অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদের চোখে বর্তমানের বাংলাদেশ
বাংলাদেশে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি নতুন কিছু নয়। কিন্তু, মহামারিকালে অনিয়ম-দুর্নীতি কমার প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তব চিত্র বিপরীতের চেয়েও বেশি। মহামারিকালে অনিয়ম-দুর্নীতি যেন প্রকট আকার ধারণ করেছে। যে কারণে জনমনে আতঙ্ক বিরাজমান। মহামারি পরিস্থিতিও এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
করোনাকালে অনিয়ম-দুর্নীতি, এবারের বাজেট, সরকারঘোষিত প্রণোদনা, জনমনে আতঙ্ক ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এবং শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।
করোনাকালেও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘দুর্নীতি হলো একটা অভ্যাস, বদ অভ্যাস। কোনো ধরনের ইন্টারভেনশন (হস্তক্ষেপ) ছাড়া মানুষ অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে না। এক্ষেত্রে আমি করোনাকে কোনো ইন্টারভেনশন বলব না। কারণ, করোনা কোনো অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে না। করোনা একটা অসুখ। যিনি অপরাধী, তিনি যেমন করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, যিনি অপরাধী নন, তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। সেজন্য করোনা কোনো ইন্টারভেনশন হিসেবে কাজ করেনি।’
‘একটা মানবিক সমাজে করোনা ইন্টারভেনশন হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু, একটা অপরাধপ্রবণ সমাজে করোনা ইন্টারভেনশন হিসেবে কাজ করে না। আমাদের এখানে দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে হলে শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। যেটি জনগণের পক্ষে সরকারই করতে পারে। কিন্তু, সরকারের মধ্যেই অনেক দুর্নীতিবাজ লুকিয়ে আছে। যার দুই-একজন ধরা পড়ছে। সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না। তাই এমন একটি সময়েও আমরা খারাপ জিনিসগুলো থেকে মুক্ত হতে পারছি না’, বলেন তিনি।
দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি তো ভয়াবহ হতে পারে। সেজন্যই আমরা বলছি, স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য যেসব খাতে দুর্নীতি হচ্ছে, সরকারকে শক্ত হাতে এটা মোকাবিলা করতে হবে। সরকারকে তো শক্ত অবস্থানে দেখা যাচ্ছে না। খুব বড় বড় দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা দেখি দুই-একজনকে ধরা হয়েছে। তখন আবার বলা হয়, সরকারই তো ধরেছে। এখানে আমার কথা হচ্ছে, সরকার ধরবে না তো কে ধরবে? অপরাধীকে ধরার জন্য জনগণের হাতে কি কোনো আইনি ক্ষমতা আছে? এটা তো সরকারের দায়িত্ব। সরকার দায়িত্ব পালন করছে, এর জন্য তো কোনো ক্রেডিট নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এখানে সরকারের মনোভাব হচ্ছে— একজনকে ধরেই তারা মনে করছে বিরাট কিছু একটা করে ফেলেছে। আসলে তো তা না। সেজন্যই তাদেরকে নির্মোহভাবে সব অপরাধীকে দল-মত নির্বিশেষে ধরতে হবে।’
‘এটা করতে না পারলে করোনা কেন, যে কোনো সময়েই দুর্নীতি বাড়তে থাকবে। কারণ, সরকারই দুর্নীতি দূর করার একমাত্র বৈধ সংস্থা। তবে, জনগণ বা যারা সঙ্গে থাকেন, তারা তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারে। সেটা জনগণ করেও থাকে বলে আমার ধারণা’, বলেন তিনি।
করোনাকালে ঘোষিত বাজেট কতটা মহামারি বা সাধারণ মানুষ বান্ধব হয়েছে? জানতে চাইলে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘এই বাজেট কোনো কিছু বান্ধবই হয়নি। আমার মতে, হিসাব মেলানোর যে বাজেট, এবারের বাজেট সেটাও হয়নি। কারণ, মন্ত্রী নিজেই বলেছেন, আয় কোথা থেকে হবে তিনি জানেন না। কিন্তু, ব্যয় তিনি করেই যাবেন। এটা কোনো অর্থমন্ত্রী বলতে পারেন না। আমার বিশ্বাস হয় না। কিন্তু, তিনি বলেছেন। আয় না হলে ব্যয় কোথা থেকে করবেন?’
