‘গানের কথা আমার মনে ঐশ্বরিকভাবে আসে, আমি লিখি না’

পুরো নাম বক্সি প্রকাশ আনন্দ বৈদ। বলিউডের অন্যতম সফল গীতিকার। যদিও তার স্বপ্ন ছিলো গায়ক হওয়ার। ‘চরস’ নামে একটি ছবিতে গেয়েও ছিলেন। কিন্তু, গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করতে না পারলেও গান লিখে জয় করে নিয়েছেন শ্রোতাদের। তার গাওয়া ‘হান যাব হাম যাওয়া হোঙ্গে’ খুব হিট হয়েছিল।
anand-bakshi
আনন্দ বক্সি। ছবি: সংগৃহীত

পুরো নাম বক্সি প্রকাশ আনন্দ বৈদ। বলিউডের অন্যতম সফল গীতিকার। যদিও তার স্বপ্ন ছিলো গায়ক হওয়ার। ‘চরস’ নামে একটি ছবিতে গেয়েও ছিলেন। কিন্তু, গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করতে না পারলেও গান লিখে জয় করে নিয়েছেন শ্রোতাদের। তার গাওয়া ‘হান যাব হাম যাওয়া হোঙ্গে’ খুব হিট হয়েছিল।

১৯৩০ সালের এই দিনে তৎকালীন রাওয়ালপিন্ডিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যেই মা হারান। বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। ছোটবেলায় একদিন গান করছিলেন আনন্দ, তাই দেখে তার দাদা তাকে মারেন, কারণ তার দাদা মনে করতেন খারাপ লোকেরা গান-বাজনা করে।

পড়াশুনায় মনযোগী না হওয়ায়, তিনি নৌবিহীনতে যোগ দিয়েছিলেন এই আসায় যে জাহাজ মুম্বাই আসলে তিনি ঝাঁপ দিয়ে জাহাজ থেকে পালিয়ে বলিউডে যাবেন গান করতে। কিন্তু, জাহাজ করাচিতে নোঙ্গর করে থাকার কারণে তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

যখন তার মাত্র ১৭ বছর বয়স তখন দেশভাগ হয়। দেশভাগের সময় তারা প্রথমে দিল্লি তারপর পুনে, পরে মীরাট হয়ে আবার দিল্লিতে এসে স্থায়ী হন।

তারপর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫০ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করেন।

এই যে বারবার তিনি হারিয়েছেন, সেই শোকই তার শক্তি ছিল, ছিল সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

১৯৫৬ সালের অক্টোবরের কোনো একদিন তিনি চলে আসেন মুম্বাই, বলিউডে গান গাইবেন এই মনস্থির করে।

মুম্বাই এসে তিনি প্রথমে হাজী আলি দরগাতে যান। একদিন বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণের জন্য প্রথমেই ধরা খেলেন টিকেট চেকারের হাতে। টিকেট চেকার চিত্রমল স্বরূপ আনন্দ বক্সির দূরাবস্থা দেখে তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং সাময়িক আশ্রয় দেন। তাও কয়েক বছরের জন্য।

ঐ সময় আনন্দ বক্সির স্ত্রী কমলা মোহান লৌখনো থাকতেন। সেলাই কাজ করে সংসার চালাতেন। ইতোমধ্যে তাদের ঘরে আসে প্রথম সন্তান সুমান। যখন আনন্দ বক্সি বাড়িতে গেলেন তখন তার মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘এই লোকটি কে?’ তারপর তিনি পুরো পরিবারসহ মুম্বাই চলে আসেন।

তিনি ‘ভালা আদমি’ ছবির জন্য চারটি গান লেখেন। কিন্তু, খুব আলোড়ন তুলতে পারেনি। ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তার প্রথম গান রেকর্ড হয়। তিনি সংগীতে সাফল্য পান ১৯৬২ সালে যখন ‘মেহেন্দি লাগি মেরি’ হাত রেকর্ড করেন।

তিনি ছিলেন শব্দের জাদুকর। শব্দ নিয়েই ছিল তার খেলা। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষণ ও প্রতিটি অনুভব নিয়ে তিনি গান লিখেছেন। সামসাদ বেগম থেকে শ্রেয়া ঘোষাল সবাই গেয়েছেন তার গান।

‘অমর প্রেম’, ‘শোলে’, ‘অমর আকবর এন্থনি’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবি তাকে এনে দেয় বিশাল খ্যাতি। পরবর্তীতে ‘ববি’, ‘তাল’, ‘ইয়াদিন’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবি বলিউডে তার আসন আরও পাকাপোক্ত করে।

আনন্দ বক্সি বলেছেন যে তার সমসাময়িক যেমন মজরুহ সুলতানপুরী কিংবা কাইফি আজমি, তারা ছিলেন কবি। ‘একজন কবি তার নিজস্ব কল্পনা থেকে লিখেন। আর আমি লিখি গল্প, চরিত্র বা ঘটনাকে অবলম্বন করে। গানের কথা আমার মনে ঐশ্বরিকভাবে আসে, আমি লিখি না।’

একদিন পরিচালক তনুজা চন্দ্রা এসে বললেন, ‘বক্সি সাহেব আমি আপনার কাজের খুব ভক্ত। কিন্তু, বাজেট কম তাই ‘দুশমন’ ছবিতে কাজ করার জন্য বলতে সাহস পাচ্ছি না।’ শুনে বক্সি বললেন, ‘আমার কাজের মূল্য নির্ধারণ করার তুমি কে? প্রথমে আমাকে অনুপ্রাণিত করো তোমার কাজ দিয়ে।’

বক্সি চারবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার জিতেন। পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে প্রায় ৬০০ ছবিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গান লিখেছেন তিনি।

তার শখ ছিল গাড়ি কেনা। প্রতি দুবছর পর পর গাড়ি বদলাতেন। তিনি হুইস্কি পছন্দ করতেন। প্রতিদিন ঠিক নয়টায় হুইস্কির বোতল খুলতেন। তিনি যখন মদ পান করতেন তখন লিখতেন না। তিনি বলতেন, ‘কলম হলো দেবী সরস্বতী।’

তিনি ছিলেন চেইন স্মোকার। সারাক্ষণ মুখ থেকে ধোয়া বের হতো। তাই হয়তো তিনি লিখতে পেরেছেন ‘দম মারো দম’। এই এক গানেই তিনি চির স্মরণীয় হয়ে আছেন সংগীত পিপাসুদের মনে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago