যখন যেটা করি, ভালো লাগা থেকে করি: আফজাল হোসেন
বাংলাদেশে অভিনয় জগতে যে কয়জন বয়সটাকে দিনের পর দিন তারুণ্যে বন্দি করে রেখে চলেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম আসবে, তিনি চিরসবুজ অভিনেতা ও নির্দেশক আফজাল হোসেন। বয়সটাকে তিনি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ফ্রেমে বেঁধে রাখতে পেরেছেন। যে কারণে ৬৫ বছর পেরোলেও আজও তিনি তরুণ। ভুল কিছু শোনেননি, ৬৫ বছর পেরিয়েছে তার বয়স।
অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকার, পরিচালক, উপস্থাপক, মডেল, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, লেখালেখি কিংবা আঁকাআঁকি— সর্বত্রই সফল। যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন।
সত্তর দশকের শেষের দিকে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন তিনি। আশির দশকের টেলিভিশন নাটকের এক জনপ্রিয় নাম আফজাল হোসেন। মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করেছেন এই তারকা। আজও তরুণদের ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনুসরণীয় হয়ে রয়েছেন আফজাল হোসেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বহুগুণে গুণান্বিত শিল্পী আফজাল হোসেন ১৯৫৪ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন মফস্বল শহর সাতক্ষীরাতে। তারপরে জীবন-জীবিকার টানে ঢাকায়। আজকে জন্মদিনে এই গুণী মানুষের মুখোমুখি দ্য ডেইলি স্টার।
জন্মদিন নিয়ে এবারের পরিকল্পনা কী?
আফজাল: জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। অতীতেও কখনো ছিল না। একবার শুধু ঢাকা থিয়েটার আয়োজন করেছিল। আর এ ছাড়া চ্যানেল আই মনে রাখে আমার জন্মদিন আর তারা পালন করে।
নিজে কখনো কোনো পরিকল্পনা করে জন্মদিন উদযাপন করি না বা সেরকমভাবে করা হয় না। তবে হ্যাঁ, বাসায় পরিবার-পরিজনদের গেট-টুগেদার হয়। এই যা।
ছোটবেলার জন্মদিনের কোনো স্মৃতি আজও মনে পড়ে?
আফজাল: মফস্বলে বড় হয়েছি। তাই ছোটবেলায় জন্মদিন বলতে কিছু ছিল না। এমনকি অনেকটা বড় হওয়ার পরে জন্মদিনের বিষয়টা মাথায় আসে। তাই ছোটবেলার জন্মদিনের কোনো স্মৃতি নেই। তবে হ্যাঁ, ছাত্রজীবন আমার জন্মদিনে আমি একটা লেখা লিখতাম। আর তা ছিল মানুষকে নিয়ে। তবে, পরবর্তীতে জেনেছি সেটা আমার ভুল জন্মদিন।
এক জীবনে অভিনয়, নির্দেশনা, পরিচালনা, উপস্থাপনা, মডেলিং, বিজ্ঞাপন নির্মাণ, লেখালেখি কিংবা আঁকাআকিঁ— মোটামুটি সবই করেছেন। কিন্তু, কোন কাজটা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আফজাল: আমি আমার জীবনে একটানা কোনো কিছু করিনি। যখন অভিনয় করেছি, তখন অভিনয়ের সময়ে লম্বা বিরতি দিয়েছি। মাঝে মাঝে এমন হয় প্রতিদিন কবিতা লিখছি আবার কখনো কখনো এমন হয় যে মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু একটা লাইনও লিখি নাই।
আমার কাজ মানে স্বতঃস্ফূর্ততা। যেহেতু আমার কোনো লক্ষ্য নেই যে বিশেষ কিছু হতে হবে, তাই নিজের কাছে যেটা ভালো লাগে, যেটা উপভোগ্য, সেটাই করি। শুধু মাথায় রাখি আমি যেই কাজটা করছি সেটা যেন অন্যের কাজে লাগে এবং অন্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তবে, যখন যেটা করি, সেটা ভালো লাগা থেকে করি, পুরোটা দিয়ে করি।
করোনার এই সময়ে অখণ্ড অবসর? অবসর সময় কাটছে কীভাবে?
আফজাল: করোনার এই সময়ে বন্দি অবস্থাটা অস্বস্তিকর। খারাপ লাগে যে প্রিয় মানুষের সঙ্গে দেখা হয় না। তবে, পরিবারের সঙ্গে এভাবে সময় কাটানো তো কখনো হয়নি। এটা একটা বাড়তি প্রাপ্তি। লেখালেখি, আঁকাআঁকি করে দিন যাচ্ছে। এত কাজ করছি যে দিনটাকে খুব ছোট মনে হয়।
জীবনের কোনো অপ্রাপ্তি?
আফজাল: আমি তো আগেই বলেছি, আমার জীবনে কোনো লক্ষ্য নেই। তাই প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তির হিসাবও নেই। আমি যখন যেটা করেছি, উপস্থাপনা, অভিনয়, আঁকাআঁকি বা লেখালেখি— শুধু মাথায় রেখেছি মানুষ। আমার প্রাপ্তি বলতে এটাই যে আমার কাজ মানুষকে ভাবায় বা মানুষ দেখে ভাবে।
এই বয়সেও এতটা তরুণ। রহস্য কী?
আফজাল: আমি কখনো বয়সের কথা মনে করি না বা মাথায়ও আসে না। আমি আজ থেকে ২০ বছর আগে যা পারতাম, এখনো তা পারি। তাই বয়সের চিন্তা আমার মাথা আসে না। তবে, বয়স আমাকে চিন্তা-ভাবনায়, কাজেকর্মে পরিণত করেছে, সেটা বয়সের প্রাপ্তি। এটা ছাড়া বয়সের কোনো প্রভাব নেই আমার জীবনে।
সামনে যে কাজটা করতে চান?
আফজাল: যেহেতু লক্ষ্য নেই, তাই ওই অর্থে পরিকল্পনা নেই। লক্ষ্য থাকলে মানুষ পরিকল্পনা করে। তবে, হ্যাঁ, আমার মনে হয়েছে ছবি আঁকাটা কম করেছি, তাই সেখানে একটু বেশি মনোযোগ দেবো। দেশে ছবির কোনো এক্সিবিশন করিনি, সেটা করার ইচ্ছা আছে। আর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন একটা ছবি বানানোর। সেই কাজটা করতে চাই।
Comments