‘এখন একটা সুযোগ আছে, সরকার নোট ছাপিয়ে করতে পারে। হয়তো সেইভাবেই তিনি (অর্থমন্ত্রী) বোঝাতে চেয়েছেন। সেটা যদি করা হয়, তাহলে তো দেশে মুদ্রাস্ফীতি (ইনফ্লেশন) অনেক বেড়ে যাবে। এতে মানুষের দুর্ভোগও অনেক বেড়ে যাবে। তাই আমার মনে হয়, এবারের বাজেট সুচিন্তাপ্রসূত হয়নি। এটি একটি খামখেয়ালি বাজেট হয়েছে। কাজেই এটা নিয়ে এবার খুব একটা আলোচনাও করিনি। কারণ, এই বাজেট আলোচনাযোগ্যই হয়নি।’
মহামারিকালেও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাপারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের নৈতিক স্থলনটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে— আগে তো আমরা বলতাম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। কিন্তু, এখন তো দেখছি রন্ধ্রের ভেতরে ভেতরেও পৌঁছে গেছে। এই যে ক্রমাগত দুর্নীতির দিকে আমরা চলে যাচ্ছি, এটার কোনো বিকল্প তৈরি করতে পারছি না। এই দুর্নীতি নির্মূল করা, সুনীতির চর্চা করা— এগুলো আমাদের দেশে আগামীতেও হবে কি না, আমি জানি না।’
‘যত দিন যাচ্ছে, যারা দুর্নীতির বাইরে ছিল, এখন সবাই দুর্নীতির ভেতরে চলে আসছে। আগে যেটাকে ধরা হতো ব্যতিক্রম, এখন সেটাই হয়ে গেছে নিয়ম। একটা ভাইরাস যখন কোনো দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশকে আক্রান্ত করে, তখনো ৯০ শতাংশ নিরাপদ। কিন্তু, যদি ৯০ শতাংশকেই আক্রান্ত করে, তাহলে বাকি ১০ শতাংশের বাঁচার কোনো উপায় নেই। তারা কোনোক্রমেই বেঁচে থাকতে পারবে না। দেশে দুর্নীতি এখন এমনই সর্বগ্রাসী যে, ১০, ১৫ বা ২০ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির বাইরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, তারাও এর আওতায় চলে আসছেন। তবে, আমাদের কৃষকদের মধ্যে কোনো দুর্নীতি নেই, পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে কোনো দুর্নীতি নেই। যারা আসলে দেশটা গড়ে তোলেন, তাদের ভেতরে কোনো দুর্নীতি নেই। এখন তারাও তো বেশিদিন দূরে থাকতে পারবে না। বেঁচে থাকার জন্য যদি এটাই (দুর্নীতি) একমাত্র উপায় হয়, তাহলে তো আমাদের আর বেঁচে থাকা যাবে না’, বলেন তিনি।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই করোনাকালে এসে আমাদের যত খারাপ দিকগুলো আছে, সেগুলো ক্রমাগত উপস্থিত হচ্ছে। আমাদের সমাজে যত রকমের অপচর্চা, সব যেন এখন ডালা খুলে বেরিয়ে এসেছে। এই হলো আমাদের বর্তমান চিত্র। যেটা ভয়াবহ।’
একদিকে আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, অন্যদিকে এসব দুর্নীতি-অনিয়মও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন এভাবে তো চলতে পারে না। এর পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। সেগুলো বললে বোঝা যাবে এটা দূর করাটা কত কঠিন। প্রথমেই রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থার কাজ প্রকৃত মানুষ সৃষ্টি করা। পৃথিবীর সবখানেই শিক্ষাটা মানুষের চরিত্র গড়ে দেয়। আমরা ছোটবেলায় যে স্কুলে পড়তাম, সেটা যে খুব উন্নত স্কুল ছিল, বই-পত্রের খুব সমারোহ ছিল, তা কিন্তু নয়। কিন্তু, তখন সুনীতির চর্চা হতো। শিক্ষকরা বলতেন, “সদা সত্য কথা কহিবে”। ইমাম সাহেবরা বলতেন, “মিথ্যা বলবে না”। আবার আমাদের ধর্মগুরু যারা ছিলেন, তারা নীতি-নৈতিকতা মানতেন। আমাদের শিক্ষকরা নৈতিকতা মানতেন। পরিবারে সুনীতির চর্চা হতো। একজন ঘুষ খেলে সেটা সাংঘাতিক অপরাধ বলে বিবেচনা করা, সততাকে পুরস্কৃত করা, এগুলো ছিল। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর সংস্কৃতি ছিল। কিন্তু, এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটাকে ইচ্ছা করেই বাজারের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাজারের তো কোনো সংস্কৃতি নেই, কোনো নৈতিকতা নেই।’
