সোফায় বসে কাঁদতাম: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় পেইন

প্রায় এক দশক আগে আঙুলে চোট পাওয়ার পর টিম পেইনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার পড়েছিল হুমকির মুখে।
tim paine
ছবি: এএফপি

প্রায় এক দশক আগে আঙুলে চোট পাওয়ার পর টিম পেইনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার পড়েছিল হুমকির মুখে। আত্মবিশ্বাস এতটা তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল যে, ব্যাট হাতে মাঠে নামতেই ভয় পেতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কাঁদতেন ঘরে বসে।

ওয়ানডে দিয়ে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান পেইন। পরের বছর টেস্ট অভিষেকের স্বাদও নেন তিনি। শুরুতেই ব্যাটিংয়ে ও উইকেটের পেছনে দক্ষতার ছাপ রাখায় তাকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকে। কিন্তু বিধি বাম। কয়েক মাস পর একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলার সময় আঙুল ভেঙে যায় তার।

একবার-দুবার নয়, সাতবার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল পেইনকে। পুরো দুটি মৌসুমে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। জাতীয় দল তো বটেই, রাজ্য দল তাসমানিয়া থেকেও ছিটকে যেতে হয় তাকে।

যার হাত ধরে দুঃসময় পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট, সেই পেইন তখন ভুগেছিলেন মানসিক অবসাদে। দুঃসহ সেসব অভিজ্ঞতার বিশদ বিবরণ এতদিন পর প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘বাউন্স ব্যাক পডকাস্ট’-এ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেছেন, ‘আমি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম যে, কেবলই আঘাত লাগার ভয় পেতাম। আমি কী করতে যাচ্ছি সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না।’

‘(ব্যাটিংয়ের সময়) বল দেখার পরিবর্তে চিন্তা করতাম যে, গায়ে লাগতে পারে বা কী না কী হয়। আপনি যখন এ ধরনের কাজ করবেন, খেলাটা তখন খুব কঠিন হয়ে যাবে।’

‘আমি লম্বা সময় ধরে রান করতে পারছিলাম না। খেতে পারছিলাম না, ঘুমাতে পারছিলাম না। প্রতিটি ম্যাচের আগে ভীষণ নার্ভাস লাগত। ওভাবে বেঁচে থাকাটা ছিল ভয়ঙ্কর।’

‘খেলায় যখন আমার অংশ নেওয়ার পালা আসত, আমি সেটাকে ঘৃণা করতাম। তখন বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গায় আমি থাকতে চাইতাম। কারণ, আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, ব্যর্থ হব। কেউই জানত না আমার (মানসিক) লড়াইয়ের ব্যাপারটি, সবচেয়ে কাছের বন্ধুরা নয়, এমনকি আমার সঙ্গিনীও নয়।’

‘আমার মনে আছে, এমন অনেক সময় ছিল, যখন আমি বাসায় থাকতাম আর সে (সেসময়ের বান্ধবী ও বর্তমানে স্ত্রী) কাজে যেত, আমি আক্ষরিক অর্থেই সোফায় বসে কাঁদতাম। চিৎকার করে না হলেও।’

‘এটা ছিল দুঃসহ আর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা। ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমার শুধু মনে হতো যে, অনেক মানুষকে আমি হতাশ করে চলেছি।’

নিজেকে ফিরে পাওয়ার গল্পও শুনিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী অজি দলনেতা। তাসমানিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের একজন ক্রীড়া মনোবিদের সঙ্গে দেখা করার পর মানসিকভাবে চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি, ‘সেবারই প্রথম আমি কাউকে বলেছিলাম আমার অবস্থার কথা। মনে আছে, তার কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্র ভালো বোধ করতে শুরু করেছিলাম।’

‘আরও মনে আছে, আমি তাকে আমার মনের ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিলাম। সেটাই ছিল লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপ। অর্থাৎ এটা মেনে নেওয়া যে, আমার সাহায্য লাগবে।’

পরের গল্পটা রূপকথার মতো। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৭ সালের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে ডাক পড়ে তার। কয়েক মাস পরই কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার নিষিদ্ধ হন। তাতে অধিনায়কত্ব পেয়ে যান পেইন। এরপর শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে গেছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Deeper crisis feared as 219 factories shut

With 219 garment factories shut in Ashulia yesterday amid worker unrest along the industrial belts, Bangladesh’s apparel sector is feared to get into a deeper crisis if production does not resume on Saturday after the weekend.  

4h ago