আশিতে পা রাখলেন রশীদ হায়দার

ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল সিনেমার গেটকিপার হওয়ার। যখন একটু বড় হলেন, তখন মনে হলো ট্রেনের টিকিট চেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু, যার জন্ম হয়েছে সাহিত্যর জন্য, সংস্কৃতির জন্য, তার কি আর সিনেমার গেটকিপার বা ট্রেনের চেকার হওয়ার সুযোগ আছে?
রশীদ হায়দার। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল সিনেমার গেটকিপার হওয়ার। যখন একটু বড় হলেন, তখন মনে হলো ট্রেনের টিকিট চেকার হয়ে ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু, যার জন্ম হয়েছে সাহিত্যর জন্য, সংস্কৃতির জন্য, তার কি আর সিনেমার গেটকিপার বা ট্রেনের চেকার হওয়ার সুযোগ আছে?

ভাগ্যিস হননি। তাহলে বাংলা সাহিত্য হারাত তার অমূল্য সব সৃষ্টি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথার অনেক গল্পই থেকে যেত অজানা। যিনি গত প্রায় ৬০ বছর যাবৎ বাংলা সাহিত্যকে দুহাত ভরে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি রশীদ হায়দার।

স্মৃতি : ১৯৭১— বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক গ্রন্থ। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে স্মৃতিকথা লিখিয়ে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন রশীদ হায়দার। স্মৃতি : ১৯৭১ গ্রন্থের ১৩ খণ্ডে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বুদ্ধিজীবীদের স্বজনদের স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথার পাশাপাশি তাদের স্বজন হারানোর ব্যথা আর তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রামের জীবনকথা।

কিন্তু, লেখালেখির শুরু সেই ১৯৬২ সাল থেকে। ১৯৬৭ সালে ১ জানুয়ারি প্রকাশিত হয় লেখকের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নানকুর বোধি’। ১৯৭২ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লেখা শুরু করেন জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘গন্তব্যে’। অর্ধেক মুদ্রিত হওয়ার পর কোনো এক অজানা কারণে লেখাটি তিনি আর শেষ করতে পারেননি। ১৯৮৬ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস আকারে ‘অসম বৃক্ষ’ নামে প্রকাশিত হয়।

তারপর থেকে তিনি গল্প-উপন্যাস-নাটক-অনুবাদ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা ও সম্পাদনা সব মিলিয়ে ৭০ এর অধিক বই রচনা করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০১৪), হুমায়ুন কাদির পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

১৯৪১ সালের এই দিনে (১৫ জুলাই) পাবনার দোহাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রশীদ হায়দার। পরিচিতি রশীদ হায়দার নামে হলেও তার পুরো নাম শেখ ফয়সাল আবদুর রশীদ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন হায়দার। ডাকনাম দুলাল। 

১৯৫৯ সালে গোপালগঞ্জ ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬১ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি।

বড় ভাই জিয়া হায়দারের উৎসাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তিনি কাজ শুরু করেন চিত্রালী পত্রিকাতে। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের মুখপত্র পরিক্রম পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে চাকরি শুরু করেন এবং ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমির পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেন। পরে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।

এখন পুরোপুরি অবসর। বেশ কয়েক মাস যাবৎ শয্যাশায়ী। লেখালেখি করতে পারেন না। পারেন না কথা বলতেও।

আজ রশীদ হায়দারের জন্মদিন। তিনি আজ ৮০ বছরে পা রাখলেন। এই গুণী লেখককে জন্মদিনে শুভেচ্ছা। প্রার্থনা আবার সুস্থ হবেন, কলম তুলে নেবেন হাতে।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

53m ago