কুড়িগ্রামে বানভাসি চরে গো-খাদ্যের সংকট, চড়া দাম

চড়া দামে কিনতে হচ্ছে খড়। ছবি: স্টার

‘নিজে না খেয়ে থাকলেও চলবে। কিন্তু, গরুকে তো খাবার দিতে হবে।’— এমন ভাবনা থাকলেও গো-খাদ্যের সংকট ও খড়ের চড়া দামের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে চরের বানভাসি চাষিদের। চারদিকে বন্যার পানি থইথই। ডুবে গেছে সবুজ ঘাস। চরে গাছগুলোতে তেমন লতা-পাতাও নেই। তাই ধানের খড়ের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ধানের খড় চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

বানভাসি চাষিরা বলছেন, গেল বছরের তুলনায় এ বছর ধানের খড় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি এক শ আঁটিতে তাদেরকে দুই থেকে আড়াই শ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গেল বছর প্রায় ৫৫-৬০ কেজি ওজনের এক শ আঁটি কিনতে হয়েছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গমচর মশালের চর থেকে আসা বানভাসি কৃষক মফিজ উদ্দিন (৫৫) জানান, তার চারটি গরু রয়েছে কিন্তু, গো-খাদ্যের চরম সংকটে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। মূল ভূখণ্ড চরযাত্রাপুর হাটে এসেছিলেন কিছু ধানের খড় কেনার জন্য। কিন্তু, দাম শুনে কপালে হাত! তারপরও বাধ্য হয়ে চড়া দামে খড় কিনতে হয়েছে। তবে, পরিমাণে কম কিনেছেন বলে তিনি জানান।

একই চরের বানভাসি কৃষক সফিয়ার রহমান (৬২) বলেন, ‘চরের চারদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি থইথই করছে। তাই আমরা গো-খাদ্যের চরম সংকটে রয়েছি। গরু পালন করে প্রতিবছর তা বিক্রি করে মোটামুটি আয়ের মুখ দেখেন চরের মানুষ। এই টাকায় তাদের সংসারে অনেক কাজে আসে। আমার পাঁচটা গরু আছে। খাদ্যের অভাবে সেগুলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর কালী-আলগা থেকে আসা বানভাসি কৃষক আব্দুর রহিম (৫৫) বলেন, ‘চড়া দামে ধানের খড় কিনে আবার নৌকা ভাড়া দিয়ে চরে যেতে হয়। এতে গরু পালনে খরচ বেড়েছে অনেক। এই অবস্থায় গরু বিক্রি করেও তেমন দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এক-একটি গরুকে ৬-৭ কেজি ওজনের ধানের খড় দিতে হচ্ছে খাবার হিসেবে। আর এতে গরু সবল থাকছে বলে।’

ব্রহ্মপুত্র নদের চর পার্বতী থেকে আসা বানভাসি কৃষক মজিদুল ইসলাম (৪৮) বলেন, ‘চরে প্রতিটি বাড়িতে গরু-ছাগল রয়েছে। বানের পানিতে গো-খাদ্য ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মূল ভূখণ্ডের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চড়া দামে খড় বিক্রি করছেন। বর্তমানে খড়ের যে দাম চাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ধানের চেয়েও খড়ের দাম বেশি। যেহেতু চরে গো-খাদ্যের চরম সংকট। তাই আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই খড় কিনছি।’

চরযাত্রাপুর হাটে খড় ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে বেশি দামে খড় কিনে আনছি। আর সে কারণেই আমাদেরকেও চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন খড়ের ব্যাপক চাহিদা। তাই বিভিন্ন স্থান থেকে খড় বিক্রেতারাও আসছেন এই চরযাত্রাপুর হাটে।’ 

গত বছরের চেয়ে বেশি দামে খড় বিক্রি হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াটাও এর একটি কারণ।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্রের চরে। চরের প্রায় সবকটি পরিবারই গরু পালন করে থাকে। কিন্তু, বর্ষাকালে বন্যার কারণে ঘাসের মাঠ পানিতে ডুবে যায় এবং কৃষকদের ঘরের কাছে রাখা খড়ের স্তূপও নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে একটা সংকট তৈরি হয়।’

খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে এই বিষয়টি ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

Comments

The Daily Star  | English

Fund crunch hits Rohingyas hard

A humanitarian crisis in Cox’s Bazar Rohingya camps is brewing in the face of funding shortage for the refugees and more arrivals from the conflict-ridden Rakhine state of Myanmar.

9h ago