‘পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি’ প্রাপ্তিস্থানের সন্ধান পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ

মৌলভীবাজারের প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অনুসন্ধানে তিন দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব প্রতিনিধি দল। তবে রাজনগরে উদ্ধারকৃত পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি প্রাপ্তিস্থলের সন্ধান পেয়েছেন তারা।
Archeology dept
মৌলভীবাজারের প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অনুসন্ধানে তিন দিনের কার্যক্রমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অনুসন্ধানে তিন দিনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব প্রতিনিধি দল। তবে রাজনগরে উদ্ধারকৃত পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি প্রাপ্তিস্থলের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

তিন দিনব্যাপী অনুসন্ধানের শেষ দিন গতকাল সোমবার রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামের পরেশ পালের বাড়ি থেকে তাম্রলিপি উদ্ধারের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে প্রতিনিধি দল।

মৌলভীবাজারের শ্রীহট্টের প্রাচীনতম চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের পুরাকীর্তি সম্পর্কে জানার জন্য তিন দিনের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

সে সময় তারা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও রাজনগর উপজেলায় চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদর্শন বা অস্থিত্ব সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়ে কোনো স্থাপনা বা ধ্বংসাবশেষ উৎঘাটন করতে পারেনি। তবে রাজনগরে উদ্ধারকৃত পশ্চিমভাগ তাম্রলিপি উদঘাটনস্থলের সন্ধান পেয়েছেন তারা।

শেষ দিনের অনুসন্ধানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ এলাকায় অনুসন্ধান চালায়।

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সন্ধান না পেলেও ১৯৬০ সালে পশ্চিমভাগ এলাকার পরেশ পাল (৯০) বাড়ি থেকে প্রত্নলিপি উদ্ধার করা হয়েছে যে এটা তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ও পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ওই দলের সঙ্গে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার মো. শাহিন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গবেষণা সহকারী ওমর ফারুক ও সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মারমা।

১৯৫৮ সালে পশ্চিমভাগে যে তাম্রলিপিটি পাওয়া গিয়েছিল সেই তাম্রলিপিটি পরশ পাল তার নিজের ভিটে থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। পরশ পাল সংগ্রহ করার পর স্থানীয় একজন পণ্ডিত সেটা নিয়ে যান। তারপর একপর্যায়ে সেটা চলে যায় আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি সিলেটে।

১৯৬১ সালে গবেষক আমিনুর রশীদ চৌধুরী সেটা কিনে নেন। ১৯৬৭ সালে সেই তাম্রলিপিটি প্রত্নতত্ত্ব গবেষক কমলাকান্ত গুপ্ত চৌধুরীর Copper plates of Sylhet গ্রন্থে প্রকাশিত হয়।

রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিমভাগ গ্রাম এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই এলাকার বিভিন্নস্থানে এখনো প্রাচীন মৃৎপাত্রের ভাঙা টুকরো পাওয়া যায়।

১৯৬১ সালে রাজনগরের পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামে ‘শ্রীচন্দ্র পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন’ যে স্থানে পাওয়া গেছে, সেই স্থানটি (পরেশ পালের ভিটা) ও যিনি এটি সংগ্রহ করেন সেই পরশ পালকেও খুঁজে পায় অনুসন্ধানে আসা প্রতিনিধি দল।

ওই ভিটায় অসংখ্য মৃৎপাত্রের টুকরো দেখতে পেয়ে প্রতিনিধি দল ওই স্থানটিকে সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

এর আগে অনুসন্ধানের দ্বিতীয় দিন রোববার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল দিঘীরপার এলাকায় চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিত্বের পুরাকীর্তির বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। কিন্তু, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের কোনো আলামত মেলেনি।

অনুসন্ধান শেষে এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর দিঘীরপার এলাকায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. মো. আতাউর রহমান।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলার সময় ২০ বছরের পুরনো কিছু পুঁতির পাথর পাওয়া যায় জগদীশ চন্দ্র শর্মা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে। নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর দুর্গ এলাকায়ও এ রকম ২,৫০০ বছরের পুরনো কাঁচের পুঁতি পাওয়া গিয়েছিল। সে রকম পুঁতি জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দল।

তবে কাঁচের পুঁতিগুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।

গত ১৫ জুলাই ‘চন্দ্র বংশীয় রাজা শ্রীচন্দ্র কর্তৃক স্থাপিত কথিত শ্রীহট্টের চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরাকীর্তি সম্পর্কে সরেজমিন জরিপ ও পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রয়োজন’ উল্লেখ করে সিলেট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হান্নান মিয়া।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরাকীর্তি অ্যান্টিকস অ্যাক্ট ১৯৬৮ অনুসারে সংরক্ষিত ঘোষণা ও সংস্কার-সংরক্ষণের কোনো সুযোগ আছে কিনা এ সম্পর্কে সরেজমিন পরিদর্শন করে আলোকচিত্র ও মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠানো জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

Comments