‘বাঙ্গাল কা শের’

Pannalal Ghosh
‘বাঙ্গাল কা শের’ পান্নালাল ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

আমরা যে আজকে বাঁশির রূপ দেখতে পাই, জানেন কি এই বাঁশির রূপ কে দিয়েছেন? বাঁশিতে যে শাস্ত্রীয় সংগীত বাজানো যায়, সেটা কে করে দেখিয়েছেন? বাঁশিকে বলিউডে পাকাপোক্ত অবস্থান কে দিয়েছেন— জানেন কি?

বাঁশি নিয়ে এমনই সব কীর্তি গড়ে গেছেন বাংলাদেশের বরিশালের সন্তান অমলজ্যোতি ঘোষ। যিনি পান্নালাল ঘোষ নামে পরিচিত।

তার আমলে প্রচলিত বাঁশির ছিদ্র ছিল ছয়টি। তিনি সপ্তম ছিদ্রের ‍উদ্ভাবন করে বাঁশিতে অভাবনীয় সুর সৃষ্টি করেন।

১৯১১ সালের এই দিনে বরিশাল শহরে এক ঐতিহ্যবাহী সংগীত পরিবারে জন্ম পান্নালালের। তার পিতামহ হরকুমার ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী ও পিতা অক্ষয়কুমার ঘোষ ছিলেন প্রসিদ্ধ সেতারবাদক। মা সুকুমারী ছিলেন গায়িকা। তাই পরিবারের পরিবেশ পান্নালালকে সংগীতের প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে।

পান্নালালের সংগীত শিক্ষার শুরু পিতা অক্ষয়কুমার। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শেখা শুরু করেন। শুধু বাঁশি নয়, একই সঙ্গে গানের তালিম, সেতার, পাখোয়াজ, তবলা যেমন শিখতে লাগলেন তেমনি আবার বক্সিং ও জিমন্যাস্টিক শিখলেন।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জেরে সতেরো বছর বয়েসে তিনি চলে যান কলকাতায়। সেখানে চাকরি নিলেন একটা টিউবয়েলের কোম্পানিতে। তখন নির্বাক সিনেমার যুগ তাই সিনেমার সঙ্গে কনসার্ট বাজানোর চল ছিল স্টেজের পেছনে। পান্নালাল বাঁশি বাজানোর কাজও পেলেন।

এর মধ্য তিনি মনস্থির করলেন অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন। সেটি ছিল ১৯৩৪ সাল। কনফারেন্সের উদ্বোধন করলেন রবীন্দ্রনাথ। বিচারক সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ। পান্নালাল প্রথম হলেন। অনেকের মধ্যে বিচারক হিসেবে ছিলেন আলাউদ্দিন খাঁ।

সঙ্গে চললো শরীর চর্চা। ১৯৩৬ সালে ভারোত্তলন প্রতিয়োগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।

পরিচয় হলো অমৃতসরের প্রসিদ্ধ হারমোনিয়ামবাদক খুশি আহমদের সঙ্গে। তার কাছে তিনি সংগীতের তালিম নেন। ১৯৩৮ সালে ‘সরই-কলা-নৃত্য’ দলের সঙ্গে পান্নালাল বিদেশ ভ্রমণ করেন। যা সে সময়ের নিরিখে বিরল ছিল।

বিদেশ থেকে ফিরে তিনি সংগীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী ও ১৯৪৭ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

ইতোমধ্যে তিনি বোম্বে (মুম্বাই) গিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বিয়ের করেন সে সময়। পাত্রী  হলেন পান্নালালের বন্ধু প্রখ্যাত সুরকার, অনিল বিশ্বাসের বোন শিল্পী পারুল বিশ্বাস। পান্নালালের ছোটভাই নিখিল ঘোষও ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক।

‘স্নেহবন্ধন’ (১৯৪০) ছবিতে প্রথম সংগীত পরিচালনা করেন পান্নালাল। তারপর একে একে ‘আনজান’ (১৯৪১), ‘বসন্ত’ (১৯৪২), ‘দুহাই’ (১৯৪৩), ‘নন্দকিশোর’ (১৯৫১), ‘বসন্ত বাহার’ (১৯৫৬), ‘মুঘল-এ-আজম’ (১৯৬০) প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গান ও আবহসংগীতের কাজ করেন।

‘আঁধিয়া’ (১৯৫২) ছবির আবহসংগীতে তিনি কাজ করেন ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে যৌথভাবে।

পান্নালাল ঘোষকে ওস্তাদ বড় গোলাম আলি খুব স্নেহ করতেন। তাকে ডাকতেন ‘বাঙ্গাল কা শের’ বলে। আজ সেই শেরের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন ‘বাঙ্গাল কা শের’।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago