‘আমাদের পাড়া বন রক্ষা করুন’

গাছ বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে হাতি। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম ম্রো পাড়ার ‘পাড়া বন’ ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই পাড়ার বাসিন্দারা। এজন্য তারা পাড়া বন রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।

পাড়া বন হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশ, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষিত এক বিস্তীর্ণ বনভূমি। পানির উৎস সংরক্ষণ, পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পাড়া বনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং অপরিহার্য।

প্রায় মাস খানেক ধরেই পাহাড়ের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দুর্গম কালু ম্রো পাড়ার ভারপ্রাপ্ত কারবারি মাং রু ম্রো।

‘অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও গত প্রায় এক মাস ধরে সুইক্যাছা মারমা, মো. ইউনুস, বেলাল এবং মো. ইলিয়াস আমাদের পাড়া বনটি ধ্বংস করে দিচ্ছে’, বলেন কারবারি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের কোন সাহায্য না করে বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমাদের পাড়া বন থেকে প্রায় ছয় হাজার বাঁশ এবং প্রায় ৪০টি বড় গর্জন গাছ কেটে নিয়ে গেছে।’

পাড়া বন থেকে কেটে ফেলা বৃক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

কারবারি মাং রু বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় ৩৪ জন সদস্য নিয়ে সাত পরিবারের বাস। প্রায় মাস তিনেক আগে আমাদের পাড়ায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। পাড়াবাসীর চালের ব্যবস্থা হয়েছিল এই পাড়া বনের কয়েকটি গাছ বিক্রি করেই। খাদ্য সঙ্কটসহ পাড়াবাসী যে কোনো বড় ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হলে আমাদের পাড়া বনটি সবসময় আমাদের সুরক্ষা দেয়।’

পাড়ার আরেক বাসিন্দা ক্রং পং ম্রো বলেন, ‘গাছ, বাঁশ পাচারকারীরা নির্বিচারে পানির উৎস নষ্ট করে দিচ্ছে। পানি ছাড়া দুর্গম এই পাহাড়ে আমরা কীভাবে টিকে থাকব? পাচারকারীরা দুটো হাতি দিয়ে নিয়মিত গাছ টানছে।’ 

এলাকার চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পাড়ার লোকেরাই অতিরিক্ত জায়গা দখল করে আছে। যেখান থেকে বাঁশ, গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে সেই জায়গাটি পাড়া বন নয়।’

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল বলেন, ‘মূলত মৌজা প্রধান হেডম্যান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে প্রতিবেদন দেওয়ার কারণেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়।’

অভিযুক্ত মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমি কোনো গাছ, বাঁশ কাটিনি।’

লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাইসার বলেন, ‘হাতি দিয়ে পাড়াবন থেকে গাছ পাচার খুব দুঃখজনক, আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

‘আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে গাছ পাচারকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে’, বলেন কারবারি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের বান্দরবান চ্যাপ্টার প্রধান জুয়ামলিয়ান আমলাই বলেন, ‘ভিসিএফ দুর্গম অঞ্চলের পাহাড়িদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাড়ার পাশে থাকা এই বন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি বন।’

Comments

The Daily Star  | English

Scuffles in Los Angeles as soldiers sent by Trump fan out

Unrest broke out for a third day, with protesters angry at action by immigration officials that has resulted in dozens of arrests of what authorities say are illegal migrants and gang members

1h ago