ভারতেও র্যাপিড টেস্ট, অ্যান্টিজেন কিটের ব্যবহার শুরু
করোনা শনাক্তে মাসখানেক আগেও ভারতে দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল আড়াই লাখের মতো। সেখানে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ২৪ ঘণ্টায় অন্তত চার লাখ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মূলত র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমেই তারা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াচ্ছে। করোনা শনাক্তে বর্তমানে দেশটিতে প্রতি চারটি নমুনা পরীক্ষায় একটি করা হচ্ছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট ব্যবহার করে।
আজ সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, করোনা শনাক্তে ২৪ ঘণ্টায় দেশটির অনুমোদিত এক হাজার ৩০০টি ল্যাবরেটরিতে চার লাখ ৪২ হাজার ২৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক লাখ পরীক্ষাই হয়েছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট দিয়ে। বাকিগুলো হয়েছে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে।
সামনে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়িয়ে গড়ে দৈনিক ১০ লাখ নমুনা পরীক্ষার লক্ষ্যে এগোচ্ছে ভারত।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, ‘দ্রুত, সহজ ও আরটি-পিসিআর পরীক্ষার চেয়ে কম খরচ হওয়ায় দৈনিক করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে অ্যান্টিজেন টেস্ট।’
গত ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ভারতে এখন পর্যন্ত অন্তত এক কোটি ৬০ লাখের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বর্তমানে ভারত সরকার যে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটটি ব্যবহার করছে, সেটি তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক কোম্পানি এসডি বায়োসেন্সর। ভারতের গুরুগ্রাম জেলার মানেসার শহরেও কোম্পানিটির ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে। ‘স্ট্যান্ডার্ড কিউ কোভিড-১৯ এজি ডিটেকশন কিট’ নামের এই অ্যান্টিজেন কিটটি ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ।
গত মাসে রাজধানী দিল্লিই প্রথম রাজ্য হিসেবে করোনা পরীক্ষায় অ্যান্টিজেন কিটের ব্যবহার শুরু করে। পরে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কিছু রাজ্যসহ অন্যান্য রাজ্যগুলোও সফলভাবে অ্যান্টিজেন কিটের ব্যবহার শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অ্যান্টিজেন কিট সহায়ক।
লক্ষ্ণৌর কিং জর্জস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. আমিতা জাইন বলেন, ‘যদিও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে সব পজিটিভ হয়তো শনাক্ত হবে না, তবে, যেহেতু পরীক্ষা ফল পজিটিভ আসলে সেটিকে আমরা পজিটিভ বলেই ধরে নিচ্ছি, তাই করোনা রোগী শনাক্তে এটি কাজ করবে। যে এলাকায় ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি, সেখানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ভালো কাজ করার কথা এবং এটিই আমরা চাই। যাতে করোনা রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার চেয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা ভালো। তবে, যেহেতু এটি কষ্টসাধ্য, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, তাই আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পরিমাণ বৃহৎ পরিসরে বাড়ানো সম্ভব নয়। আর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তো পিসিআর পরীক্ষা করা যাবেই।’
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেখানে মৃত্যুহার কম হওয়ার কারণ ব্যাপক হারে পরীক্ষা এবং সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বিত প্রচেষ্টা। যার মাধ্যমে করোনা রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব।
বর্তমানে ভারতে করোনায় মৃত্যুর হার দুই দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশটিতে দৈনিক সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। গত ২৫ জুলাইয়ের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৩৬ হাজার ১৪৫।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে বর্তমানে আক্রান্ত রয়েছেন চার লাখ ৮৫ হাজার ১১৪ জন। মারা গেছেন ৩২ হাজার ৭৭১ জন এবং মোট সুস্থ হয়েছেন নয় লাখ ১৭ হাজার ৫৬৮ জন। বর্তমানে দেশটিতে সুস্থতার হার ৬৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
Comments