‘বাজারের নীতি হচ্ছে— শ্রমিক শোষণ করে, কালোবাজারি করে, দুই নম্বরি জিনিস মিশিয়ে দিয়ে হোক বা যেভাবেই হোক মুনাফা বাড়াতে হবে। এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা এই বাজারের হাতে চলে যাওয়ায় অবস্থাটা হয়েছে এরকম যে, চাকরি করো, চাকরিতে গিয়ে যত পারো পয়সা কামাও। এখন কেউ ভাবেনা বিজ্ঞানী হবে, শিক্ষক হবে, লেখক হবে। সবাই ভাবে চাকরি করবে। এর মধ্যে বিসিএস দিতে পারলে তো আরও ভালো। এ কারণে জনসেবার বিষয়টি নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই যে মহামারির সময়ে আমরা দেখছি, একটা শ্রেণির চিকিৎসক জীবন দিয়ে দিচ্ছেন। আদর্শ চিন্তা তাদের ভেতরে আছে। আবার অনেক চিকিৎসককে দেখেছি, তারা বাড়িতে লুকিয়ে আছেন। নিজেদের নিরাপদে রেখেছেন। কারণ, ইতোমধ্যে তারা টাকা বানিয়ে ফেলেছেন। কেন এমনটা হচ্ছে? এর পেছনে রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। যদি পরীক্ষার্থী তৈরি না হয়ে শিক্ষার্থী তৈরি হতো, যদি পরীক্ষাটাও আনন্দদায়ক হতো, যদি নৈতিকতার শিক্ষাটা দেওয়া হতো, যদি ছেলে-মেয়েরা বইপত্র পড়তো, তাহলে আমার মনে হয় পরিবারের ভেতরে সংস্কৃতির চর্চাটা আসতো। তাহলে এগুলো হতো না।’
‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে— যদি রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকল্প হতো যে আমরা দুর্নীতিকে বরদাশত করব না এবং সেইভাবে যদি কাজ করা হতো, তাহলে আমার মনে হয় দুর্নীতিটা অনেকটাই নির্মূল করা যেত। আমাদের তো শুধুই ভবিষ্যৎ কাল নিয়ে কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে কোনো রকমের বিচ্যুতি সহ্য করা হবে না ভবিষ্যতে। তো আপনারা করে দেখান। এই যে এতগুলো ত্রাণ লুটপাট হলো, এর কারণে জনপ্রতিনিধিদের শুধু বরখাস্ত করা হলো। কিন্তু, তাদেরকে তো গুরুতর অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা উচিত ছিল। যারা সাহেদের (রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান) মতো, সাত দিন লাগল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসতে। তিনি কোথায় লুকিয়ে আছেন, কার আশ্রয়ে আছেন, আমরা তাও জানি না। এখন সাহেদের হাসপাতাল থেকে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, সেখানে যদি এমন হয় যে অন্তত ১০ জন করোনা পজিটিভ রোগীকেও নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, তাহলে তো তারা অন্যদের সংক্রমিত করেছে। এর মধ্যে থেকে যদি একজনও মারা গিয়ে থাকে, তাহলে তিনি (সাহেদ) তো হত্যাকারী। অথচ রাষ্ট্র তার প্রতি নরম। বিপরীতে কাজলসহ আমাদের অন্যান্য সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট তাদেরকে ধরে জেলে দেওয়া হয়েছে। টিআইবিকে ক্রমাগত গালিগালাজ করা হচ্ছে। তাদের অপরাধ, তারা দুর্নীতির মুখোশটা তুলে ধরছে। কিন্তু, টিআইবি তো দুর্নীতির ছোট একটা অংশ মাত্র তুলে ধরতে পারছে।’
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্নীতি নির্মূলে যে সংস্থাগুলো আছে, এগুলোকে আমরা ক্ষমতায়িত না করে যদি মুখ বন্ধ করে রাখতে চাই, তাহলে তো দুর্নীতি যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদেরকে শক্র ভাবা হচ্ছে। দুর্নীতি নির্মূলে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে শিক্ষা। অথচ এটার ব্যবহার না করে আমরা বাজারের হাতে তুলে দিচ্ছি। এখন তো মনে হচ্ছে, শিক্ষকদের মধ্যে যে আদর্শ ছিল, তাও গেছে। তাদেরকে জোর করে গাইড বই-কোচিং বাণিজ্যে নামানো হচ্ছে।’
