চন্দ্রপুর: যেখানে লুকিয়ে আছে দশম শতাব্দীর বিদ্যাপীঠ
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বিহার মিলে গঠিত প্রাচীন বঙ্গ বা বাংলায় শিক্ষার প্রসার ঘটেছিলো বিহার, মহাবিহার বা মঠের মাধ্যমে যার ভিত্তি ছিল ধর্মীয় জ্ঞান।
হাজার বছর প্রাচীন নালন্দা, শালবন, সোমপুর বিক্রমশীলা, জগদ্দলসহ অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আজও প্রাচীন বঙ্গের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ সব প্রাচীন বিদ্যায়তন বা বিদ্যাপীঠ দীর্ঘকালের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই স্বীকৃত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত স্থাপনাতেই শেষ নয় এ তালিকা।
শ্রীহট্ট বা বর্তমানের বৃহত্তর সিলেটে নালন্দার মতোই এক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দশম শতাব্দীতে যা জগদ্দল বিহার থেকেও প্রাচীন, তবে অনাবিষ্কৃত।
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার চন্দ্র রাজবংশের রাজা শ্রীচন্দ্র নয়টি মঠ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীহট্টমণ্ডলের চন্দ্রপুর বিষয়ে (মহকুমা বা জেলা) যা সম্মিলিতভাবে এক বৃহৎ বিদ্যায়তন।
১৯৫৮ সালে বর্তমান মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রাম থেকে আবিষ্কৃত হয় রাজা শ্রীচন্দ্রের একটি তাম্রশাসন যা ‘পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন’ নামে পরিচিত আর এ সব মঠের বিস্তারিত জানা যায় এই তাম্রশাসনে।
তবে আবিষ্কারের ৬২ বছর পর এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
চন্দ্র রাজবংশ ও রাজা শ্রীচন্দ্র
ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল মোমিন চৌধুরীর মতে, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার এই প্রাচীন রাজবংশের পাঁচজন রাজা আনুমানিক ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
ড. আব্দুল মোমিন চৌধুরী তার ‘Dynastic History of Bengal’ বইয়ে উল্লেখ করেন, আনুমানিক ৯০০ খ্রিস্টাব্দের এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা ত্রিলোক্যচন্দ্র। পরে ধারাবাহিকভাবে তার বংশধর রাজা শ্রীচন্দ্র (৯৩০-৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ), কল্যাণচন্দ্র (৯৭৫-১০০০ খ্রিস্টাব্দ), লাধাচন্দ্র (১০০-১০২০ খ্রিস্টাব্দ) ও সর্বশেষ গোবিন্দচন্দ্র (১০২০-১০৫০ খ্রিস্টাব্দ) এ রাজ্য শাসন করেন।
এই বইয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘রাজা শ্রীচন্দ্রের শাসনে এই রাজ্য তার সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায় এবং তার ছেলে কল্যাণচন্দ্র এই শৌর্য্য ধরে রাখেন।’
রাজা শ্রীচন্দ্রের প্রশাসনিক রাজধানী ছিল বিক্রমপুর, যা বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। তার রাজত্ব প্রাচীন বঙ্গের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বে বিস্তৃত ছিল।
শ্রীচন্দ্রের পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন
রাজা শ্রীচন্দ্র চন্দ্রবংশের মধ্যে দীর্ঘতম ৪৫ বছর রাজ্যশাসন করেছিলেন। তার অর্জন, যুদ্ধবিজয় ও দয়া সে সময়কার তাম্রশাসনগুলোতে খোদিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত চন্দ্রবংশের ১২টি তাম্রশাসনের মধ্যে আটটিই রাজা শ্রীচন্দ্রের। সেগুলো হলো, রামপাল তাম্রশাসন, কেদারপুর তাম্রশাসন, ইদিলপুর তাম্রশাসন, মদনপুর তাম্রশাসন, দুল্লা তাম্রশাসন, বগুড়া তাম্রশাসন, পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে আরো একটি নামহীন তাম্রশাসন রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষকদের লেখা থেকে জানা যায়।
