টাঙ্গাইলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
উজানের ঢল এবং অতিবর্ষণে টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি আবার বাড়তে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার মোট ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৭৯ ইউনিয়ন এবং ছয়টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে, পানিবন্দি হাজার হাজার বানভাসি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি এবং খাদ্য সংকটে ভুগছে তারা।
অনেকে গোখাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগী নিয়ে। এ ছাড়াও, বন্যা কবলিত বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ, পুকুর এবং জলাশয়ের মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে কালিহাতী এবং নাগরপুর উপজেলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের আজকের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪৯ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি ৭৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ এবং পুনর্বাসন অফিস দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, জেলার বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ছয়শ টন জিআর চাল, নগদ ১৩ লাখ টাকা, পশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ছয় লাখ টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ দুই লাখ টাকা এবং ছয় হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩৫৫ টন চাল এবং নগদ আট লাখ টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
জেলার ১২টি উপজেলার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭৩টি পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায় মোট ২ হাজার ৬৬৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই চাল ইতোমধ্যে উপজেলায় উপজেলায় পাঠানো হয়েছে এবং ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে বলা হয়েছে।
বন্যা কবলিত বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, বন্যার্তদের জন্য যে পরিমাণ জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। শুকনো খাবারেরও সংকট আছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে যে জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখনও বিতরণ করে শেষ করতে পারেননি। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আছে। যেহেতু বন্যা মধ্য আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই আমরা পর্যায়ক্রমে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছি। তবে, প্রয়োজন আছে এমন একটি পরিবারও যাতে সরকারি ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য আমরা সচেষ্ট থাকবো।’
ডিসি আরও বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকায় রান্না করা খাবার পাঠানো শুরু হয়েছে। ঈদের আগেই ভিজিএফ কর্মসূচীর চাল বিতরণ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বন্যা কবলিত সকল হতদরিদ্র পরিবারের কাছে সেমাই-চিনিসহ বিভিন্ন বিশেষ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে।’
Comments