‘শিক্ষানীতিতে কী করা হলো? নোট বই নিরুৎসাহিত করা হলো। যেখানে আইন করে দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না, সেখানে নিরুৎসাহিত করে কি করে দুর্নীতি থামানো যাবে? এসবের কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা শেষ। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। শুধু টাকা-পয়সা নয়, এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ মানুষের ক্ষতি করার সব রকমের চেষ্টা।’
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছাড়া এটি নির্মূল সম্ভব। করোনার ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, একজনের গলাব্যথা-কাশি, তারপর শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। আমাদের সমাজেও এই অবস্থা। এখন গলাব্যথা-কাশি চলছে, কিন্তু এখনো শেষ সময়টা আসেনি। যদি এখনই আমরা প্রস্তুত না হই, যদি যত্ন না করি, তাহলে আমি মনে করি আমাদের সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব না।’
‘যারা দুর্নীতিবাজ, অর্থাৎ আমরা যাদের দেখছি, তাদের পিঠে হাত রেখে যারা দাঁড়িয়ে আছে, তাদের একজনকেও চিহ্নিত করা হয়নি। টিআইবির হিসাব অনুযায়ী, বেশি হলে এক থেকে দুই শতাংশ দুর্নীতিবাজ শাস্তি পেয়েছি। আর তারা হচ্ছে চুনোপুঁটি। রাঘব-বোয়ালরা এর বাইরে। আমি সরকারের সমালোচনা করছি না। যে সরকারই এসেছে, প্রত্যেকেই একইভাবে দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান করেছে এবং করছে।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আসলে মূল কারণ চারটি। প্রথমে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আদর্শায়িত শিক্ষার একটা সম্ভাবনা ছিল যখন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন করা হলো। বঙ্গবন্ধু সেই স্বপ্নই দেখতেন। সেই শিক্ষাব্যবস্থা বেসরকারি খাতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষাব্যবস্থাটা এখনো পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, আমাদের যারা তৃনমূলে রাজনীতি করতেন, তারা ভালো মানুষ ছিলেন। সেই রাজনীতি এখন চলে গেছে যারা পয়সা দিয়ে রাজনীতি করছে, তাদের কাছে। ফলে সেই রাজনীতি মানুষের কাজে লাগছে না। তৃতীয়ত, পরিবারগুলোর ভেতরেও সংস্কৃতির চর্চা না হওয়া। যে কারণে সেখানে নৈতিকতার ব্যাপারটি আসে না। আর সবশেষে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো— বিচারহীনতার সংস্কৃতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, যদি প্রশাসনের নানান স্তরের দুর্নীতিবান্ধব একটা চিত্র সবার সামনে ভেসে থাকে, যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়, তাহলে যে মানুষটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেন, তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবেন। আর যার ভেতরে সামান্য লোভ ছিল, তিনি এখন বেশি লোভে পড়ে যাবেন।’
‘আইন সংস্কারের প্রয়োজন তো নেই। আইন আমাদের যথেষ্ট আছে। এখন সরকার যদি সংকল্পবদ্ধ হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংকল্পবদ্ধ হয়, তাহলে এখনো মনে করি আমাদের সুযোগ আছে। দুর্নীতির চক্র থেকে আমরা বের হতে পারব। একবার যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা ভাঙতে পারি, একবার যদি রাঘব-বোয়ালদের নিয়ে এসে আমরা বিচারের অধীনে আনতে পারি, বেশি না ২০-২৫ জন বড় বড় রাঘব-বোয়ালের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে দেখবেন, এই দেশে দুর্নীতি হবে না’, যোগ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
Comments