তবে এ সব তাম্রশাসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন’।
ইতিহাসবিদ কমলা কান্ত গুপ্ত চৌধুরী (কমলাকান্ত গুপ্ত হিসেবে পরিচিত) এই তাম্রশাসনটির পাঠোদ্ধার করেন এবং তার বই ‘Copper-plates of Sylhet’ ও অন্যান্য প্রবন্ধে এ সম্পর্কে নানা আলোচনা করেন।
১৯৫৮ সালে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে একটি পতিত জমি থেকে এই তাম্রশাসনটি আবিষ্কার করেন বিনোদ বিহারী চক্রবর্তী।
এটি পরবর্তীতে পণ্ডিত শ্যামপদ কাব্যতীর্থ ভট্টাচার্য্যের কাছে আসে এবং তার কাছ থেকে Sylhet History and Archaeological Society এর সদস্য আমিনুর রশীদ চৌধুরী সেটি সোসাইটির জন্য সিলেট নিয়ে আসেন। এ সোসাইটির সহযোগিতায় কমলাকান্ত গুপ্ত ১৯৬২ সালে এর পাঠোদ্ধার করেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জফির সেতু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি এই তাম্রশাসন ও এ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করছি। গবেষণার কারণে এই তাম্রশাসনটি কোথায় আছে তা খোঁজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এটি কোথাও পাইনি। পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা জাদুঘরে আছে শুনে সেখানে গিয়েও তাম্রশাসনটির খোঁজ করেছি। কিন্তু এটি সেখানেও নেই।’
তাম্রশাসনে কী লিখা?
‘পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন’ রাজা শ্রীচন্দ্রের রাজত্বের পঞ্চম বর্ষ অর্থাৎ আনুমানিক ৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিখা। এতে রাজা শ্রীচন্দ্রের বংশপরিচয়, তার যুদ্ধ, দেশভ্রমণ, বিজয়সহ নানা বিষয় উল্লেখ করা থাকলেও মূলত এটি একটি ভূমি দানপত্র।
কমলাকান্ত গুপ্তের বই ‘কপার-প্লেটস অব সিলেট’ এবং তার চারটি প্রবন্ধের বই ‘তাম্রশাসনে শ্রীহট্ট’ (ড. জফির সেতু সংকলিত ও সম্পাদিত) এ এই তাম্রশাসনটির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
তাম্রশাসনটি দেবনাগরী হরফে লিখিত এবং এর ভাষা সংস্কৃত। হরদাস নামক এক লিপিকারের খোদাই করা দৈর্ঘ্যে ১৭ ইঞ্চির বেশি ও প্রস্থে সাড়ে ১২ ইঞ্চি এ ফলকের সম্মুখভাবে রয়েছে ২৮টি লাইন এবং পিছনের অংশে ৩৭টি লাইন রয়েছে।
ফলকের এর ওপর দিকে একটি রাজকীয় মুদ্রা বা সিলযুক্ত আছে যার মধ্যে আঁকা বৃত্তের ওপরের দিকে দুইটি হরিণ, মাঝে আট শলাকা বিশিষ্ট বৌদ্ধধর্মচক্র ও নিচে ‘শ্রী শ্রী চন্দ্র দেব’ ছাপ আছে।
এই তাম্রশাসনটি মূলত রাজা শ্রীচন্দ্রের ভূমিদানের তাম্রফলক এবং এর মাধ্যমে তিনি শ্রীহট্টমণ্ডলের চন্দ্রপুর বিষয়ে ৪৫২ পাটক ভূমি নয়টি মঠ ও ৬ হাজার ব্রাহ্মণের মধ্যে দান করেন।
কমলাকান্ত গুপ্তের বই-প্রবন্ধ এবং দীনেশ চন্দ্র সরকার সম্পাদিত ‘Select Inscription: Bearing on Indian History and Civilization’ বইয়ে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথম ১২০ পাটক ভূমিখণ্ড প্রথম মঠের জন্যে দান করা হয় যার মধ্যে প্রতিবদ্ধ চন্দ্র নামের একজন উপাধ্যায় (অধ্যাপক বা শিক্ষক) এর জন্য ১০ পাটক ভূমিদান করা হয়।
এছাড়াও, বাকি ভূমি বিভিন্ন হিসেবে ১০ ছাত্রের আহারাদি, পাঁচ অপূর্ণ ব্রাহ্মণের প্রাত্যহিক আহার ও এ কাজে নিযুক্ত এক ব্রাহ্মণ, গণক, কায়স্থ বা লেখক, চার মালাকার, দুই তৈলিক, দুই কুম্ভকার, পাঁচ কাহলিক, দুই শঙ্খবাদক, দুই ঢঙ্কাবাদক, আট দ্রাগঢ়িক, ২২ কর্মকার (মজুর) ও চর্মকার, এক নট, দুই সূত্রধর, দুই স্থপতি, দুই কর্মকার (কামার) এবং নয়টি কাজের জন্য আরও ৪৭ পাটক ভূমি বরাদ্দ করা।
দ্বিতীয় খণ্ডে ২৮০ পাটক ভূমি আটটি মঠ, যার মধ্যে চারটি দেশান্তরীয় ও চারটি বঙ্গাল মঠের প্রতিটির উপাধ্যায়, ছাত্র, ব্রাহ্মণ ছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে দান করা হয়, যার মধ্যে প্রতি চারটি মঠে একজন করে বৈদ্য বা চিকিৎসকও ছিলেন।
তৃতীয় খণ্ডে আরও ৫২ পাটক ভূমি এ অঞ্চলের ছয় হাজার ব্রাহ্মণের মধ্যে সমান ভাগে দান করা হয়, যার মধ্যে ৩৭ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে এ তাম্রফলকে।
চন্দ্রপুর, নয় মঠ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা
কমলাকান্ত গুপ্ত তার ১৯৬২ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘মহারাজা শ্রীচন্দ্রের নবলব্ধ প্রাচীন (পশ্চিমভাগ) তাম্রশাসন’ এ লিখেছেন, ‘চন্দ্রপুর বিষয়ের মধ্যে শ্রীচন্দ্রপুর বা চন্দ্রপুর নামক একটি নগর ছিল। বিষয়পতি বোধ হয় সাধারণত সে স্থলেই থাকিতেন। সেখানে একটি মঠ বা বিহার ছিল। মঠের উপাধ্যায় ছিলেন প্রতিবদ্ধ চন্দ্র। তাঁহার দশজন ছাত্রেরও উল্লেখ আছে। এই শ্রীচন্দ্রপুর বা চন্দ্রপুর নগর নিশ্চয়ই চন্দ্রপুর বিষয়ের সীমানার মধ্যেই ছিল। ওই নগরের কোনো সন্ধান বর্তমানে পাওয়া যাইতেছে না। ইহার সন্ধান করা দরকার।’
চন্দ্রবংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজবংশ ছিল। প্রায় সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা ভূমিদান করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং এর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে।
মহারাজা শ্রীচন্দ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি বুদ্ধের নামে ভূমিদান করেছেন হিন্দু মঠ ও ব্রাহ্মণদের মধ্যে, যেখানে মূলত চতুর্বেদভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করা হতো।
তবে প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত বৌদ্ধ তাত্ত্বিক চন্দ্রগোমী’র ব্যাকরণও পাঠ্য ছিল এ সব মঠে। প্রথম মঠের উপাধ্যায় চন্দ্রগোমী ব্যাকরণের পণ্ডিত বলে ধারণ করেছেন ইতিহাসতত্ত্ববিদরা।
ড. জফির সেতু বলেন, ‘তাম্রশাসনে পাওয়া সব তথ্য এটাই নির্দেশ করে যে সে সময় এখানে নালন্দা বা ওদন্তপুরীর মতো একটি বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, যা মূলত ধর্মীয় শিক্ষারই একটি কেন্দ্র ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে প্রায় ২৫ ধরনের কর্মজীবীদের মধ্যে শ্রমভিত্তিক ভূমিদান করা হয়েছে, উপাধ্যায়ের জন্য সর্বোচ্চ ও বিশেষ দান, ছাত্র-ব্রাহ্মণদের জন্য ব্যবস্থা, অতিথিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে; তাতে এটি বলা যায় প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠেছিল যার ব্যবস্থা আধুনিক যুগের বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার মতো। কীভাবে এ প্রতিষ্ঠান ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেলো তা একটি রহস্য।’
চন্দ্রপুর কোথায়?
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামকে সম্ভাব্য একটি স্থান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
তবে প্রাচীন এই নগর কোথায় ছিল তা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি কোনো ইতিহাসবেত্তা বা প্রত্নতত্ত্ববিদ।
পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনে চন্দ্রপুর বিষয়ের চতুর্সীমা উল্লেখ করা হয়েছে বলে কমলাকান্ত গুপ্তসহ অন্যান্য ইতিহাসবিদদের লেখা থেকে জানা যায়। এ চতুর্সীমা হলো— উত্তরে কোসিয়ার নদী, দক্ষিণে মণি নদী, পূর্বে বৃহৎ-কৌট্টালিসীমা ও পশ্চিমে জঙজু খাতক, কাষ্টণ্য খাতক, বেত্রঘঙ্ঘী নদী।
কমলাকান্ত গুপ্ত কোসিয়ার নদীকে বর্তমানের কুশিয়ারা এবং মণি নদীকে বর্তমানের মনু হিসেবে স্থির করলেও পূর্ব-পশ্চিমের সীমানা নিয়ে অনিশ্চিত ছিলেন।
তিনি তার প্রবন্ধে পূর্বসীমার বৃহৎ-কৌট্টালিকে অনেকের মতে ত্রিপুরার ত্রিশিরা প্রস্তরখণ্ড (যা উনকোটি নামে পরিচিত) হিসেবে দাবিকে অগ্রাহ্য করে কোনো বৃহৎ পুলিশ ঘাঁটি বা কোটয়ালি হওয়া যুক্তিসঙ্গত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
পশ্চিমের সীমার ব্যাপারে পরষ্পর সংযুক্তি তিনটি আলাদা নদী হিসেবে ধারণা করেন এবং এর মধ্যে বেত্রঘঙ্ঘীকে হবিগঞ্জের দিনারপুর পাহাড়ের পশ্চিমের ঘুঙ্ঘী নদী হতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
লেখক-গবেষক অধ্যাপক নৃপেন্দ্রলাল দাশ এর মতে, ‘তাম্রশাসনটি রাজনগর থেকে উদ্ধার হয়েছে। এ অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গলের কালাপুর বা বিয়ানীবাজারের নিধনপুরে অন্যান্য রাজাদের তাম্রশাসন পাওয়া গিয়েছে, এ সবই ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ স্থান এবং এ সীমার যে কোনো স্থানই সম্ভাব্য স্থান হতে পারে।’
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চতুর্সীমা নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে অনুসন্ধান চালালে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে যাতে শ্রীহট্টের প্রাচীনত্বের ইতিহাসে নতুন ধারা সৃষ্টি হবে।’
নাগরি গবেষক ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তাম্রশাসনের পাঠোদ্ধারকারী কমলাকান্ত গুপ্ত, গবেষক রমেশচন্দ্র, যদুনাথ সরকার— সবাই চন্দ্রপুরের কথা উল্লেখ করেছেন। কামরূপ শাসনাবলীর লেখক পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের দাবি ছিল এটা হবিগঞ্জে। তবে জুড়ী উপজেলার যেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অনুসন্ধান শুরু করছে, সেখানেও হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় কোথায়, এটি ব্যাপক গবেষণার বিষয়। যেখানে মাটি খুঁড়লে প্রাচীন ইট পাওয়া যায়, সে জায়গায় কোনো না কোনো প্রাচীন স্থাপনা অবশ্যই ছিল। এই প্রাচীন স্থাপনা কোথায় ছিল তার খোঁজ করতে গবেষকরা আগের সব গবেষকদের কাজ নিয়ে পড়াশোনা করলে ভালো সূত্র পাওয়া যেতে পারে।’
চন্দ্রপুরের খোঁজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
গত ১৫ জুলাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ইস্যুকৃত এক চিঠির আলোকে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করতে যাচ্ছেন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রাথমিক অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজের জন্য এ বিষয়ে কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছি। আগামী ২৫ জুলাই মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সম্ভাব্য এই স্থানে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা এই প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অনুসন্ধানে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রাথমিকভাবে এর অবস্থান নিশ্চিত করার পর আমরা বড় পরিসরে খননকাজ শুরু করবো। এটি আবিষ্কার করা গেলে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হবে চন্দ্রপুর।’
Comments