পরিবারে ৩০ কেজি করে বছরে পাঁচ মাস চাল পাবে। এ কর্মসূচীর আওতায় বজরা ইউনিয়নে ৮৪২ জন হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে কার্ড দেওয়া হয়। ৮৪২ জন কার্ডধারীর মধ্যে প্রায় আড়াইশ কার্ডধারী কাগজে-কলমে থাকলেও তারা চাল পায়নি। অথচ ওই ভুয়া কার্ড দেখিয়ে মাস্টার রোলের মাধ্যমে ২৪৬ জনের চাল দীর্ঘ চার বছর যাবত উত্তোলন করে চেয়ারম্যান তা আত্মসাৎ করে আসছেন। এ ছাড়াও, সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিয়মানুযায়ী প্রতি ওয়ার্ডে ৯৪ জন করে হতদরিদ্রের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান তার নিজ ওয়ার্ডে (চার নম্বর ওয়ার্ড) ২২৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেছেন। যাদের মধ্যে একই পরিবারের দুই জনের নামও রয়েছে। আবার অনেকেই চাল পায়নি। তালিকায় অনেক প্রবাসী পরিবারের সদস্যের নামও রয়েছে।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর সুবিধাভোগীদের তালিকা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে পুনঃযাচাই করান। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো. সহিদ উদ্দিন পুনঃনিরীক্ষা ও যাচাই করে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে ২৪৬টি কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, বজরা ইউনিয়নে সুবিধাভোগী নামের তালিকায় সমস্যাযুক্ত কার্ডধারীর সংখ্যা ১২ জন। তালিকার সঙ্গে কার্ডের উপকারভোগীর মিল নেই পাঁচ জনের। ২৫ জন কার্ডধারীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি, চার বছরে একবার চাল উত্তোলনকারীর সংখ্যা পাঁচ জন, একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ জন। এ কর্মসূচীর আওতায় সুবিধা পাওয়ার অযোগ্য আট জন। কাগজে-কলমে আছে কিন্তু কার্ড নেই এমন ১৪ জন। নিয়মিত চাল না পাওয়া কার্ডধারীর সংখ্যা ৪১ জন ও মৃত ব্যক্তির নামে ১২টি কার্ড রয়েছে।

এ ব্যাপারে বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরন অর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ইকবাল হোসেন চৌধুরীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক বিষয়টি তদন্ত করেছে। এ তালিকা প্রণয়ন ২০১৬ সালে হয়েছে। আমি এ তালিকা প্রণয়নের কাজ করিনি।’

অভিযোগকারী প্রতিপক্ষের লোক বলেও দাবি করেন তিনি।

সোনাইমুড়ীর ইউএনও টিনা পাল জানান, কার্ড নিয়ে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে এগুলো যাচাই-বাছাই করেছেন। এতে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সেজন্য সব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। নতুনভাবে সুবিধাভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালীর উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বজরা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘একজন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছেন। কিছু কিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের মাঝে আগামী কিস্তিতে চাল বিতরণের সময় কার্ডগুলো ভালো করে তল্লাশি করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago