বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ১৫ হাজার কৃষকের স্বপ্ন

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে বিপুল পরিমাণ ফসল বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে এক প্রকার অসহায় পড়েছেন তারা। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম খেত দেখছেন এক কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও ধরলা নদীর চরে বিপুল পরিমাণ ফসল বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে এক প্রকার অসহায় পড়েছেন তারা। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

লালমনিরহাট সদরের তিস্তা নদীর চর হরিনচরার কৃষক বাহার উদ্দিন (৬৫) বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমির বাদামের সবগুলোই বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে জমিতে বাদাম লাগিয়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল এবার জমির বাদাম বিক্রি করে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করব। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু, বন্যা এসে সব শেষ করে দিয়ে গেছে।’

আদিতমারী উপজেলার তিস্তার চর নরসিংহের কৃষক মজিবর রহমান (৬৮) জানান, তার চার বিঘা জমির ভুট্টা ও ১৫ শতাংশ জমির আমন ধানের বীজতলা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভুট্টা বিক্রি করে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে সংসারের কাজে লাগানোর স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সব স্বপ্ন ভেসে গেলো বানের পানিতে। চার বিঘা জমির ভুট্টা আবাদ করতে তাকে ২৩ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমন ধানের চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এবার হামারগুলার বাঁচি থাকা খুব কষ্টের হইছে। হামার খেতের ফসল ভাসি গ্যাইছে নষ্ট হইছে, হামার স্বপ্নগুলা নষ্ট হইছে। হামরাগুলা খুব কষ্টোত আছং। হাতোত টাকা-পইসা কিছুই নাই। এ্যালা হামরা ক্যাঙ করি কি করমো ভাবি পাবার নাগছোং না।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরযাত্রাপুরের কৃষক আপিয়ার রহমান (৬৪) জানান, তার সাত জমির বাদাম, পাট ও সবজী ও আমন ধানের বীজলার সবটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাদাম ঘরে তোলার আগেই আগাম বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ফসল। পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছিলেন। এখন কীভাবে ঋণ শোধ করবেন আর কীভাবে সংসার চালাবেন।

তিনি বলেন, ‘হামারগুলার সুখ আরাম নাই। বানের পানিত হামার সুখ ভাসি গ্যাইছে আর এ্যালা হামরা হাবুডুবু খাবার নাগছোঙ। হঠাৎ করি এ্যামন করি বানের পানি আসিল হামরা বাড়ি-ঘর ছাড়ি পালাইলোং। ফসল বাঁচাই ক্যামন করি।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শামিম আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বন্যায় জেলায় ৯০২ জন চর কৃষকের ৩৯ হেক্টর জমির বাদাম, ভুট্টা, পাট ও আম ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতি নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সরকারি সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে এবং বরাদ্দ দিলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডি. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বলেন, ‘জেলায় বন্যায় ১৪ হাজার চর কৃষকের ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল বাদাম, চিনা, তিল, পাট, সবজী ও আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে এবং ক্ষতি নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। তাদের সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন জানানো হবে।’

আগাম বানের পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেলে তারা সামনের আবাদগুলো নিয়ে বিপাকে পড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন চরের কৃষকরা।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus meets Malaysian PM Anwar Ibrahim

Anwar Ibrahim to consider issue of Bangladeshi workers

Malaysian Prime Minister Anwar Ibrahim today promised to consider the issue of 18,000 Bangladeshi workers who missed a deadline to enter Malaysia saying that they need workers, but not "modern slaves"

3h ago