সাভারে ভূমিদস্যুদের হামলায় বন কর্মকর্তাসহ আহত ৫
সাভারে সরকারি বনভূমি রক্ষা করতে গিয়ে দখলকারী ভূমিদস্যুদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীর হামলায় এক বন কর্মকর্তাসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সহকারী বন সংরক্ষক সাজেদুল আলম ও বন প্রহরী ইমরানকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ছোট কালিয়াকৈর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ঢাকা বন বিভাগের কালিয়াকৈর রেঞ্জের, সাভার সাব-বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে মামলার বিষয়টি নিশ্চত করেন।
আহতরা হলেন- সহকারী বন সংরক্ষক মো. সাজেদুল আলম (৫৫), বন প্রহরী ইমরান (৩৮), ফরেস্টার দীলিপ মজুমদার (৪৫), মনির (২৮) ও ইমরান (২৫)।
বন কর্মকর্তারা জানান, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের ছোট কালিয়াকৈর মৌজায় গেজেটভুক্ত সরকারি বন বিভাগের জমি দখল করে সেখানে থাকা প্রায় ১৪ হাজার ৫০ টি চারা গাছ নষ্ট করে দীর্ঘ দিন ধরে নানা ধরনের স্থাপনা তৈরি করে আসছিল কামরুল ইসলাম আল আমিনের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু চক্র। আজ দুপুরে সরকারি গেজেটভুক্ত জমিতে টহলের সময় ভূমিদস্যুদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা সরকারি সংরক্ষিত বন বিভাগের রোপন করা চারা নষ্ট করে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ভূমির আকার পরিবর্তন করছিল।
এ সময় তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা রামদা, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রসীরা সহকারী বন সংরক্ষক মো. সাজেদুল আলমকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়। পরে বন প্রহরী মো. ইমরান, ফরেস্টার দিলীপ মজুমদারকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে এবং তাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে বন বিভাগের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা মোট ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় বলে জানান তারা।
বন বিভাগের ফরেস্টার ও সাভার সাব বিট কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে প্রায় ৪০-৪৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হামলা চালায়। এখানে বন বিভাগের জায়গায় গাছ লাগালে ভূমিদস্যুরা সব কেটে তছনছ করে ফেলে। স্থানীয় কয়েকজন এখানে জমি আছে দাবি করে আদালতে আবেদন জানান। পরে আদালত এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। ওই স্থগিতাদেশের সময় গত ১৬ জুলাই পার হয়ে যায়। ফলে, গেজেট মূলে বন বিভাগ তার জমি দখলমুক্ত করতে গেলে আমরা হামলার শিকার হই।’
তবে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম আল আমিন বলেন, ‘আমরা সরকারি জমি ভূমি সংস্কার বোর্ড থেকে লিজ নিয়ে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলাম। কিন্তু, বন বিভাগের লোকজন আমাদের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আবারও ওই জমিতে উন্নয়ন কাজ করার সময় আজ দুপুরে বন বিভাগের লোকজন আবারও হামলা চালায়। তাদের ছোড়া গুলিতে আমাদের দুজন আহত হয়েছে। তাদেরকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বন বিভাগের কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সরকারি গেজেটভুক্ত জমিতে রোপন করা প্রায় ১৫ হাজার চারা নষ্ট করে ভূমিদস্যূরা সেখানে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখে। বনের জমি রক্ষার্থে এখন পর্যন্ত ১৩ বার অভিযান চালানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু, ভূমি সংস্কারবোর্ডসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ভূমিদস্যুরা তাদের দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আজ আমরা বনের জমিতে টহল দিতে গেলে ভূমিদস্যূরা অতর্কিত হামলা চালায়। এঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক(তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত আসামিদের আটকে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
Comments