গোল্ডেন ভয়েস অব মুকেশ
বাবা-মার সঙ্গে গেছেন এক আত্মীয়ের বিয়ে বাড়িতে। ঐ আসরে এক কিশোর গান গেয়ে আসর মাতালেন। ঘটনাচক্রে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের বলিউড অভিনেতা মোতিলাল। তার ভালো লেগে গেল কিশোরের কণ্ঠ।
তিনি কিশোরকে পণ্ডিত জগন্নাথ প্রসাদের কাছে গান শেখার ব্যবস্থা করেন। দেখতে সুন্দর সেই কিশোর গান শেখার পাশাপাশি অভিনয়ও করতে চান। এক সময় এসে গেল সুযোগ। ‘নির্দোষ’ নামে একটি ছবিতে অভিনেতা ও গায়ক হিসেবে সুযোগ পান। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে। শুরু হয় গায়ক ও নায়কের পথ চলা। তবে তার শুরুটা খুব ভালো হয়নি।
১৯২৩ সালের এই দিনে দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন মুকেশ চন্দ মাথুর। বাবা লালা জরওয়ার চন্দ মাথুর ও মা চন্দ রানির ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। শৈশব থেকেই অভিনয় ও গানের প্রতি আগ্রহ ছিল তার।
ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন বিখ্যাত গায়ক কেএল সায়গলের ভাব শিষ্য। তাকে অনুকরণ করে গাইতেন। এমনকি, কোনো গানের আসরেও তিনি সায়গলের গান গাইতেন। যার কারণে তার ছায়া থেকে বের হয়ে নিজস্ব ধারা তৈরি করতে পারছিলেন না তিনি।
তবে বিখ্যাত অভিনেতা রাজ কাপুরের সুরে যখন গাওয়া শুরু করলেন, তখন মুকেশ আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বের হতে লাগলেন। ‘আগ’, ‘আওয়ারা’ ও ‘শ্রী ৪২০’ ছবিতে রাজ কাপুরের গলায় গান গেয়েছিলেন তিনি।
এর মধ্যে ‘মেরা জুতা হ্যায় জাপানি’ তো রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলছিল। শুধু ভারতে নয়, রাশিয়াতেও। তারপর ইতিহাস। জ্বী, জনাব, ইতিহাস।
বলিউডের জাঁদরেল অভিনেতা রাজ কাপুর যতগুলো গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন, সেগুলোর প্রায় সব কটি গানই গেয়েছেন মুকেশ। সে সময় চলছিল রাফি, মান্না দে, কিশোর কুমারদের স্বর্ণযুগ। তাদের মাঝে নিজের জায়গা করে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
১৯৭৩ সালে ‘রজনীগন্ধা’ ছবিতে ‘কাই বার ইউ হি দেখা হে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান মুকেশ। তাকে অভিহিত করা হয় হিন্দি সিনেমার ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন ভয়েস’ নামে।
তিনি তার ‘স্বর্ণ কন্ঠে’ যেভাবে দুঃখ, বেদনা, যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছিলেন তা ছিল অনবদ্য। মুকেশ চার বার সেরা গায়কের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।
খেয়ালি স্বভাবের মুকেশের গানের সংখ্যা মাত্র ১,৩০০। অন্যদের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম। তবে সংখ্যায় কম হলেও মানের দিকে থেকে অনেক উপরে। যার কারণে আজও মানুষ গুন গুনিয়ে তার গান গায় ‘কাভি কাভিমেরে দিলমে...।’
Comments