অপর্যাপ্ত ত্রাণে দুর্ভোগে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বানভাসি

ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকের সাথে সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন ৯০ বছর বয়সি তমিজন বেওয়া। অন্য বানভাসিরা সড়কের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকলেও তমিজন বেওয়ার ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি এলে তিনি ছুটে যান অন্যের ঝুঁপড়িতে।
ঘরবাড়ি ডুবেছে বন্যায়। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন রেললাইনের ওপর। ছবি: এস দিলীপ রায়

ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকের সাথে সরকারি রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন ৯০ বছর বয়সি তমিজন বেওয়া। অন্য বানভাসিরা সড়কের ওপর পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকলেও তমিজন বেওয়ার ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। বৃষ্টি এলে তিনি ছুটে যান অন্যের ঝুঁপড়িতে।

কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকায় সড়কের ওপর খেয়ে না থেয়ে দিন কাটছে তমিজনের। তিন ছেলের সবাই বানভাসি। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে আলাদা থাকেন। কেউ খোঁজ রাখেন না বৃদ্ধা মায়ের।

বয়স্ক ভাতার টাকা আর মাঝে মাঝে ভিক্ষাবৃত্তিতে জীবন চলে তমিজনের। নিজের বলতে একটি ছোট টিনের ঘর আর চার শতাংশ জমি। থাকতে হয় এক কাপড়ে। 

গতকাল শুক্রবার বিকালে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সকালে এক মুঠো পান্তা ভাত খেয়েছেন। দুপুরে জোটেনি কোন খাবার। রাতের বেলা কী খাবেন তারও নেই নিশ্চয়তা। বানভাসি হয়ে রাস্তার ওপর ছয় দিন ধরে আছেন কিন্তু মিলেনি কোন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা।

‘হামার খবর কাইও না ন্যায়। মুই কি খাং কি না খাং কাইও সে খবর ন্যায় না। মুই খোলা আকাশের নিচোত পড়ি আছং,’ এভাবে জানালেন তমিজন বেওয়া। 

চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের জুম্মপাড়ায় সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ৯০ বছরের তমিজন বেওয়ার। ছবিটি গতকাল শুক্রবার বিকেলে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

‘মোর খালি এ্যাকনা কাপোড়। এ্যাকনায় ভিজাং এ্যাকনায় শুকাং। কাই মোক কাপোড় দ্যায়,’ কষ্ট নিয়ে জানালেন তিনি।

তমিজনের প্রতিবেশী বানভাসি কালাম হোসেন (৫৬) বলেন, তারা সবাই বাড়ি-ঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই বানভাসি, পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে রয়েছেন, তাই কেউ কারো খোঁজ নিতে পারছেন না। সবাই সবার মতো করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। কষ্টে থাকলেও মিলছে না কোন সাহায্য সহযোগিতা।

বানভাসি রেফুনা বেগম (৪৮) জানান, তারাও কষ্টে আছেন। কষ্টের মাঝেও তমিজনকে দু’মুঠো অন্ন দিয়ে সহায়তা করছেন। সবাই ঝুঁপড়ির মধ্যে রাত কাটালেও তমিজনকে রাত কাটাতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। তার নিজের কোন সামর্থ্য নেই রাস্তার উপর পলিথিন দিয়ে ঝুঁপড়ি ঘর তৈরি করার। বৃষ্টি আসলে তিনি কারো না কারো ঝুঁপড়িতে ছুটে আসেন।

তমিজন বেওয়ার মতো করুণ চিত্র ব্রহ্মপুত্রপাড়ের বানভাসিদের। কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বানভাসিরা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, সরকারি রাস্তা, বাঁধ এবং রেল লাইনের উপর আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রায় সবার ঘরেই খাবারের কষ্ট।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে ৪০ হাজারের মতো মানুষ রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। 

চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে এবং তা বিতরণও করা হয়েছে। 

তার ইউনিয়নের প্রায় আশি শতাংশ এলাকা বন্যা কবলিত বলে জানান তিনি। 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান শাহ বলেন, ব্রহ্মপুত্রপাড়ে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রথম দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দ্বিতীয় দফা বন্যা আসায় তাদের বেশি কাবু করে ফেলেছে। সকল বানভাসি পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago