বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

আরও ৭২ ঘণ্টা থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা

Sunamganj_Flood_21Jul20.jpg
ছবি: সংগৃহীত

মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় থাকায় আরও ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়া পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ থেকে ৮৮ মিলি মিটার) সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আগামী ৭২ ঘণ্টা সারা দেশে থেমে থেমে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হবে। উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সর্বোচ্চ ১২২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, যে কারণে মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। নদীবন্দরগুলোকেও এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুরমা ছাড়া দেশের সব নদীগুলোর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা নদীর পানির সমতল দ্রুত বাড়তে পারে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বেড়ে আজ সকাল থেকে ডালিয়া স্টেশনে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরিচা স্টেশনে যমুনার পানি তিন সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ ছাড়া, সিংড়ায় গুড় নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার; জামালপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার চার সেন্টিমিটার; নারায়ণগঞ্জে লাক্ষ্যার পানি তিন সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার; তারাঘাটে কালিগঙ্গার পানি ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার এবং জাগির স্টেশনে ধলেশ্বরীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

মাওয়ায় পদ্মার পানি এক সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার; সুরেশ্বরে পদ্মার পানি পাঁচ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার; কানাইঘাটে সুরমার পানি ৭৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার; সুনামগঞ্জে ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

সারিঘাট স্টেশনে সারিগোয়াইনের পানি ১৩৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার; দিরাইয়ে পুরাতন সুরমার পানি ছয় সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার; লরেরগড়ে যদুকাটার পানি ৬৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার এবং চাঁদপুরে মেঘনা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম স্টেশনে ধরলা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমেছে তবে এখনো বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় ঘাগট নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার; নুনখাওয়া স্টেশনে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ও চিলমারী স্টেশনে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফুলছড়ি স্টেশনে যমুনা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, বাহাদুরাবাদ স্টেশনে ১১ এবং সারিয়াকান্দিতে নয় সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ও ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাজিপুরে যমুনার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে আট সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গোয়ালন্দে পদ্মার পানি দুই সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার; বাঘাবাড়ি স্টেশনে আত্রাই, এলাসিনে ধলেশ্বরী ও ভাগ্যকূল স্টেশনে পদ্মার পানি অপরিবর্তিত আছে। বাঘাবাড়িতে আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, এলাসিনে ধলেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ও ভাগ্যকূলে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে চন্দ্রনাথ রায় নামে চার বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাইদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘চন্দ্রনাথ বেলতলী গ্রামের সুভাষ চন্দ্র রায়ের ছেলে। সকালে ছেলেটি বাড়ির উঠানে একাই খেলছিল। সবার অজান্তে বন্যার পানিতে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।’

Comments

The Daily Star  | English
VAT changes by NBR

Govt divides tax authority in IMF-backed reform

An ordinance published last night disbands NBR and creates two new divisions

1h ago