কাটেনি ডেঙ্গুর বিপদ

গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত এ বছর কম সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করেছেন যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়। এ সময় বেড়ে যেতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা।

গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত এ বছর কম সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করেছেন যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়। এ সময় বেড়ে যেতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখনও এডিস মশার উচ্চ ঘনত্ব পাচ্ছি। যার জন্য আমরা বলতে পারি, আগস্টে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় তার দল গত জুনে ঢাকা শহরের উত্তরা, গুলশান-বনানী, পরীবাগ, লালমাটিয়া-শ্যামলী, শাখারীবাজার এবং খিলগাঁও-তালতলাতে কাজ করেছে। এসব এলাকায় কাজ করে তারা এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব সূচক (বিআই) পেয়েছেন ২০ এর বেশি। এই মান এডিস মশার ঘনত্বের হিসেবে বেশ উদ্বেগজনক স্তর।

কবিরুল বাশার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছেন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

এ বছর ডেঙ্গু রোগী কম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশে ৩২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৬৯ জন ঢাকার বাইরের। গত মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, গত বছর জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২০৮ জন। তবে জুলাইয়ে ছিল ১৬ হাজার ২৫৩ এবং শুধু আগষ্টেই আক্রান্ত হয়েছিল ৫২ হাজার ৬৩৬ জন।

তিনি জানান, গত বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে ছিলেন ৪৯ হাজার ৫৫৪ জন। ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন কবিরুল বাশার।

জ্বর নিয়ে মানুষ হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। কারণ, মহামারি কোভিড-১৯ এর একটি উপসর্গও এটি। জ্বর থাকলে হাসপাতালগুলো রোগীদের ভর্তি করতে চান না। এ কারণেও অনেক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এর পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর চিকিত্সা নিতে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের অনেকেরই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

আরেকটি কারণ হলো মানুষ নিজেদের ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। যার কারণে আগের বছরের তুলনায় সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ কমেছে বলে যোগ করেন কবিরুল বাশার।

কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর চৌধুরী বলেন, সাধারণত আগস্টে ডেঙ্গু সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। তবে জুলাই বা সেপ্টেম্বরেও হতে পারে। তাই, আগামী মাসগুলোতে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের মাঝে ডেঙ্গু সংক্রমণ খুঁজে পাচ্ছে। তাই, আমাদের দেশেও এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত বছরের মতো এবার ঢাকায় ডেঙ্গুর বড় প্রাদুর্ভাব হবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে না আইইডিসিআর। গত বছর, প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ ছিল সিরোটাইপ-৩। যতদিন ভাইরাসটির নতুন সিরোটাইপ না আসবে, ততদিন বড় আকারের প্রাদুর্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এর কারণ হিসিবে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার অনেক মানুষের শরীরে সেরোটাইপ-৩ এর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও মানুষ তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখছে এবং সতর্কতা হিসেবে ঘর থেকে কম বের হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়াও কারণে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম।

তবে ঢাকার বাইরে আরও মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেসব জায়গাতেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থঅ নিতে হবে বলে জানান ডা. ফ্লোরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ জানান, ডিএসসিসি ১ জুন থেকে একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, ‘এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এমন জায়গার মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা ১ আগস্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান মামুন জানান, ডিএনসিসি জুন থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে দুবার চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং ৪ জুলাই থেকে আরও একটি অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্ববর্তী চিরুনি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী বাড়িতে পুনরায় যাচ্ছি এবং আমরা যদি এই বাড়ি বা জায়গাগুলোতে আবারও এডিস মশা পাই তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’

Comments

The Daily Star  | English
Civil society in Bangladesh

Our civil society needs to do more to challenge power structures

Over the last year, human rights defenders, demonstrators, and dissenters have been met with harassment, physical aggression, detainment, and maltreatment by the authorities.

8h ago