বগুড়ায় করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না, জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বগুড়ার বনানীতে জমজমাট গরুর হাট। ছবিটি গত শুক্রবার তোলা। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রেড জোন এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার কমলেও তুলনামূলকভাবে অন্য এলাকাগুলোতে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন।

তিনি আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় যদি করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারি তথ্যমতে বগুড়ায় গতকাল রবিবার পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১০০ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫৫৫ জন। যাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৯৫৮ জন।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন। আক্রান্তের হার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। মৃত্যুহার ২ দশমিক ১ এবং সুস্থতার হার ৬৪. দশমিক ৯ শতাংশ।

করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে অনলাইন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘করোনা এবং বগুড়া পরিস্থিতি’।

সংগঠনের জেলা সমন্বয়ক ফরহাদুজ্জামান শাহী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বগুড়ায় করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ‘করোনা এবং বগুড়া পরিস্থিতি’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ৩০০০ স্বেচ্ছাসেবক জেলা প্রশাসনের সাথে প্রতিটি উপজেলায় কাজ করতে শুরু করে। মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি থেকে লকডাউন, রেড জোন এলাকাগুলোতে খাদ্য বিতরণসহ সব কাজেই তারা প্রশাসনকে সাহায্য করে আসছে।

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের গাফিলতিতেই বগুড়ায় এই পর্যন্ত এতো মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মারা যাচ্ছে। সংক্রমণ কমানোর জন্য তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল শুরু থেকেই সমন্বয়ের অভাবে তার একটিও কার্যকর করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, তাদের সক্ষমতা না থাকলেও এককভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। গত ঈদে লকডাউনের মধ্যেও বগুড়ার মার্কেটগুলো সব খোলা ছিল। বন্যা ও করোনার মধ্যেও একটি উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। লোক দেখানো রেড জোন ঘোষণা করলেও কোনও শর্ত সেখানে মানা হয়নি। এবারের ঈদেও বিভিন্ন জায়গায় গরুর হাটগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি, ফলে সংক্রমণ কমার থেকে আরও বেড়েই চলছে।

‘উত্তরবঙ্গের মধ্যে দিন দিন বগুড়ার করোনা পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হয়ে উঠছে। এখনো খোলা রাখা হয়েছে শহরের বড় বড় মার্কেটগুলো যেখানে আশেপাশের জেলগুলো থেকেও মানুষ কেনাকাটা করতে আসছে ফলে অন্য জেলার মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে,’ অভিযোগ করেন শাহী।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যা বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। মানুষকে সচেতন করার জন্য অনেক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। এখন সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হন, তাহলে আমাদের বেশি কিছু করার থাকে না। আর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আমরা সবসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।’

সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন থেকে বগুড়া পৌরসভার ৯টি এলাকাকে এর আগে রেড জোন ঘোষণা করা হয়। এলাকাগুলো হলো চেলোপাড়া, নাটায়পাড়া, হারিপাড়া,নারুলি, ঠনঠনিয়া, সূত্রাপুর, কলোনি, মালতি নগর এবং জলেশ্বরীতলা। প্রথম দফায় রেড জোন কার্যকর হয় ১৪ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত। পরে সংক্রমণ না কমায় এই এলাকাগুলোকে দ্বিতীয় বারের মতো আবারও রেড জোন ঘোষণা করা হয় এবং তা চলে গত ২১ জুলাই পর্যন্ত।

পরে ৭টি এলাকা থেকে রেড জোন প্রত্যাহার করা হয়। এখনও দুইটি এলাকা- ঠনঠনিয়া এবং কলোনি রেড জোনের আওতায় আছে।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে রেড জোনের যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিল তা কার্যকর করতে পারেনি বগুড়া জেলা প্রশাসন।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

7h ago