বাংলাদেশি দালাল বিষয়ে তদন্ত করবে ভিয়েতনাম

বাংলাদেশি দালালদের বিষয়ে তদন্ত করবে ভিয়েতনাম। (প্রতীকী ছবি, সংগৃহীত)

ভিয়েতনামে শ্রমিক পাঠানো বাংলাদেশি দালালদের বিষয়ে তদন্ত ও সেখানে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির সরকার। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

গত তিন দিন আগে দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি নিয়ে ভিয়েতনামের ভুং তাও থেকে এক হাজার ৬৭৭ কিলোমিটার দূরের হ্যানয়ে এসে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেয় ১৭ শ্রমিক। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ভিয়েতনাম সরকার এমন নির্দেশনা দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশি দালালদের বিষয়ে তদন্ত করতে এবং বিদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিয়েতনামের হো চি মিন, নি ডুওং ও ভুং তাও শহরের পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় যে কোম্পানিগুলো এই ১৭ বাংলাদেশির দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে তাদের ভিসা স্পন্সর করেছে এবং তাদেরকে ভুং তাও শহরে ফিরিয়ে নেবে, থাকার ব্যবস্থা করবে, কাজ দেবে ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হলে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করবে, সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কাজ করছে ভিয়েতনাম পুলিশ।

ভিয়েতনামে থাকা ওই ১৭ বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে একজন ফরিদুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই মাসের শুরুতে আমরা ভিয়েতনামে এসেছি। কিন্তু, আমাদেরকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি বললেই চলে। সম্প্রতি আমাদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক গণমাধ্যমে কথা বলায় আমরা ভুং তাওয়ের যেখানে থাকি সেখানকার পানির লাইন কেটে দিয়েছে আমাদেরকে এখানে আনা বাংলাদেশি দালালরা। একইসঙ্গে আমাদের পরিণতি মারাত্মক হবে বলে হুমকিও দিয়েছে।’

‘আমাদের সবার কাছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্ড রয়েছে। আমাদেরকে ভালো কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে...। আমরা বাংলাদেশি দালালদের বিভিন্ন ধরনের শোষণের শিকার হয়েছি। আমরা দেশে ফিরতে চাই’, বলেন তিনি।

ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এই ১৭ বাংলাদেশির ভিসা স্পন্সর করা কোম্পানিকে তাদের দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দিয়েছে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ।’

‘যদিও তারা (ওই ১৭ শ্রমিক) পালিয়ে এসেছে ও কোম্পানির নিয়ম ভঙ্গ করেছে, তবুও তাদেরকে কাজে ফিরিয়ে নেবে বলে কোম্পানি প্রতিনিধি আমাদেরকে ফোনে আশ্বস্ত করেছে। তাদের ভুং তাওয়ে ফেরার খরচ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা কোম্পানিই করবে। ওই শ্রমিকদের পাসপোর্ট, ভিসা ও কাজের অনুমোদনের পাশাপাশি অস্থায়ী রেসিডেন্স কার্ডও রয়েছে’, বলেন তিনি।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকে যতটুকু সম্ভব সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সহায়তা করছে হ্যানয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন।

মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, গত ২৫ মার্চ থেকে ভিয়েতনাম সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে। কিন্তু, হ্যানয়ের দূতাবাসের সামনে অবস্থান নিয়ে ওই ১৭ জন বাংলাদেশি তাৎক্ষণিক দেশে ফেরার দাবি জানিয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভ্রমণকারী হিসেবে ভিয়েতনামে গিয়েছেন, কাজের বৈধ ভিসা নিয়ে নয়।

‘দূতাবাস ওই ১৭ জনকে তাদের নিয়োগকারীদের (কোম্পানি) দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও ভিয়েতনাম সরকারের দেওয়া আশ্বাসের বিষয়টি জানালেও অজানা কারণে তারা সহযোগিতা করছে না। গত ৩ জুলাই থেকে সরকারি খরচে দেশে ফেরানোর দাবি যে বাংলাদেশিরা জানাচ্ছেন, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন। যা সমর্থনযোগ্য নয়। তারা কাজে ফিরে না যাওয়ার মানসিকতা এবং সরকারি খরচে তাৎক্ষণিক দেশে ফেরানোর দাবিতে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন’, বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, যেখানে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় প্রবাসীদের নিয়ে সরকার সচেতন, সেখানে তাদের নেতিবাচক কার্যক্রম যা দেশের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকারক, সেসব কার্যক্রম সরকার নিরুৎসাহিত করে।

Comments

The Daily Star  | English

How frequent policy shifts deter firms from going public

If a company gets listed, it will enjoy tax benefits, and this is one of the major incentives for them to go public..However, the government’s frequent policy changes have disheartened listed firms many times, as they faced higher tax rates once they got listed..It gave a clear, nega

2h ago