শীর্ষ খবর

জেকেজি’র সিইও বলছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও প্রতারণায় সম্পৃক্ত

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরীকে করোনার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের চুক্তিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে।
jkg booths
রাজধানীর মহাখালীতে তিতুমীর কলেজ প্রাঙ্গণে জেকেজি হেলথ কেয়ারের অব্যবহৃত বুথ। ছবি: রাশেদ সুমন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই অতিরিক্ত সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল চৌধুরীকে করোনার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের চুক্তিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশের তদন্তে আরিফুল এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে সরকারের দেওয়া ৫০০ কোটি টাকার একটি অংশ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেই কর্মকর্তারা।

তদন্তের সংগে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই দুই কর্মকর্তা আরিফুলকে প্রস্তাব জমা দিতে বলেছিলেন।’

তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জেনেছেন যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ভুয়া রেজাল্ট দিয়ে জেকেজি মানুষের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আরিফুল সেই টাকা ব্যাংকে জমা দেননি। তিনি সেই টাকা কয়েকজনের কাছে রেখেছিলেন।

‘আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করেছি। টাকা উদ্ধারে শীঘ্রই অভিযানে নামবো,’ বলেন সেই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

সরকারি কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা তাই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রয়োজন।’

তিনি সেই কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান।

আরিফুলের স্ত্রী ও জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তিনি তার “ফেস ভ্যালু”র সুযোগ নিতেন।’

‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অনেক অফিসে সারবিনার যোগাযোগ ছিল’ বলেও জানান তিনি।

সাবরিনার গ্রেপ্তারের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্ডিয়াক সার্জন সারবিনাকে ‘নিয়ম ভাঙার’ জন্যে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রারের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবরিনার স্বামীর মালিকানাধীন ওভাল গ্রুপ সাবরিনার লবিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস থেকে কাজ পেয়েছিল।

২০১৫ সালে জেকেজি দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওভাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেকেজি কাজ করছে এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা পাননি।

করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পাওয়ার সময় জেকেজির কোনো ট্রেড লাইসেন্স ছিল না বলেও তারা জানান।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, তখন জেকেজির লাইসেন্স পরীক্ষা করা হয়নি। কেননা, তাদেরকে ভলেন্টারি সার্ভিস হিসেবে শুধু বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

জেকেজি গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পাওয়ার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও অন্যান্য স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করে তারা বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করতো।

পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে যে প্রতিষ্ঠানটি টাকার বিনিময়ে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করছে যদিও এ কাজে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এই জালিয়াতির সংবাদ সবাই জানতে পারেন ২৪ জুন যখন তেজগাঁও পুলিশ ভুয়া কোভিড-১৯ পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার অভিযোগে ওভাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আরিফুলসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, যদিও কারো বাড়ি থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করার অনুমতি জেকেজি হেলথ কেয়ারকে দেওয়া হয়নি তবুও তারা দুটি অনলাইন প্লাটফর্ম ‘বুকিং বিডি’ ও ‘হেলথ কেয়ার’র মাধ্যমে এ কাজ করতো।

এই কাজের জন্যে তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও বিদেশিদের কাছ থেকে ১০০ ডলার নিতো।

তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বাড়ি থেকে নেওয়া সব নমুনা পরীক্ষার ফল ছিল ভুয়া।

সাবরিনা ও আরিফুলকে দ্বিতীয় বারের মতো রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। সাবরিনার রিমান্ড গতকাল শেষ হয় এবং আরিফুলের রিমান্ড আজকে শেষ হওয়ার কথা।

পুলিশ জানিয়েছে তারা আবারও আরিফুলের রিমান্ডের জন্যে আবেদন করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Onions sting

Prices of onion increased by Tk 100 or more per kg overnight as traders began stockpiling following the news that India had extended a virtual restriction on its export.

10h ago