মহামারির মধ্যেই অভিবাসী শ্রমিকদের আশার আলো দেখাচ্ছে মালয়েশিয়া

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পৃথিবীর সব প্রান্তেই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা কঠিন সময় পার করছেন। তবে, এরই মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছে দেশটি।
manpower malaysia
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ প্রায় ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিকের কাজের অনুমতি রয়েছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পৃথিবীর সব প্রান্তেই বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা কঠিন সময় পার করছেন। তবে, এরই মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছে দেশটি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ঘোষণা করেছে, বিদেশি শ্রমিকরা একই খাতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে কাজ করতে পারবেন। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বা শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। কিন্তু, কিছু প্রতিষ্ঠানে নতুন বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি হাইকমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকায় মালয়েশিয়ার অর্থনীতি পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। প্রায় তিন মাস ধরে কাজ ছাড়া বসে থাকা অনেক বাংলাদেশি এখন যোগ দিচ্ছেন কাজে।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা গত রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের মধ্যে অনিবন্ধিত শ্রমিকদের নিয়মিত করার জন্য আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, ‘বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ ১ জুলাই থেকে এ বছরের শেষ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। তাই মালয়েশিয়ায় অবস্থিত অনিবন্ধিত অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।’

গত ১০ জুন মালয়েশিয়ায় আংশিকভাবে অর্থনীতি কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকে এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ১ থেকে ৫ জুলাই এর মধ্যে দেশটিতে দৈনিক শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১ থেকে ১০ জনের মধ্যে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আট হাজার ৬৬৩ জন করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১২১ জন।

মালয়েশিয়াতে ১ জুলাই থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুল, সিনেমা ও স্পা চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত একজন স্বতন্ত্র বাংলাদেশি গবেষক আবুহায়াত বলেন, ‘চাকরির সুযোগ অনেকাংশে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে এখন অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী পুনরায় সব খুলে দেওয়ার পর আবারও কাজে যোগ দিচ্ছেন। এতে অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছে।’

তারপরও অনেকেই কর্মহীন আছেন বলে তিনি যোগ করেন।

তিনি বলেন, অনিবন্ধিত শ্রমিকদের নিবন্ধিত করা এবং কর্মহীন হয়ে পরা শ্রমিকদের অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলে তাদের ব্যাপক সহায়তা হবে।

মালয়েশিয়ার এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দিন বার্ধান জানান, কোভিড-১৯  প্রভাবে উত্পাদন ও সেবা খাতে প্রচুর বিদেশি শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে, পাম অয়েল ও রাবার বাগানে শ্রমিকের ঘাটতি হচ্ছে।

গত রোববার কুয়ালালামপুর থেকে ফোনে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাবার ও পাম বাগানে প্রায় ৬৫ হাজার শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এতে গত বছর আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের (২৫ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা প্রায়) ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ার সরকারকে বিদেশি শ্রমিকদের অন্যান্য খাত থেকে গাছ লাগানোর কাজে স্থানান্তর করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ এ বছরের শেষ পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

২২ জুন কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছে, মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মীদের একটি খাতের এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছে, এক খাত থেকে অন্য খাতে নয়।

তবে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যদি এই ধরনের স্থানান্তর অনুমোদিত হয় তাহলে তা খুবই ভালো হবে। এ ধরনের স্থানান্তরে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমতি এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম বিভাগের অনুমোদন লাগবে।

বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে যারা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে চান তাদের সরাসরি হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনিবন্ধিত শ্রমিকদের নিয়মিত করার জন্য আমরা মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

হাইকমিশন কর্মকর্তাদের মতে, মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রায় আট লাখ বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় দুই লাখ অনিবন্ধিত।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago