নন্দিত হূমায়ুন আহমেদ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক, তুমুল জনপ্রিয় নাট্যকার, সফল চলচ্চিত্রকার হূমায়ুন আহমেদ এর আজ অষ্টম প্রয়ান দিবস। মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে আজকের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।
হূমায়ুন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

নন্দিত কথাসাহিত্যিক, তুমুল জনপ্রিয় নাট্যকার, সফল চলচ্চিত্রকার হূমায়ুন আহমেদ এর আজ অষ্টম প্রয়ান দিবস। মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে আজকের এই দিনে তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন।

হুমায়ুন আহমেদকে বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী কথাসাহিত্যিক বলা হত তার জীবদ্দশায়। লেখালেখি করে তিনি পেয়েছিলেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। তার নতুন বই মানেই নিমিষেই হাজারো কপি বিক্রি হওয়া। এদেশের পাঠকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেন তার নতুন বইয়ের জন্য।

আবার নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন অন্যতম সফল। হঠাৎ করে এলেন সিনেমা নির্মাণে। সেখানেও সফল। সবাই বলত, তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলত।

শহুরে জীবনে থেকেও বৃষ্টির প্রতি ছিল তার গভীর ভালোবাসা। বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থেকেই হূমায়ুন আহমেদ নিজের একটি বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘বৃষ্টিবিলাস’। ওই বাড়িটি এখনো আছে নুহাশপল্লীতে। বৃষ্টিবিলাস নামে তার একটি উপন্যাসও আছে।

জোছনার প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে তিনি লিখেছেন অনেক বই। জোছনা রাত উপভোগ করার জন্য নুহাশপল্লীতে কাছের মানুষদের নিয়ে সময় কাটাতেন। সবুজ ঘাসের ওপর হেঁটে হেঁটে জোছনা দেখতেন আর মুগ্ধ হয়ে ভাবতে থাকতেন।

জল জোছনা নামে রয়েছে তার একটি উপন্যাস। মৃত্যুর আগে চন্দ্রসখা নামে একটি উপন্যাসও লিখতে চেয়েছিলেন। অন্বেষা প্রকাশন থেকে বইটির প্রচ্ছদও ছাপা হয়েছিল, কিন্ত বইটি লিখে যেতে পারেননি তিনি।

আর ছিল তার সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা ও টান। সমুদ্র বিলাস নামেও তার একটি উপন্যাস আছে। আবার সমুদ্রের প্রতি তীব্র টান থাকার কারণে সেন্টমার্টিনে একটি বাড়িও করেছিলেন। সেই বাড়ি আজও আছে।

বৃক্ষের প্রতি কতটা মমতা ছিল তার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নুহাশপল্লীর শত শত দেশি-বিদেশি বৃক্ষই তার প্রমাণ। হূমায়ুন আহমেদ যেখানেই যেতেন নতুন নতুন গাছের চারা নিয়ে আসতেন এবং সেসব রোপন করতেন নুহাশপল্লীতে।

একবার তার শখ হয়েছিল চা বাগান এবং খেজুর বাগান করার। অল্প পরিসরে নুহাশপল্লীতে চা বাগান ও খেজুর বাগান শুরু করেন এবং সফলও হন।

হূমায়ুন আহমেদ সব সময় মনে করতেন জগত রহস্যময়। যার ফলে জগতে রহস্যময় অনেককিছু ঘটে। অনেক বইয়ে এই কথাটি আছে যে জগত রহস্যময়। ভৌতিক ব্যাপার নিয়ে তিনি মজা করতে পছন্দ করতেন। নুহাশপল্লীতে নতুন অতিথি গেলেই মজা করে ভয় ধরিয়ে দিয়ে বলতেন, ‘এখানে ভূত আছে!’

ভূত বিলাস নামে একটি ঘরও আছে নুহাশপল্লীতে। সুন্দর ডিজাইনের ঘরটিতে রাতের বেলা বারান্দায় বসে সময় কাটাতেন নন্দিত এই লেখক।

হূমায়ুন আহমেদ ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। সময় পেলেই তিনি এই কাজটি করতেন আনন্দ নিয়ে। বিশেষ করে দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিদের ছবি এবং প্রকৃতির ছবি তুলতে ভালোবাসতেন।

ছবি আঁকতেও ভালোবাসতেন হূমায়ুন আহমেদ। দখিন হাওয়ায় তার একটি ছোট্র ঘর ছিল। ওই ঘরে বসে আঁকাআঁকির কাজটি করতেন। ছবি আঁকার জন্য রং তুলি সব সময় রাখতেন নিজের সঙ্গেই। লেখালেখির মাঝে কখনো কখনো সময় ঠিকই বের করতেন ছবি আঁকার জন্য।

লেখকদের সঙ্গে হূমায়ুন আহমেদের সবচেয়ে বড় পার্থক্য ছিল- তিনি কখনো  চেয়ার-টেবিলে বসে লিখতেন না। প্রযুক্তির যুগে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারেও লিখতেন না। তিনি লিখতেন মেঝেতে বসে। সারাজীবন ধরে মেঝেতে বসেই লেখালেখির কাজটি করে গেছেন। রাত জেগেও তিনি লিখতেন না। তার লেখার সময় ছিল সকাল থেকে দুপুর।

দলবল নিয়ে বেড়াতে পছন্দ করতেন এই মানুষটি। সেটা কি দেশ, কি বিদেশ। তার সফরসঙ্গি হয়েছিলেন আরেক খ্যাতিমান লেখক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘হূমায়ুন ভাইয়ের ছিল বিশাল একটা মন। তিনি খরচ করতেন দুই হাতে। সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন।’

যেখানেই যান আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন হূমায়ুন আহমেদ। তার দখিন হাওয়ায় নিয়মিত আড্ডার কথা অনেকেরই জানা। এমন এক আড্ডা থেকেই পরিচয় হয়েছিল প্রয়াত অভিনেতা এএসএম তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। সেই আড্ডাতেই হূমায়ুন আহমেদ তার নাম দেন চ্যালেঞ্জার।

একবার হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে সফরসঙ্গি হওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। মুন্সীগঞ্জের জাপান বাড়ি নামের একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। রাতভর আড্ডা দেওয়ার পরেও ভোরবেলা উঠে ঠিকই হাঁটতে বের হয়েছিলেন।

শুধু কী জীবদ্দশায় এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঠকপ্রিয় লেখক ছিলেন তিনি? তার মৃত্যুর পরও পাঠকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েই আছেন তিনি। এখনো একুশে বই মেলায় তার বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

অবাক করা তথ্য- এদেশে লেখালেখির জন্য হূমায়ুন আহমেদই সবচেয়ে বেশি সম্মানী নিতেন।

আট বছর হলো তিনি নেই। কিন্ত তার অসংখ্য বই, টিভি নাটক, সিনেমা, গান রয়ে গেছে।

নন্দিত নরকে উপন্যাস দিয়ে লেখক জীবনের সূচনা করেছিলেন তিনি। দেয়াল নামের রাজনৈতিক উপন্যাস দিয়ে লেখালেখির ইতি টানেন।

তারপর পরাজিত হন ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির কাছে। কিন্তু পাঠকের কাছে তিনি কোনোদিনও পরাজিত হননি। বাংলা ভাষার পাঠকরা তাকে পরম মমতায় ভালোবেসে চলেছেন ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আজও তিনি সবার কাছে নন্দিত হূমায়ুন আহমেদ।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

5m ago