‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল’
‘দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম, বাইরে শব্দ শুনে তাকাতেই দেখি সবাই ছোটাছুটি করছে। কিছু বুঝে ওঠবার আগেই দেখি পায়ের নিচের মাটি সরছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচার জন্য দৌঁড়াতে শুরু করি। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার ঘর-বাড়ি, মুরগির খামার সব পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে,’ বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরি গ্রামের আমিনুল ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে অকস্মাৎ যমুনা নদীর ভাঙনে তার ঘরবাড়ি, পাঁচ শতাধিক মুরগিসহ খামার সব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
আমিনুল বলেন, ‘সাজানো সংসার মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল!’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরি গ্রামে শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার ঘণ্টায় নদী ভাঙনে প্রায় ২০০ বাড়ি, একটি মসজিদসহ শত শত বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙনের তীব্রতা কমলেও আজ শনিবারও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালির ব্যাগ ফেলে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও পানির চাপে তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
ছোনগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সহিদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শুক্রবার দুপুরের দিকে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের কোন লক্ষণ না থাকায় এলাকার মানুষজন আকস্মিক ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই বাড়ি ঘরের সবকিছু ফেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
তিনি বলেন, দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ভাঙনে পাঁচঠাকুরি এলাকার ৫০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়, এছাড়াও প্রায় ১৫০ টি বাড়ির কিছু অংশ সরাতে পারলেও বাকিটা নদীতে তলিয়ে গেছে। শুধুু বাড়ি ঘরই নয় আকস্মিক বন্যায় নদীর পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ গৃহপালিত প্রাণি।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ইউনিয়নের সব স্কুল কলেজে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আশেপাশের মানুষদেরও নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম দি ডেইলি স্টারকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিমলাপার বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের ভেতরওে পানি ঢুকে পড়ায়
তীব্র পানির চাপে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে। বন্যার শুরুতে সিমলাপার বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে যাওয়ায় ভাঙনের ঝুঁকিতে ছিল গ্রামটি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেও তীব্র বন্যা আর পানির চাপে কাজ পুরোপুরি সফল হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, ভাঙন কবলিতদের শনিবার শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার পর ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।
Comments