বড় ‘দামি’ এই ক্রিকেট-ভালোবাসা

gentleman-club

বলা হয়ে থাকে যে, ক্রিকেট হলো ভদ্রলোকের খেলা এবং সম্ভবত সেই একই গুণের কারণে, আধুনিক সামগ্রী কেনার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিলে এটি একটি ব্যয়বহুল খেলাও বটে।

উপকরণগুলো যে কেবল ব্যয়বহুল, তা নয়। বাংলাদেশে মানসম্পন্ন সরঞ্জাম পাওয়াও কঠিন। কারণ, দেশে এমন কোনো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেই যারা সর্বোচ্চ মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারে।

এসএস, এসজি, সিএ ও ডিএসসির মতো ভালো মানের ক্রিকেটীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকটি পরিবেশক রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিটি ব্র্যান্ডের জন্য বাংলাদেশে মাত্র একটি করে অনুমোদিত পরিবেশক রয়েছে। তা ছাড়া, আমদানি শুল্কও অত্যধিক। তাই সরঞ্জামের দাম এখানে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

কয়েকজন স্থানীয় আমদানিকারক অবশ্য সরাসরি ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কিনে আনেন এবং স্থানীয় বাজারে তুলনামূলক কম দামে সেসব বিক্রি করেন।

তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের মতো তারকাদের ব্যবহৃত ব্যাটের দাম জানার ভীষণ আগ্রহ রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। তবে তাদের সরঞ্জামের মূল্য জানলে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না।

বাঁহাতি তামিমের স্পন্সর পাকিস্তানের ব্র্যান্ড সিএ এবং প্রতিটি ব্যাটের জন্য সাধারণত তাকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। কখনও কখনও এর চেয়েও বেশি! সৌভাগ্যক্রমে, তারকাখ্যাতির কারণে তামিমকে স্পন্সর করে সিএ এবং বছর জুড়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সব ধরনের সরঞ্জাম পেয়ে থাকেন তিনি। পাশাপাশি স্পন্সরশিপ চুক্তি অনুসারে, বড় অঙ্কের অর্থও পান দেশসেরা ওপেনার।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সঙ্গে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড়দেরও স্পনসর করে থাকে। ফলে ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস থেকে শুরু করে হেলমেটেও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের স্টিকার ব্যবহার করতে দেখা যায় তাদেরকে।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো সাধারণত দুই ধরনের চুক্তি করে। একটি বার্ষিক এবং অন্যটি ম্যাচ-বাই-ম্যাচ ভিত্তিতে।

প্রতিষ্ঠিত শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বার্ষিক চুক্তি করা হয়ে থাকে এবং তারা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে শুধু গিয়ার্সই (সরঞ্জাম) নয়, পণ্যের এন্ডোর্সমেন্ট (অনুমোদন) বাবদ ভালো পরিমাণ অর্থও পান। যেমন- তামিম বা মুশফিকের মতো শীর্ষস্থানীয় একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার বার্ষিক চুক্তি অনুসারে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার পান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫১ থেকে ৬৮ লাখ টাকা)।

অন্যদিকে, সৌম্য সরকার বা লিটন দাসের মতো মাঝারি স্তরে থাকা জাতীয় ক্রিকেটাররাও সরঞ্জাম পেয়ে থাকেন। তবে সেসব পণ্যের মান সাকিবকে দেওয়া পণ্যের মানের চেয়ে আলাদা হয়। তারা ম্যাচপ্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার মার্কিন ডলার পান। উঠতি ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা ১০০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলারের মধ্যে।

ক্রিকেটীয় সামগ্রীর উচ্চমূল্যে ফিরে যাওয়া যাক। যদিও অনেক জাতীয় ক্রিকেটারদের এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ের দরকার হয় না, তবে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য পরিস্থিতি একেবারে আলাদা।

এসএস, এসজি, সিএ বা ডিএসসির মতো সর্বোচ্চ মানের ব্যাট, যেগুলো তারা পছন্দ করেন, সেগুলোর প্রতিটির জন্য তাদেরকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে ক্ষেত্রবিশেষে দাম আরও বেশি হতে পারে।

