ট্রেনে কোরবানির পশু পরিবহনে আগ্রহী নয় ব্যবসায়ীরা
আম পরিবহনে ম্যাঙ্গো ট্রেন চালুর পর রেল মন্ত্রণালয় এবার কোরবানির ঈদে কোরবানির পশু পরিবহনের জন্য স্পেশাল ক্যাটেল ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য রেলওয়ের পশ্চিম জোনের পাকশি বিভাগের আওতায় দুটি ট্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে শুরুর আগেই শঙ্কার মধ্যে পড়েছে সরকারের এ উদ্যোগ।
কোরবানির ঈদের আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও রেল বিভাগ এসব ট্রেনে পশু পরিবহনের উদ্যোগ নিতে পারেনি। যদিও রেল কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, রেলে পশু পরিবহনের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। ব্যবসায়ীদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেলে যে কোনো সময় ক্যাটেল স্পেশাল সার্ভিস চালু করা হবে।
তবে, এই বিশেষ ট্রেন সেবা চালুর তারিখ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি রেল বিভাগ।
রেলওয়ে পশ্চিম জোনের পাকশি বিভাগীয় ম্যানেজার (ডি আর এম) আসাদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কোরবানির পশু পরিবহনে যানজটের ঝামেলা, বৃষ্টির হানা, সড়কে চাঁদাবাজি রোধ করে নিরাপদে পশু পরিবহন ও রেলকে লাভজনক করতে রেল মন্ত্রণালয় এ বছর ট্রেনে কোরবানির পশু (গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল) পরিবহনে ক্যাটেল স্পেশাল সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।’
এ জন্য পাকশি বিভাগের দুটি ট্রেন (প্রতিটি ট্রেনে ৫ টি পশু পরিবহনের বগি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাকশি বিভাগীয় পরিবাহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের যে সকল পশু প্রতি বছর কোরবানির সময় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে সড়কপথে পরিবহন করা হয়, সেসব পশু এ বছর বিশেষ ট্রেনে পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বগিতে ১৬টি গরু বা মহিষ এবং ৩০টি ছাগল বা ভেড়া পরিবহন করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি বগির ভাড়া ধরা হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি গরুর পরিবহন খরচ পড়বে ৭৫০ টাকা, ছাগল বা ভেড়ার পরিবহন খরচ পড়বে ৪০০ টাকা। রেলে পশু পরিবহনে পশুর সমস্যা হলে প্রাণী সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা পশুর চিকিৎসা করবে। ফলে নিরাপদে পশু পরিবহন করা যাবে।’
রেলওয়ে ইতোমধ্যে প্রাণী সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কোরবানির পশু পরিবহনকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রেনে পশু পরিবহনের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালালেও কোরবানির পশু পরিবহনকারীদের কাছ থেকে ট্রেনে পশু পরিবহনের জন্য আগ্রহ না থাকায় ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানান পাকশি বিভাগীয় ডি আর এম।
তবে, রেলওয়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ফলে ব্যবসায়ীদের সাড়া পেলে যে কোনো সময় সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের চারটি রেল স্টেশন মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশন, চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশন, পোড়াদহ রেল স্টেশন, কুষ্টিয়া রেল স্টেশন এবং উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেল স্টেশন থেকে সরাসরি ট্রেনে পশু পরিবহন করা হবে।
ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ট্রেনে পশু পরিবহন করতে আগ্রহী নয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গরু ব্যবসায়ী নুরনবী বলেন, ‘ট্রাকে পশু পরিবহন করতে খরচ কম হয়, পাশাপাশি গ্রাম থেকে পশু ট্রাকে তুলে নির্দিষ্ট হাটে পৌঁছানো অনেক সহজ। কিন্তু, ট্রেনে পশু পরিবহন করতে হলে গ্রাম থেকে পশু নিয়ে রেল স্টেশনে যেতে হয় এবং ট্রেন থেকে পশু নামানোর পর আবার অন্য বাহনে হাটে নিয়ে যেতে হয়। ফলে, পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। এ ছাড়া, বারবার বাহন বদলের ফলে এসব পশুর ভোগান্তি হয়। এ কারণেই ট্রেনে পশু পরিবহনে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী নয়।’
খুলনা বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৯৩ হাজার কোরবানির গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে এ বিভাগ থেকে প্রায় লক্ষাধিক কোরবানির পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় পরিবহন করেন ব্যবসায়ীরা।’
‘ট্রেনে কোরবানির পশু পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে, এখনও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারের এ উদ্যোগকে সফল করতে প্রাণী সম্পদ বিভাগ চেষ্টা করছে’, বলেন তিনি।
Comments