ব্রিটেনে জোরালো হচ্ছে ভাঙনের শব্দ

Scotland
২০১৪ সালের গণভোটে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা। ছবি: সংগৃহীত

গত বৃহস্পতিবার স্টকল্যান্ডের উত্তর উপকূলে অর্কনে দ্বীপে সফরে এসে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জোরালোভাবে ঘোষণা দেন যে তার এই সফর একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ব্রিটেনের প্রতি তার অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন কল্পনাতীতভাবে শক্তিশালী।… আমি মনে করি জনগণ একত্রে পুরো দেশকে আবারো শক্তিশালী হিসেবে দেখতে চায়। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’

তিনি যখন এমন প্রত্যয় প্রকাশ করছিলেন তখন স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী বা ফাস্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিয়ন তার পাশে ছিলেন না। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী জনসন স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীরে সঙ্গে দেখাও করেননি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, জনসন কি স্কিটিশ নেতাকে বাদ দিয়ে ব্রিটেনকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চান?

গতকাল মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করে বলা হয়, এমন প্রশ্ন উঠার অনেক কারণ রয়েছে। করোনা মহামারিতে স্কটল্যান্ড ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী নিকোলার জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কারণ, করোনা মোকাবিলায় তিনি যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন তা ব্রিটেনে জাতীয়ভাবে নেওয়া উদ্যোগগুলোর বিপরীত।

প্রতিবেদন মন্তব্য করা হয়, নিকোলার প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে ব্রিটেন থেকে বের হয়ে স্বাধীন স্কটল্যান্ড গঠনের প্রতি জনগণের সমর্থন বেড়ে যাওয়া।

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেই ভোটে ‘না’ জয়ী হয়েছিল ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে। অর্থাৎ, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ভোটার এবং পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ভোটার।

সে সময় স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী নেতারা বলেছিলেন, খুব দ্রুত এই ব্যবধান কমিয়ে আনা হবে। স্বাধীনতার পক্ষে জোর প্রচারণা চালালে ও ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডবিরোধী কার্যকলাপ সঠিকভাবে তুলে ধরলে স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন দ্রুত বেড়ে যাবে বলে গণভোটের ফল প্রকাশের প্রতিক্রিয়ার এসব কথা বলেছিলেন তারা।

তাদের সেই প্রত্যয়ের সুফল মেলে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি স্কটল্যান্ড ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমনসে ৫৯ আসনের মধ্যে ৫৬টিতে জয় লাভ করে।

পরের বছর ব্রেক্সিটের গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে তথা ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দেন স্কটল্যান্ডবাসী।

করোনা মহামারিতে ব্রিটেনের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের ব্যবধান অনেক বেড়ে যায়। গত মার্চে যুক্তরাজ্যে করোনা মহামারির শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী জনসন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি ব্রিটেনে করোনা রোগীর সংখ্যা খুব কম। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে আমি সবার সঙ্গে করমর্দন করি।’

তিনি সবাইকে কাজে যেতে উৎসাহ দেন। নিজে ঘরে বসে কাজ করবেন না বলেও ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সবাইকে ‘সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দেন।

এরপর তিনিও আক্রান্ত হন করোনায়। ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। করোনা সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্কটল্যান্ডও। সে সময় করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা এমন কিছু উদ্যোগ নেন যা ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।

সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার হাত ধরেই ব্রিটেন ও স্কটল্যান্ড যেন ‘বিচ্ছেদের’ দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কেননা, মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ‘সতর্ক’ থাকার মানে কী হতে পারে।’ এরপর তিনি বলেন, ব্রিটেনের এই ‘সতর্ক’ থাকার স্লোগান স্কটল্যান্ডে চলবে না।

এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যবধান। গত ৯০ এর দশকে ব্রিটেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারগুলোর কাছে হস্তান্তর করে। সেই ক্ষমতাবলে স্কটল্যান্ড করোনা মেকাবিলায় নিজস্ব নিয়ম গ্রহণ করে যা একদিকে মুখ্যমন্ত্রী নিকোলার জনপ্রিয়াতা বাড়িয়ে দেয় অন্যদিকে, ব্রিটেনের ‘ভুলনীতি’ সম্পর্কে স্কটল্যান্ডের জনগণকে ‘সচেতন’ করে তোলে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

স্কটল্যান্ডের স্ট্যাথক্লাইডি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জন কার্টিস গত বৃহস্পতিবার বিবিসিকে বলেন, ‘গত এক বছরে স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অনেক বেড়েছে। এমনকি, স্কটল্যান্ডের যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তারাও এখন স্টকল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলছেন।’

কার্টিসের কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় এসএনপির সংসদ সদস্য টমি শেফার্ডের কণ্ঠে। তিনি প্রধানমন্ত্রী জনসনের সাম্প্রতিক স্কটল্যান্ড সফর সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (জনসন) স্কটল্যান্ডে যত আসবেন স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার আওয়াজ তত জোরালো হবে।’

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

7h ago