প্রথম শ্রেণির ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ব্যবহৃত প্রো-কোয়ালিটি (পেশাদার মানের) প্যাডের এক জোড়ার দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ব্যাটিং গ্লাভসের এক জোড়ার দাম তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা এবং হেলমেটের একটির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

একটি থাই (ঊরুর) প্যাডের দাম আড়াই হাজার টাকা এবং একটি ভালো মানের কার্বন অ্যাবডোমিনাল (ঊরুসন্ধির) গার্ডের জন্য প্রায় একই অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়।

বোলারদের এক জোড়া শীর্ষ মানের অ্যাডিডাস বা নাইক ব্র্যান্ডের বুটের দাম ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ব্যাটসম্যান ও ফিল্ডারদের এক জোড়া বুটের দাম ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

যদি ভেবে থাকেন যে, ব্যাটিংয়ের সরঞ্জামের তুলনায় ক্রিকেট বল কম ব্যয়বহুল, তবে আপনাকে আবারও অবাক হতে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদিত শীর্ষ মানের প্রতিটি কোকাবুরা ম্যাচ বলের জন্য খরচ করতে হয় নয় থেকে ১১ হাজার টাকা এবং একই ব্র্যান্ডের অনুশীলন বলের দাম সাড়ে ছয় হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা।

তবে এসজি বা এসএসের মতো কয়েকটি ভারতীয় ক্রিকেট সামগ্রী উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের বলের দাম বেশ কম, ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। তবে প্রথম শ্রেণির বা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে সেগুলো ব্যবহার করা হয় না।

ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান বাংলাদেশ দলে থাকাকালীন স্পন্সর পেতেন। তবে অনেক দিন ধরে জাতীয় দলের বাইরে থাকায় ঘরোয়া পর্যায়ের শীর্ষস্থানীয় এই ক্রিকেটারকে এখন মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে হয়।

তিনি ডেইলি স্টারকে শনিবার জানান, ‘ক্রিকেটের সামগ্রী সস্তা নয়। প্রতিটি ব্যাটের জন্য আপনার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার অন্তত চারটি ব্যাট থাকতে হবে। আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না যে, কখন ব্যাটটি ভেঙে যেতে পারে। সাধারণত কোনো ব্যাট দুই বছরের বেশি টিকে না। প্যাড, গ্লাভস ও বুটের মতো অন্যান্য পণ্যগুলোও মজুত রাখতে হয় আমাদের। অনেকেই ভাবেন যে, ক্রিকেটাররা প্রচুর উপার্জন করে। কিন্তু এটাও সত্য যে, ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য আমাদের আয়ের মূল উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।’

পেশাদার ক্রিকেটের সামগ্রী ব্যয়বহুল তো বটেই, প্রাথমিক বা নিচের স্তরের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও সেগুলো সস্তা নয়।

শিশু ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটারদের ব্যাটসহ একটি সম্পূর্ণ গিয়ার সেটের মূল্য ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির খেলোয়াড়দের গুণতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে যেখান থেকে ক্রিকেটীয় সামগ্রী কেনা যায়। গুলিস্তানের স্পোর্টস মার্কেট অনেক বছর ধরেই অপেশাদার ও পেশাদারদের কাছে সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বৃহত্তম স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

গুড বাই ইঙ্কের (ইনকর্পোরেশন) মালিক ও ক্রিকেটীয় সামগ্রীর খুচরা বিক্রেতা রাহাত হাসানের মতে, বাংলাদেশে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান না থাকার মূল কারণ হলো বিশেষজ্ঞ শ্রমিক ও কাঁচামালের অভাব।

তিনি বলেন, ‘এটি একটি বিশাল বাজার এবং আমরা পেশাদার ক্রিকেটার ও নতুনদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। বাংলাদেশে শীর্ষ মানের ক্রিকেটীয় সামগ্রীর কোনো প্রস্তুতকারক নেই। আমাদেরকে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। বিশেষজ্ঞ শ্রমিক এবং কাঁচামাল বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়। আমদানির উপর আমাদের নির্ভর করার এগুলোই মূল কারণ।’

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

30m ago